ওয়াগনার বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়তে পারে সিরিয়াতেও

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১০ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩২ এএম | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩২ এএম

রাশিয়ার বেসরকারি মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোর প্রধান হাতিয়ার ছিল। একে ব্যবহার করে মস্কো ইউক্রেনের বহু জায়গা দখল করেছে। ইয়েভগেনি প্রিগোশিন এই বাহিনীর প্রধান। তবে এগুলো সবই এখন অতীত। জুনে গ্রুপটি রুশ মস্কোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আলাদা হয়ে গেছে। প্রিগোশিন বলেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনো চলছে। তবে ওয়াগনারের বিদ্রোহ যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেবে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এই ঘটনা কি তাৎপর্য হতে পারে, সেটা নিয়ে অনেক পর্যবেক্ষক বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। এছাড়া গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ার ওপর এর প্রভাব কতটুকু হতে পারে, সেই প্রশ্নটি সামনে আসতে শুরু করেছে।

 

২০১৫ সালে রাশিয়া সিরিয়ায় সৈন্য পাঠায়। ঐ সময় ওয়াগনার গ্রুপও সেখানে যায় এবং তারা এখনো সেখানে আছে। প্রিগোশিন একটি বেসরকারি যোদ্ধা বাহিনী। রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে বসে তারা বিদ্রোহ করেনি, ইউক্রেনে করেছে। এরপর এটি এখন সিরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়বে কি না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটি তাদের প্রাথমিক অপারেশন ক্ষেত্র। ২০১৫ সালে তারা সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী হুমাইমিমে ঘাঁটি গাড়ে। দেশটির তেলক্ষেত্র এবং খনিজ সম্পদ ফসফেট রক্ষার জন্য তাদের নিয়োজিত করা হয়। বেশ কয়েকটি দেশেই তারা খনিজ সম্পদ বা তেলক্ষেত্র পাহারার কাজ করে যাচ্ছে। হুমাইমিম সামরিক ঘাঁটির দায়িত্ব মূলত রুশ সামরিক বাহিনীর। জানা গেছে, সেখানকার রুশ সামরিক পুলিশ ও সিরীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঐ ঘাঁটিতে নজরদারি শুরু করেছে বলে জানা গেছে। কারণ বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। ইস্তাম্বুলভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জুসুর ফর স্টাডিজ সেন্টারের গবেষক ওয়াইল ওলওয়ান হুমাইম সামরিক ঘাঁটির চার জন ওয়াগনার সদস্য আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। পরদিন দিয়ার আযযুর, দামেস্ক ও সুওয়াইদা থেকে কয়েক জন ওয়াগনার সদস্য আটক করা হয়। এ থেকে ধারণা পাওয়া যায় রুশ ও সিরীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

 

সুওয়াইদা ২৪ নিউজ নেটওয়ার্কের সম্পাদক রায়ান মারুফ বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ওয়াগনারের অনেক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এয়াড়া সমন জারি করা হয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। তিনি আরো জানান, ঐ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সপ্তাহের শেষে তাদের সাপ্তাহিক মজুরি পরিশোধ করা হয়। জুনের শেষে তাদের কোনো মজুরি দেওয়া হয়নি। এ থেকে ধারণা করা যায়, গ্রুপটির মধ্যে একটি অস্থিরতা বিরাজ করছে। আসাদবিরোধী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিসি) একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রুশ সেনাবাহিনী দিয়ার আযযুরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। উল্লেখ্য আযযুর সিরিয়ার সবচেয়ে তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল এবং ২০১১ সালের মার্চে সেখান থেকে আসাদ পরিবারের চার দশকের শাসনের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সেই আন্দোলন গৃহযুদ্ধের রূপ নেয়। সিরিয়ায় রুশ বাহিনী পুরোপুরি ওয়াগনারের ওপর নির্ভরশীল। রাতারাতি এদের বিদায় করা সম্ভব নয়। তাই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি যে মস্কোকে আসলেই ভাবিয়ে তুলেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় রুম উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভার্শিনিনের দামেস্ক সফরের মধ্য দিয়ে। ২৬ জুন তিনি এক অঘোষিত সফরে সেখানে যান। সিরিয়ার কর্তৃপক্ষকে তিনি অনুরোধ করেন তারা যেন ওয়াগনার গ্রুপ যেন সিরিয়া ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি না দেয়। তার এ সফরের পর প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতেও ওয়াগনার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে উভয় পক্ষ আলোচনা করেছে।

 

সিরিয়ায় কর্মরত রুশ জ্বালানি কোম্পানি এভরো পলিস মূলত ওয়াগনারের মালিকানাধীন। ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। বর্তমানে এর মুনাফার ২৫ শতাংশ ওয়াগনার পেয়ে থাকে। রুশ সেনাবাহিনী ও ওয়াগনার মিলে এর নিরাপত্তা বিধান করে যাচ্ছে। সিরিয়ার একাধিক তেলক্ষেত্র কোম্পানিটি নিয়ন্ত্রণ করছে। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে সিরিয়ায় ওয়াগনার বাহিনী বিদ্রোহ করবে এমন কোনো আলামত এখনো দেখা যায়নি। প্রিগোশিনের এতটা ক্ষমতা সিরিয়ায় তৎপর বাহিনীটির ওপর নেই যে, তিনি সেখানে বিদ্রোহ উসকে দেবেন। এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে যে, নাম পরিবর্তন করে সিরিয়া ওয়াগনার বাহিনীকে রাখা হবে। কারণ সেখানে মস্কোর সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। গবেষণা সংস্থা রাশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ ডেনিস মিগোরোদ মনে করেন, ওয়াগনারের ভবিষ্যৎ কোন পথে সে ব্যাপারে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার