আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেনি পশ্চিমারা : এরদোগান
২১ মে ২০২৩, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
পশ্চিমারা আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেনি বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। শনিবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিংবা তার পরে যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন, তার সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সিএনএনের সাংবাদিক বেকি অ্যান্ডরসান প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কি মনে করেন যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আপনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করেছেন? এরদোগান বলেন, এটা কী করে সম্ভব যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পাওয়া, নির্বাচনের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া ও পার্লামেন্টের ৩২২ সদস্যের জোটের প্রতিনিধিকে পশ্চিমা বিশ্বাস স্বৈরাচারী জ্ঞান করবে? রাশিয়ার সাথে পশ্চিমাদের ভারসাম্যহীন নীতির সমালোচনা করে এরদোগান বলেন, পশ্চিমাদের উচিৎ রাশিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করা। এতে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে। এরদোগান বলেন, রাশিয়ার সাথে তুরস্কের সুসম্পর্ক রয়েছে, যা ক্রমবর্ধমান। এ সময় মস্কোর ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থনের জন্য আঙ্কারার ওপর অনেক চাপ রয়েছে বলেও জানান তিনি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা এখনো এ পর্যায়ে উন্নীত হতে পারিনি যে পশ্চিমাদের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব। তবে এ কথা ঠিক যে আমরা পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা মানতে বাধ্য নই। আমরা একটি শক্তিশালী দেশ। রাশিয়ার সাথে আমাদের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরো বলেন, অনেক ক্ষেত্রে রাশিয়া ও তুরস্ক একজনকে অন্যজনের প্রয়োজন পড়তে পারে। এ দিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী ও রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রধান কিলিকদারোগ্লু পশ্চিমাদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন লাঘবের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে এরদোগান যে পথে হেঁটেছেন, তিনি কখনোই সে পথ মাড়াবেন না। উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মাঝে মধ্যস্থতা অবলম্বনের চেষ্টা করছে তুরস্ক। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাক্ষরিত হয়েছে কৃষ্ণ সাগর শস্য করিডোর ইনিশিয়েটিভ চুক্তিটি। এর মাধ্যমে ইউক্রেনে আটকে পড়া লাখ লাখ টন গম রফতানির পথ উন্মোচিত হয়। গত বুধবার ওই চুক্তির মেয়াদ আরো দু’মাস বাড়ানো হয়েছে। অপর এক খবরে বলা হয়, তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান দুই দশক ধরে দেশটির ক্ষমতায় রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমা বিশ্ব উভয়ের সাথেই ভালো সম্পর্ক তৈরি করেছেন তিনি। কিন্তু, এরদোগানের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসন তার কিছু রাজনৈতিক মিত্রদের অপছন্দ। এতে করে তাদের সাথে প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক অবনতি হয়েছে। এবারের নির্বাচনে এরদোগানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) নেতা ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কেমাল কিলিকদারোগলু। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তুরস্কের বেশ কিছু নাগরিক এই নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন কিলিকদারোগলুর উদ্দেশে। তুর্কিদের প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বমঞ্চে তুরস্কের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে পারবে কিনা ও দেশের নিরাপত্তায় তার অঙ্গীকার কি? এই দুটি ক্ষেত্রে ট্রেডমার্ক করে দিয়ে গেছেন এরদোগান। গত ১৪ মে তুরস্কের পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই দুটোর মধ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছে এরদোগানের একে পার্টির জোট। তবে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। এই নির্বাচনের আগে হওয়া জরিপগুলোতে এগিয়ে ছিলেন কিলিকদারোগলু। তবে, ভবিষ্যতদ্বাণীকে পেছনে ফেলে ভোট গণনার শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন এরদোগান। আর ভোট গণনার সাথে সাথে এগুতে থাকে কিলিকদারোগলু। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগান পান ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ ভোট। আর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিকদারোগলু পান ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট। তুরস্ককে দোদুল্যমান একটি দেশ হিসেবে অবিহিত করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাবেক পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বারোনেস আস্থন। এই কূটনীতিক বলেন, ‘তুরস্ক এমন একটি দেশ, যেটিকে আমি দোদুল্যমান বলে সম্বোধিত করব। দেশটির গণতন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে যা ঘটে তা ইউরোপ, এশিয়া ও সমস্ত বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যা আমরা সকলেই মোকাবিলা করছি। এটি সত্যিই।’ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুরস্ক নিজের কূটনৈতিক অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে। প্রথম অবস্থানের আলোচনায় দেশটি কোনো প্রভাব না ফেলতে পারলেও কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানি চুক্তির দিকে প্রধান অবস্থানে ছিল তুরস্ক। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের পর্যন্ত সকলের সাথে যোগাযোগের লাইনে পরিণত হয়েছেন এরদোগান। বিষয়টি নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বেশ গর্ববোধ করেন। ইস্তাম্বুলের ওজিগিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ইভরেন বাল্টা বলেছেন, “তুরস্ক সবসময়ই পশ্চিমের অংশ হতে চেয়েছে। এই উচ্চাকাক্সক্ষা তাদের সবসময় ছিল। এরদোগানের দুই দশকের শাসনামলেও এই চিন্তার পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু, তুরস্কের আন্তর্জাতিক জোটে বৈচিত্র্য এসেছে। তারা যা করছে, সেটিকে আমরা ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ বলি। এর মাধ্যমে একটি দেশ একাধিক রাষ্ট্র বা সুরক্ষা ছাতার তলে থাকতে পারে।” আল-জাজিরা মুবাশ্বির, মার্কিন গণমাধ্যম, বিবিসি, রয়টার্স।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু