বিজেপিকে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়বে ‘ইন্ডিয়া’ জোট?
০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৫৭ পিএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৬:৫৭ পিএম
ভারতে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে মঞ্চ গড়েছে বিরোধীরা। ঘোষিত লক্ষ্য একটাই, হারাতে হবে। যদিও ‘ইন্ডিয়া’ জোটের একাধিক দলের মধ্যে বনিবনা নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারবে ‘ইন্ডিয়া’?
প্রায় এক দশক ধরে ভারতের রাজনীতি মোদীময়। শুধু লোকসভা নয়, বিধানসভা ভোটেও বিজেপি জয় পেয়েছে তার মুখ সামনে রেখে। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন জোরালো ভাবে উঠছে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের মুখে। এর সঙ্গে রয়েছে নয় বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। এই পরিস্থিতিতে একজোট দেশের কয়েকটি অগ্রণী বিরোধী শক্তি। কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে ১৭ ও ১৮ জুলাই বিরোধীদের সম্মিলিত সভায় জন্ম হয়েছে নয়া জোটের। বিরোধীদের দ্বিতীয় বৈঠক হয়েছে বিহারের পাটনায়। জোটের নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলেপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (আইএনডিআইএ) বা ‘ইন্ডিয়া’।
জোটে রয়েছে ২৬টি দল। কংগ্রেস ও বামপন্থীদের পাশাপাশি শরিক পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টি, বিহারের জনতা দল ইউনাইটেড, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, দিল্লির আম আদমি পার্টি, মহারাষ্ট্রের এনসিপি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ একঝাঁক আঞ্চলিক দল। শুধু বৈঠক নয়, ময়দানের লড়াইয়ে জোটের নেতাদের একসঙ্গে সামিল হতে দেখা যাচ্ছে। মণিপুর ইস্যুতে সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রতিবাদে একজোট বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে লোকসভার চলতি বাদল অধিবেশনে অচল করে রেখেছে ‘ইন্ডিয়া’। জোটের প্রতিনিধিরা গিয়েছেন মণিপুর সফরে। একসঙ্গে দরবার করেছেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
বিজেপি উদ্বেগে?
কিছুদিন আগেই নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন, তিনি একাই সব বিরোধীর থেকে বেশি শক্তিশালী! ছবিটায় এখন বদল দেখা যাচ্ছে। পাটনায় যেদিন বৈঠকে বসেছিল বিরোধী জোট, সেই দিনই দিল্লিতে ‘মৃতপ্রায়’ এনডিএ-র সভা ডাকে বিজেপি। ৩৮টি দল তাতে যোগ দেয়। ২৫ বছর আগে এনডিএ তৈরি হয়েছিল। বছরের পর বছর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এই জোট ছিল কার্যত অস্তিত্বহীন, তাকে ফের কেন জাগিয়ে তোলা? যেখানে ৩৮টি দলের মধ্যে ১৬টির লোকসভায় কোনো প্রতিনিধি নেই। কখনো ভোটে লড়েনি নয়টি দল।
প্রধানমন্ত্রী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নাম নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মতো সংগঠনের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। তা হলে কি বিজেপি বিরোধীদের সঙ্ঘবদ্ধ চেহারা দেখে উদ্বেগে? বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ভারতের মানুষ জনতা সরকার দেখেছে। ভিপি সিং, চন্দ্রশেখর, গুজরাল, দেবগৌড়ার সরকার দেখেছে। ভোটাররা অস্থায়ী সরকার চান না। তাই বিরোধীদের এই জমায়েত নিয়ে বিজেপি চিন্তিত নয়।’ শমীকের দাবি, ‘যে বাম ও কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা পশ্চিমবঙ্গে খুন হচ্ছেন, যারা বলছেন মোদী-দিদি গটআপ, তারা কীভাবে ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় স্তরে হাত মেলাচ্ছেন?’
বিজেপির এই প্রশ্ন অস্বস্তিতে রাখছে জোটকে। ‘ইন্ডিয়া’র শরিকরা একাধিক রাজ্যে যুযুধান। একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেয়ার ফর্মুলা বার করা কি সহজ হবে? সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেই দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া হবে না। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে নীরব থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে একেবারে খড়্গহস্ত। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, গণতন্ত্র হত্যার ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠেছে। গত মাসের পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্যের শাসক-বিরোধী সংঘাতকে আরো তীব্র করেছে। দুই পক্ষের হানাহানিতে ৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছে।
কংগ্রেস নেতা, আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে তৃণমূল এখানে যে অত্যাচার চালাচ্ছে, তার বিরোধিতা করতেই হবে। এরা কংগ্রেসকে দিনের পর দিন দুর্বল করেছে। এরা পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তৃণমূলকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না।’
জোটে চাপানউতোর
তৃণমূল জাতীয় ও রাজ্যের পরিস্থিতিকে আলাদা করে দেখছে। তৃণমূল মুখপাত্র, আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘রাজ্যে লড়াই হবে, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরে সবাই একটি বিষয়ে একমত-বিজেপি সরকারকে সরাতে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রের রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। গণতন্ত্র, সংবিধান রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে এটা জরুরি।’ কিন্তু তৃণমূলের বিরুদ্ধেই তো গণতন্ত্র হত্যার অভিযোগ উঠছে! বিশ্বজিতের ব্যাখ্যা, ‘বিরোধীরা পরিকল্পিত সন্ত্রাস চালিয়েছে। আমাদের ১৮ জন কর্মী খুন হয়েছেন। ৬০ হাজারের বেশি বুথের কতগুলিতে গন্ডগোল হয়েছে? ভোটের ফলই বলছে মানুষ কাদের পক্ষে।’
বিজেপি ও তৃণমূল, উভয়কেই প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে বাম-কংগ্রেস। একই সুর আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর। তার প্রশ্ন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যারা সংবিধান রক্ষা করছে না, তারা কেন্দ্রে বিজেপির বিরুদ্ধে কী লড়বে?’ কৌস্তভের মন্তব্য, ‘বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতেই হবে। এ রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করা ততটাই জরুরি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে যে নির্দেশ পেয়েছি, তাতে আমাদের তৃণমূল বিরোধিতা জারি থাকবে।’ এই সংঘাত কি ‘ইন্ডিয়া’র সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিতে পারে? সিনিয়র সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যেমন বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই, তেমনই কেরলে বাম ও কংগ্রেস মুখোমুখি। দিল্লি ও পঞ্জাবে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির লড়াই। এটা কেন্দ্রে সরকার নির্বাচনের ভোট। বিজেপি বিরোধিতার লক্ষ্যে সবাই এক থাকলে রাজ্যের পরিস্থিতি বাধা হবে না।’
ভোটের অঙ্ক
এমন জটিল সমীকরণের মধ্যে ভোটের পাটিগণিত নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একই ৩০৩টি আসনে জিতেছিল। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, বিহারের মতো যে রাজ্যগুলিতে বেশি আসন রয়েছে, সেখানে বিজেপি চূড়ান্ত ভালো ফল করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে অভাবনীয় ভাবে ১৮টি আসনে জেতে তারা। এ সব রাজ্যে তাদের আসন সংখ্যা কমার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ১৬টিতে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। সম্প্রতি কর্নাটকে ভোটে কংগ্রেসের বিপুল জয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছে গেরুয়া শিবির। এ বছরের শেষে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের দিকে নজর রয়েছে। এখানে কংগ্রেস জিতলে বিজেপির উপর চাপ আরো বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা জোট বাঁধায় বিজেপির কাজ কি কঠিন হবে? সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘গত লোকসভায় বিজেপি ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এনডিএ মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ। সেই সময়ের জোটসঙ্গী জেডিইউ, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা বেরিয়ে গিয়েছে। অকালি দলও নেই সঙ্গে। ২০১৯-এ কংগ্রেস ১৯ শতাংশের বেশি ভোট পায়। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বাকি শরিকরা ২০ শতাংশের মতো। তাই অঙ্কের হিসেবে দুই পক্ষের বিশেষ ফারাক নেই।’
বিজেপি বারবার প্রশ্ন তোলে, মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের নেতা কে? কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী 'ভারত জোড়ো' যাত্রা করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছেন। কিন্তু বিরোধী জোটের আঞ্চলিক নেতাদের মধ্যে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন যারা অভিজ্ঞতায় রাহুলকে পেছনে ফেলবেন। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারের নীতীশ কুমার, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা কি কুর্সির দৌড়ে নেই? বিরোধীরা বলছে, জোটের নেতা পরে ঠিক হবে। এখন জোট সক্রিয় থাকবে ইস্যুর ভিত্তিতে। আজো মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের হইচইয়ে সংসদ অচল হয়ে পড়ে। মণিপুর নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীরা। হার নিশ্চিত জেনেও একজোট হওয়ার বার্তা দেশকে দিতে চাইছেন রাহুলরা।
এখনো পর্যন্ত কোনো শিবিরেই না থাকা তেলঙ্গনা ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি, ওড়িশার বিজু জনতা দল, অন্ধ্রের তেলুগু দেশম, ওয়াই এস আর কংগ্রেস কোন দিকে যাবে, নজর রয়েছে সেই দিকেও। এ বছরের বিধানসভা নির্বাচন সেমিফাইনাল। তার ফলাফলের পর দুই শিবির বিভাজন স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা। সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সারজিসসহ ৪৫ জনের পাসপোর্ট জব্দের তথ্যটি ভুয়া
রাশিয়াকে হুঁশিয়ারি দিল অস্ট্রেলিয়া ,নাগরিক নিহত হলে শাস্তি হবে কঠিন
বাংলাদেশ পুলিশের অত্যাচারী আচরণের নতুন ভিডিও ফাঁস
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা
আজ ছোট পর্দায় মুক্তি পাবে নাটক 'হোয়াট এ বৌ'
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি সরিয়ে ফেললেন ভারতের সেনাপ্রধান
বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অবদান রাখছে
হাসিনাকে নিয়ে ‘সম্ভাব্য ঝুঁকি’তে সচেতন ছিলেন না টিউলিপ এটি ‘দুঃখজনক’ : লরি ম্যাগনাস
শেখ পরিবার একটি চোরের কারখানা’
অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা মামুন
জিমি কার্টারের প্রতি ৩০ দিনের শোকাবস্থা উপেক্ষা করে ট্রাম্পের পতাকা উত্তোলন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: খালেদা-তারেকসহ সব আসামি খালাস
টিউলিপের জায়গায় নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস
পদত্যাগপত্রে টিউলিপ সিদ্দিক যা লিখেছেন
টিউলিপের পদত্যাগ ইস্যুতে প্রেস উইংয়ের বিবৃতি
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে কায়রো, ঢাকার অবস্থান ৬ নম্বরে
মেয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে লাশ হলো "মা"!
মীরসরাইয়ে মুন্না খুনের ঘটনায়, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেফতার
আজ সারদায় ৪৮০ এসআইয়ের সমাপনী কুচকাওয়াজ