ইউক্রেনের যুদ্ধে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে যেভাবে লাভবান হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৭ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি যত দ্রুত বেড়েছিল, ঠিক সেভাবেই কমেছে। টানা চার দশকের মধ্যে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে সেটি নয় দশমিক এক শতাংশ থেকে নেমে তিন শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

গ্রুপ অব সেভেন বা জি-৭ ভূক্ত ধনী দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে জীবনযাত্রার ব্যয় কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগে জি-৭ ভূক্ত দেশের মধ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় সর্বোচ্চ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। বাকি ধনী দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং জাপান। ওয়েন্ডি এডেলবার্গ যিনি হ্যামিলটন প্রজেক্টের পরিচালক এবং ব্রুকিংস ইন্সটিটিউট নামে একটি থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ফেলো, তিনি বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সফলতাকে ত্বরান্বিত করেছে জ্বালানির দাম।’

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ইউরোপিয় দেশগুলোর তুলনায় আমেরিকার উপর কিছুটা ভিন্নভাবে পড়েছিল। রাশিয়ার সরাসরি সরবরাহের উপর নির্ভরশীল থাকার কারণে ইউরোপিয় দেশগুলোর উপর এই প্রভাব গুরুতর ছিল। ধারণা করা হচ্ছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটি মুদ্রাস্ফীতির চাপ বেশ ভাল ভাবেই সামাল দিতে পেরেছে। কিন্তু বাস্তবে কাজটি যত সহজ মনে হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক জটিল ছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

বিবিসি মুন্ডোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এডেলবার্গ বলেন যে, ‘জ্বালানি ও খাদ্য মূল্য ছাড়া, মুদ্রাস্ফীতির মূল বা অন্তর্নিহিত কারণগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা দেখা যাচ্ছিল, তা নিয়ে কিছু দিন আগ পর্যন্ত আমরা খুব হতাশ এবং উদ্বিঘ্ন ছিলাম।’ ‘এখন এটা যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে,’ বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সেসব পণ্যের দামও তরতরিয়ে বাড়ছিল। মনে হচ্ছিলো, ‘যেন প্রতি সপ্তাহেই একটা করে বড় দিনের উৎসব হচ্ছে’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি, সে চাহিদা কিছুটা কমেছে, যাকে মনে করা হচ্ছে যে, চাহিদার তীব্রগতির ট্রেনটি এখন নিম্নমুখী বাঁক নিচ্ছে। এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমতুল্য প্রতিষ্ঠান মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডের আর্থিক নীতির বড় সম্পর্ক রয়েছে। সংস্থাটি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার ক্রমাগত ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। পিটারসন ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক্স অ্যান্ড ব্লুমবার্গ ইকোনোমিক্সের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ডেভিড উইলকক্স বলেছেন, ‘ফেড মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অস্বাভাবিক মাত্রায় আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়িয়েছে।’

এর ফলে বাড়ি বা গাড়ি কেনার ঋণ গ্রহণ বা নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলো বেশ ব্যয় বহুল হয়ে গেছে। এটি মুদ্রাস্ফীতির সর্পিল রেখার ক্রমাগত বৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যয়ের উপর এক ধরনের ‘ব্রেক’ হিসাবে কাজ করেছে। মুদ্রাস্ফীতির এই ঘোড়া যদি খুব দ্রুতগামী হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তার গতি টেনে ধরার জন্য এরকমই লাগামের ব্যবস্থা করে। এ নীতি একই সময়ে ল্যাটিন আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে।

রাশিয়ার জ্বালানির উপর কম নির্ভরতা থাকার কারণে ইউক্রেনের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সহায়ক হয় এবং যদিও যুদ্ধ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরে মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়েছিল, তারপরও সরকারের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতির গতিতে ব্রেক কষার কারণে তা দ্রুতই কমে আসে। তবে পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি শান্ত হয়নি। ‘আমি মনে করি না যে আমরা পুরোপুরি মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনীতির সাধারণ অবস্থায় ফিরে এসেছি,’ বলেন অর্থনীতিবিদ উইলকক্স৷ সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ পুলিশের অত্যাচারী আচরণের নতুন ভিডিও ফাঁস

বাংলাদেশ পুলিশের অত্যাচারী আচরণের নতুন ভিডিও ফাঁস

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা

আজ ছোট পর্দায় মুক্তি পাবে নাটক 'হোয়াট এ বৌ'

আজ ছোট পর্দায় মুক্তি পাবে নাটক 'হোয়াট এ বৌ'

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি সরিয়ে ফেললেন ভারতের সেনাপ্রধান

পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি সরিয়ে ফেললেন ভারতের সেনাপ্রধান

বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অবদান রাখছে

বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অবদান রাখছে

হাসিনাকে নিয়ে ‘সম্ভাব্য ঝুঁকি’তে সচেতন ছিলেন না টিউলিপ এটি ‘দুঃখজনক’ : লরি ম্যাগনাস

হাসিনাকে নিয়ে ‘সম্ভাব্য ঝুঁকি’তে সচেতন ছিলেন না টিউলিপ এটি ‘দুঃখজনক’ : লরি ম্যাগনাস

শেখ পরিবার একটি চোরের কারখানা’

শেখ পরিবার একটি চোরের কারখানা’

অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা মামুন

অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা মামুন

জিমি কার্টারের প্রতি ৩০ দিনের শোকাবস্থা উপেক্ষা করে ট্রাম্পের পতাকা উত্তোলন

জিমি কার্টারের প্রতি ৩০ দিনের শোকাবস্থা উপেক্ষা করে ট্রাম্পের পতাকা উত্তোলন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: খালেদা-তারেকসহ সব আসামি খালাস

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: খালেদা-তারেকসহ সব আসামি খালাস

টিউলিপের জায়গায় নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস

টিউলিপের জায়গায় নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস

পদত্যাগপত্রে টিউলিপ সিদ্দিক যা লিখেছেন

পদত্যাগপত্রে টিউলিপ সিদ্দিক যা লিখেছেন

টিউলিপের পদত্যাগ ইস্যুতে প্রেস উইংয়ের বিবৃতি

টিউলিপের পদত্যাগ ইস্যুতে প্রেস উইংয়ের বিবৃতি

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে কায়রো, ঢাকার অবস্থান ৬ নম্বরে

আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে কায়রো, ঢাকার অবস্থান ৬ নম্বরে

মেয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে লাশ হলো "মা"!

মেয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে লাশ হলো "মা"!

মীরসরাইয়ে মুন্না খুনের ঘটনায়, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার

মীরসরাইয়ে মুন্না খুনের ঘটনায়, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেফতার

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেফতার

আজ সারদায় ৪৮০ এসআইয়ের সমাপনী কুচকাওয়াজ

আজ সারদায় ৪৮০ এসআইয়ের সমাপনী কুচকাওয়াজ

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৬৩ জন ফিলিস্তিনি, মানবিক সংকট চরমে

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৬৩ জন ফিলিস্তিনি, মানবিক সংকট চরমে

ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেফতার

ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেফতার