ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশ-মিয়ানমারের আলোচনায় সহযোগিতার প্রস্তাব চীনের

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৪ মে ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৩, ০৫:৪৯ পিএম

বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মিয়ানমার সফরে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।
গত ১ মে (সোমবার) মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং। পরদিন মঙ্গলবার মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন তিনি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকের আলোচনায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি ছিল।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘মিয়ানমারের সরকারপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিউইন গ্যাং বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আরও বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চায়। সেই সঙ্গে চীন মনে করে, যেসব ইস্যু নিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে- কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে সেসবের সমাধান সম্ভব।’
‘মন্ত্রী আরও বলেছেন—সর্বোপরি, চীন বিশ্বাস করে অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক নানা ইস্যুতে চীন-বাংলাদেশ-মিয়ানমার একটি কার্যকর জোট হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন জরুরি এবং এই ইস্যুতে যেকোনো বাস্তবসম্মত সহযোগিতা করতে চীন প্রস্তুত।’
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের অভিভাকত্ব ও দিকনির্দেশনা মেনে নিতে মিয়ানমারের সরকারপ্রধান জেনারেল হ্লেইং কোনো আপত্তি জানাননি দাবি করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘জেনারেল মিন অং হ্লেইং চীনের সঙ্গেও নিজেদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বয়স কয়েকশ’বছর। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের উদ্ভবের পরও দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তেমন তিক্ততা পরিলক্ষিত হয়নি।
কিন্তু এই সম্পর্কে ছেদ পড়ে ২০১৭ সালে, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে একযোগে বোমা হামলার ঘটনা ঘটার পর। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এই হামলা চালিয়েছিল।
বোমা হামলার পর আরাকানের সাধারণ বেসামরিক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। আরাকানের রোহিঙ্গা গ্রামগুলো একের পর এক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেনাসদস্যদের নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ ও লুটপাটের শিকার হতে থাকে মিয়ানমারের সবচেয়ে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠী।
ভয়াবহ সেই সেনা অভিযানে টিকতে না পেরে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা আরাকান থেকে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক এবং অবশ্যই তাদেরকে মিয়ানমারের সরকার ফিরিয়ে নিতে হবে।
আরাকানে যখন সেনা অভিযান চলছিল, সে সময় মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন ছিল দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকার। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ওই সময় বেশ কয়েকবার মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু এনএলডি সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
পরে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এনএলডিকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। দেশটির বর্তমান সরকারপ্রধানও তিনি।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারটি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত: বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ভোলায় ঝড়ের কবলে পড়ে ১০ ট্রলারডুবি, নিখোঁজ ১

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

ছাত্ররাজনীতিতে গুণগত সংস্কার প্রয়োজন : শিবির সেক্রেটারী

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মতলবে ছেলের ইটের আঘাতে মায়ের মৃত্যু : আটক ছেলে

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন

মব জাস্টিসের প্রতিবাদে চবিতে মানববন্ধন