যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নজিরবিহীন বিক্ষোভ : ‘ইসরায়েলনীতি বদলাতে হবে’

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৬ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৬ পিএম

এর আগে এরকম বিক্ষোভ দেখেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। বাইরের একটি ইস্যু নিয়ে উত্তাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ধর্ম-বর্ণ সব ভুলে শিক্ষার্থীরা এক কাতারে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি একটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলনীতি বদলাতে হবে। যত দ্রুত এটির উদ্যোগ নেয়া হবে তত ভালো। না হলে বিক্ষোভ আর বাড়বে। এদিকে সুত্র বলছে, বিক্ষোভের কারণে বদলে যেতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইল নীতি।

জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এখন ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছেন দেশটির সবচেয়ে নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও সমর্থন দিচ্ছেন তাদের। দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী তাঁবু বসিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচল করে দিচ্ছেন। আন্দোলন ক্রমশই জোরালো হচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজিরবিহীন এই ছাত্র বিক্ষোভ দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলনীতি বদলে দিতে পারে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রই ইহুদিবাদী দেশটির বড় পৃষ্ঠপোষক, অস্ত্রদাতা এবং আর্থিক সহায়তাকারী। তবে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনে তাতে পরিবর্তন আসতে পারে।

ছাত্র বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এর পর থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। আন্দোলন চলছে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও।

যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ যেন ইসরায়েলকে সরবরাহ করা অস্ত্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ না করে এবং তাদের কাছ থেকে তহবিল না নেয়।

গত বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার পরও বিক্ষোভ থামছে না। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চোখ, ত্বকে জ্বালা ধরানো রাসায়নিক পদার্থ ও টেইজার ব্যবহার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রতিবাদের মাধ্যমে তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন।

ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সর্বপ্রথম বড় ধরনের বিক্ষোভ হয় কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। বিক্ষোভ দমনে গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট নেমাত মিনোচে শফিক বিক্ষোভকারীদের দমনে ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে আনেন। তারা শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করলে আন্দোলন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। এবার ইউনিভার্সিটির সিনেট তাঁকে তিরস্কার করেছে। শুক্রবার দুই ঘণ্টার বৈঠকের পর প্রতিষ্ঠানটির সিনেট একটি রেজুলেশন অনুমোদন করেছে। এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট শফিক একাডেমিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন, পুলিশকে ডেকে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বন্ধ করে ছাত্র ও অনুষদের সদস্যদের গোপনীয়তা এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকারকে অবজ্ঞা করেছেন।

বদলে যেতে পারে মার্কিন নীতি
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের চলা বিক্ষোভ ইসরায়েলকে সমর্থন করা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রজন্মগত ফারাক তুলে ধরেছে। দেশজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়ে তরুণ প্রজন্ম মার্কিন রাজনীতিবিদদের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষগুলোকে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে আগের চেয়ে আরও বেশি সহানুভূতিশীল তরুণ মার্কিন প্রজন্ম। তাদের সঙ্গে আগের প্রজন্মের মানুষের মতামতের পার্থক্য জো বাইডেনের পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনায় ঝুঁকি তৈরি করেছে।

সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বড় ছাত্র বিক্ষোভ চলাকালে বা এর জেরে জনমতে এক বড় পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে ক্যাম্পাসের এ বিক্ষোভ। কমবেশি এমন একটা ধারণা আছে, এ বিক্ষোভই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

নতুন ও পুরোনো প্রজন্মের মধ্যে মতামতের এ ফারাক যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের জন্যও মাথাব্যথার কারণ। দীর্ঘ মেয়াদে বদলে যেতে পারে ওয়াশিংটনের ইসরায়েলনীতি।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ওমর ওয়াশো আলজাজিরাকে বলেন, ‘ইসরায়েলকে নিয়ে এরই মধ্যে আমরা প্রজন্মগত মতপার্থক্যের বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি। এটি ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য দীর্ঘমেয়াদি একটি ইস্যু হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলা বিক্ষোভ এ মতপার্থক্যকে জোরালো করেছে।’

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর সমাজবিজ্ঞানী এমান আবদেলহাদির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতির অপরিবর্তনশীল অবস্থায় দেশটির তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমেই হতাশা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পুরোনো প্রজন্মের ব্যাপারে তাদের সত্যিকার অসন্তোষ রয়েছে। তবে যা আরও গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, বিদ্যমান ব্যবস্থার প্রতি নতুন প্রজন্মের অসন্তোষের বিষয়টি। শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ মার্কিন জনমতে বিভক্তির মুহূর্তকে আরও বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেছে।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পাবনায় জটিল রোগে আক্রান্তদের মাঝে চেক বিতরণ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের

পাবনায় জটিল রোগে আক্রান্তদের মাঝে চেক বিতরণ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক

সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক

প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ তৈরিতে প্রকৌশলীদের এগিয়ে আসতে হবে : নজরুল হামিদ

প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ তৈরিতে প্রকৌশলীদের এগিয়ে আসতে হবে : নজরুল হামিদ

বেগমগঞ্জে দুহাজার টাকা নিয়ে স্বামী সাথে ঝগড়া করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

বেগমগঞ্জে দুহাজার টাকা নিয়ে স্বামী সাথে ঝগড়া করে গৃহবধূর আত্মহত্যা

১১ জন গর্ভধারিণী মাকে ‘স্বপ্নজয়ী মা’ সম্মাননা প্রদান করেছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর

১১ জন গর্ভধারিণী মাকে ‘স্বপ্নজয়ী মা’ সম্মাননা প্রদান করেছে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর

ডিএনসিসির উন্নয়ন কাজে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তা ও ড্রেনেজ : মেয়র

ডিএনসিসির উন্নয়ন কাজে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তা ও ড্রেনেজ : মেয়র

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩

ইন্দোনেশিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩

সমাজ পরিবর্তনে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী

সমাজ পরিবর্তনে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী

এলএএনপিএসি’র সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাবাহিনী প্রধান

এলএএনপিএসি’র সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র গেলেন সেনাবাহিনী প্রধান

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আবাসন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে কুইক রেসপন্স টিম চান সিটি মেয়র

চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে কুইক রেসপন্স টিম চান সিটি মেয়র

দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক গণজাগরণ দরকার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক গণজাগরণ দরকার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দক্ষ নারী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে কাজ করবে মন্ত্রণালয় : শফিকুর রহমান চৌধুরী

দক্ষ নারী কর্মীদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে কাজ করবে মন্ত্রণালয় : শফিকুর রহমান চৌধুরী

হায়দার আকবর খান রনোর দাফন সম্পন্ন

হায়দার আকবর খান রনোর দাফন সম্পন্ন

সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও ভুয়া খবর ছড়ানো রোধে বৈশ্বিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি : তারার

সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার ও ভুয়া খবর ছড়ানো রোধে বৈশ্বিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি : তারার

মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল

মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল

গাজীপুরে লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

গাজীপুরে লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা করতে চায় ফ্রান্স : প্রতিমন্ত্রী পলক

স্যাটেলাইট প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা করতে চায় ফ্রান্স : প্রতিমন্ত্রী পলক

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আশরাফ উল আলমের প্ৰয়াণ

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আশরাফ উল আলমের প্ৰয়াণ

চৌদ্দগ্রামে অবস্থিত সৈয়দা আঞ্জুমান আরা বালিকা বিদ্যালয়ের শতভাগ সাফল্য

চৌদ্দগ্রামে অবস্থিত সৈয়দা আঞ্জুমান আরা বালিকা বিদ্যালয়ের শতভাগ সাফল্য