ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র টমেটো
২৭ জুলাই ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩, ০৪:৩৭ পিএম
যারা এখন সবজির দাম বাড়িয়েছে তারা কারা? ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটিতে শাকসবজির ক্রমবর্ধমান দাম সম্পর্কে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় এমন প্রশ্ন করেছিলেন।
শর্মা তখন নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দেন সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়ে। তিনি বলেন, ‘এটি মিয়া বিক্রেতারা যারা উচ্চ হারে সবজি বিক্রি করছে।’ তিনি আসামে বাংলাভাষী মুসলমানদের কথা উল্লেখ করেছেন যাদেরকে সেখানে মিয়া বলে ডাকা হয়। তারা সেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করছেন কিন্তু শর্মার ভারতীয় জনতা পার্টি এবং এর হিন্দু ডানপন্থী মতাদর্শিক সহযোগীরা তাদেরকে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী বলে মনে করে।
‘আসমীয়া বিক্রেতারা যদি আজ সবজি বিক্রি করত, তাহলে তারা কখনই তাদের সহকর্মী অসমিয়াদের কাছ থেকে বেশি দাম নিত না,’ মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছিলেন। শর্মা মুসলিমদেরকে দায়ি করলেও বিজ্ঞানীরা অবশ্য খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত এবং ভারত জুড়ে সবজির দাম বৃদ্ধির জন্য কিছু জায়গায় খরা এবং অন্য জায়গায় বন্যাকে দায়ী করেছেন। এবং অবশ্যই মিয়া মুসলমানদের - বা অন্য কোন সম্প্রদায়ের - কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানোর কোন প্রমাণ নেই।
শর্মার দাবি বিচিত্র মনে হলেও, এটি ক্রমবর্ধমান উদ্ভট এবং অপ্রমাণিত কিন্তু ষড়যন্ত্রমূলক এবং বিপজ্জনক অভিযোগের একটি ধারা এবং এটি ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারত জুড়ে মুসলমানদের ভিলেন করার একটি বিস্তৃত প্যাটার্নের অংশ - যদিও, আসামে, এই গোঁড়ামির শিকড় বিজেপির তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক উত্থানের চেয়ে গভীরে রয়েছে।
এই ধরনের বক্তৃতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে তা বোঝার জন্য, মনে রাখতে হবে যে, ঠিক ১০০ বছর আগে, ১৯২৩ সালে, জার্মানিতে ইহুদিদেরকে - যারা ব্যবসা এবং অর্থের ক্ষেত্রে একটি প্রভাবশালী শক্তি ছিল – মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়েছিল যা ওয়েমার প্রজাতন্ত্রের পতনের দিকে পরিচালিত করেছিল। এর ফলে অ্যাডলফ হিটলার এবং নাৎসিদের উত্থান হয়। ইহুদিরা নাৎসিদের চোখে যেমন ‘জার্মান’ না, শর্মাদের মতে তেমনি মিয়া মুসলিমরা ‘অসমিয়া’ নয়। সাংবাদিকদের সাথে একই কথোপকথনে যেখানে তিনি মুদ্রাস্ফীতির জন্য তাদের দোষারোপ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে- যারা গুয়াহাটির ফ্লাইওভারের নীচে সবজির বাজার চালান - অসমীয়াদের চাকরি কেড়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন।
তিনি বাজারগুলো উৎখাত করার এবং ‘অসমীয়া ছেলেরা’ যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে পারে তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি রাসায়নিক সার ব্যবহার করে আসামের মাটি ধ্বংস করার জন্য মিয়া মুসলমানদের দায়ী করেছেন। তিনি এটিকে ‘সার জিহাদ’ বলেছেন – যা আরেকটি অযৌক্তিক কিন্তু বিপজ্জনক দাবি। শর্মা অসমীয়া হিন্দুদের বোঝাচ্ছেন যে, মিয়া মুসলমান - যারা রাজ্যের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ - শুধুমাত্র তাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে না, রাষ্ট্রকে ধ্বংস করছে। অসমীয়া জনগণকে তাদের যা আছে তা পেতে হলে মিয়াদের তাড়িয়ে দেয়া দরকার। আর সেই শর্মাই হচ্ছেন তাদের মুক্তিদাতা।
সেই প্রচারণার একটি কেন্দ্রীয় অংশে বুলডোজার ব্যবহার করে বাড়িঘর ভেঙে ফেলা এবং মিয়া মুসলমানদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরিবারগুলিকে শিশুদের নিয়ে গৃহহীন করা হয়েছে, তাদের খেলনাগুলি দৈত্য মেশিনের চাকার নীচে নির্মমভাবে পিষ্ট হয়েছে। বার্তাটি পরিষ্কার: মিয়া মুসলমানরা আসামের প্রাকৃতিক বা জনসম্পদ নিয়ে কোনো দাবি করতে পারবেন না। একইভাবে আসামের সংস্কৃতি বা ইতিহাসে তাদের কোনো দাবি অস্বীকার করা হচ্ছে। যখন স্থানীয় মিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি গোষ্ঠী গত বছর একটি যাদুঘর স্থাপন করেছিল, তখন শর্মা এটিকে বন্ধ করে দিয়েছিল, দাবি করেছিল যে, ‘লুঙ্গি’ - একটি মোড়ক হিসাবে ব্যবহৃত কাপড় – এ ছাড়াও সম্প্রদায়টি নিজের বলে দাবি করতে পারে এমন কিছুই ছিল না।
আসামের মাদ্রাসাগুলিতে নিষেধাজ্ঞার হুমকি থেকে শুরু করে মুসলমানদের জন্য বিশেষ জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে বিজেপিতে তুলনামূলকভাবে নতুন হয়েও জঘন্য ইসলামফোবিয়ার দৌড়ে দলের অন্যান্য অনেক নেতাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তার সহিংস, মুসলিম বিরোধী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রকল্প নিয়ে কোনো অস্পষ্টতা নেই।
সাম্প্রতিক দশকগুলিতে, আসামে মিয়া মুসলমানদের ‘বাংলাদেশী’, ‘অভিবাসী’ বা ‘বহিরাগত’ হিসাবে ঘৃণা করা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। শর্মা এখন রাজ্যের মেরুকরণকে নতুন গভীরতায় নিয়ে যাচ্ছেন। তার তত্ত্বাবধানে উচ্ছেদ অভিযানে মানুষ নিহত হয়েছে। ভারত এবং বিশ্বের বিস্তৃত জনসাধারণ এ সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে অনেকাংশে অজ্ঞ। সেটা এখন বদলানো দরকার। শর্মা ইতিমধ্যেই রাজ্যের বাংলাভাষী অসমীয়া জনগোষ্ঠীকে ‘অ-মানুষ’-এ পরিণত করেছেন। এখন সবজিও তার হাতে গোঁড়ামির অস্ত্র। সূত্র: আল-জাজিরা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো
৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো
ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান
মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
কসাই থেকে নদীখেকো জাফর
পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার
ফ্যাসিবাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিল ইবি ছাত্রদল
সামনের বর্ষায় ঘাসে ঢাকা হবে রাজধানীর অনাবৃত সড়ক বিভাজন: উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
মাদারীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত বিডিআর সদস্যদের ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন
পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি : দুদকের মামলায় হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ আসামি
কোকোর দেশের ক্রীড়াঙ্গনে আরাফাত রহমান বড় ভূমিকা ছিল: কাজী শিপন
তারেক রহমান একজন মানবিক মানুষ: কাইয়ুম চৌধুরী
রাবির সাত হলে কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস, তদন্ত কমিটি গঠন
ডিসেম্বরে সর্বাধিক রেমিট্যান্স এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও সউদী আরব থেকে
যশোরে চাকুরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকুরি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন
অপরাধী যদি আমার ভাই হয়, তাকেও ছাড় দিবেন না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
আবারও সিলেটের নায়ক জাকির, খুলনার টানা দ্বিতীয় হার
এবার হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে নারী আইনজীবীর মামলা
ব্যবসায়ীকে কোপানোয় শাস্তির হুঁশিয়ারি উপদেষ্টা আসিফের