যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে
০২ জুন ২০২৩, ০৮:১১ পিএম | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভয়ঙ্কর ছবি ও ভিডিও মুছে ফেললে সম্ভাব্য মানবাধিকার লংঘনের সাক্ষ্যপ্রমাণ হয়তো নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে বিবিসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এসব সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো প্রায়শই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গা শিউরানো ভিডিও বা যেসব ভিডিওতে অত্যাচার নির্যাতনের অস্বস্তিকর ছবি আছে সেগুলো সরিয়ে নেয়। কিন্তু তারা বলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ফুটেজ মামলা দায়েরে সহায়তা করতে পারে সেগুলো আর্কাইভে সংরক্ষণ না করে নামিয়ে নেয়া সম্ভব। মেটা এবং ইউটিউব বলছে, এক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য হল একদিকে কোন কিছুর সাক্ষ্যপ্রমাণ তুলে ধরা এবং অন্যদিকে ক্ষতিকর কন্টেন্ট থেকে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্বের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রাখা।
তবে মেটার ওভারসাইট বোর্ড, যারা মেটা মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর সার্বিক নজরদারি করে তার সদস্য অ্যালান রাসব্রিজার বলছেন, এই খাতের কোম্পানিগুলো কন্টেন্ট নজরদারির ক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত সতর্ক’। এই প্ল্যাটফর্মগুলো বলছে, এধরনের কোন কন্টেন্ট যদি জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ হয়, সেক্ষেত্রে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা তাদের আছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে বেসামরিক মানুষের ওপর হামলার নথিসম্বলিত ফুটেজ বিবিসি আপলোড করার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেছে সেগুলো খুব দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণভাবে ক্ষতিকর এবং অবৈধ কন্টেন্ট সরিয়ে নিতে পারে। কিন্তু যখন যুদ্ধের সহিংস ফুটেজ নিয়ে তাকে মাথা ঘামাতে হয়, তখন কোনটা মানবাধিকার লংঘন বলে গণ্য হতে পারে, সেই সূক্ষ্ম বিচারের ক্ষমতা তার থাকে না। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে এসব তথ্য যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য সোশাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সামাজিক মাধ্যমে কন্টেন্টের ওপর নজরদারির অধিকার যে রয়েছে, তা কেউ অস্বীকার করছে না, বলছেন গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিসের আমেরিকান রাষ্ট্রদূত বেথ ভ্যান শ্যাক: ‘আমার মতে, উদ্বেগের কারণ ঘটছে, যখন সেই তথ্য বা কন্টেন্ট হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যাচ্ছে।’ ইউটিউব এবং মেটার বক্তব্য অনুযায়ী, যেসব কন্টেন্ট সাধারণভাবে সরিয়ে নেয়ার নীতি আছে, কিন্তু যুদ্ধের বিশদ ফুটেজের কারণে যেগুলো জনস্বার্থে রাখা জরুরি, সেগুলো না সরানোর বিধান রয়েছে, এবং শুধু প্রাপ্তবয়স্করা দেখতে পারবেন সেগুলো এই নিয়ম অনুযায়ী রাখার কথা। কিন্তু ইহরের ভিডিও নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে এই নীতি কাজ করে না। মেটা বলছে তাদের পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ন্যায্য আইনি অনুরোধ’ এবং ‘আইন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার আর আন্তর্জাতিক স্তরে দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়াকে সমর্থন জানাতে আরও কী পথ আছে তার জন্য আমাদের অব্যাহত অনুসন্ধান।’
ইউটিউব বলছে নাড়া দেয়া জ্বলন্ত দৃষ্টান্তমূলক কন্টেন্ট জন স্বার্থে মুছে না ফেলার নীতি তাদের থাকলেও, ‘ইউটিউব কোন আর্কাইভ বা সংগ্রহশালা নয়। মানবাধিকার সংগঠন, আন্দোলনকর্মী, মানবাধিকার প্রবক্তা বা মানবাধিকারের পক্ষে যারা লড়াই করছেন, গবেষক, সাংবাদিক নাগরিক, অথবা যারা মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা নথিবদ্ধ করেন কিংবা সম্ভাব্য অপরাধ খতিয়ে দেখেন, তাদের কাজের কারণে কন্টেন্ট সংরক্ষণ বা সেগুলো নিরাপদে রাখার সর্বোত্তম উপায় খুঁজে বের করা তাদেরই দায়িত্ব।’
রাহোয়া থাকেন আমেরিকায় এবং তার পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন ইথিওপিয়ার টিগ্রে এলাকায়। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ব্যাপক সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে ওই এলাকা। সেখানে ইথিওপিয়ার কর্তৃপক্ষ তথ্যপ্রবাহ কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করে। তবে সোশাল মিডিয়ার দৌলতে সংঘাতের দৃশ্যমান রেকর্ড এখন দুর্লভ নয়। আগে এসব ঘটনা বিশ্ববাসীর চোখের আড়ালেই থেকে যেত। ‘এটা আমাদের কর্তব্য,’ রাহোয়া বলেন, ‘আমি এনিয়ে বহু ঘণ্টা গবেষণার কাজ করেছি। কাজেই এধরনের কন্টেন্ট দেখলে যেসব গোয়েন্দা তথ্য আমাদের পক্ষে উন্মুক্ত সূত্র থেকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব, সেসব তথ্যের আলোকে এগুলো যাচাই করার চেষ্টা আপনি সহজেই করতে পারেন। অবশ্য আমার পরিবার ঠিক আছে কিনা সেটা আমি জানব না।’
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, সোশাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে ফেলা কন্টেন্ট সংগ্রহ করার এবং সেগুলো নিরাপদ স্থানে মজুত রাখার জন্য একটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া গড়ে তোলা খুবই জরুরি। কন্টেন্টের তথ্য বা মেটাডেটা সংরক্ষণের বিষয়টা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই দরকার, যাতে এসব কন্টেন্ট যাচাই করে দেখা যায়, কোথায়, কখন, কীভাবে এসব ছবি বা ভিডিও তোলা হয়েছিল এবং এসব তথ্যের কেউ ইচ্ছা করে কোনরকম রদবদল করেনি। গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিসের মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিজ ভ্যান শ্যাক বলছেন: ‘আমাদের এমন একটা পদ্ধতি গড়ে তোলা দরকার যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এগুলোর সম্ভাব্য বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রমাণযোগ্য তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে আগ্রহী হতে হবে।’ সূত্র : বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আজ ৪৭তম বিসিএসের আবেদন শুরু
দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮১ আরোহী নিয়ে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, নিহত ২৯
গাজীপুরে কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৪
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪৮ জন নিহত, হাসপাতাল পরিচালক নিখোঁজ
ঝিনাইদহে কাজীর সীল সাক্ষর জালিয়াতি করে বিয়ে!
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ শাজাহানের নবজাতকের দায়িত্ব নিল জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস