কুখ্যাত মানব-পাচারকারীকে যেভাবে খুঁজে বের করেন বিবিসি সাংবাদিক
২৩ মে ২০২৪, ০২:৪১ পিএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৪, ০২:৪১ পিএম
![](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024May/999-20240523144101.jpg)
সপ্তাহখানেক আগে বিবিসির করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সূত্র ধরে একজন কুখ্যাত মানব-পাচারকারী গ্রেফতার হন। ইউরোপের মোস্ট ওয়ান্টেড বারজান মাজিদকে ইরাকের কুর্দিস্তান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বিবিসি খুঁজে বের করার আগ পর্যন্ত তার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে খুঁজে বের করার সেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন বিবিসি সাংবাদিক সু মিচেল।
আমি ইরাকের একটি শপিং মলে বসে আছি, ইউরোপের দুর্ধর্ষ এক মানব-পাচারকারীর মুখোমুখি। তার নাম বারজান মাজিদ। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় আছে তার নাম। ওইদিন শপিং মলে এবং পরের দিন তার অফিসে কথা হয় আমাদের। কথোপকথনে বারজান মাজিদ বলেন, কত জন অভিবাসীকে ইংলিশ চ্যানেল পার করেছেন তা তিনি নিজেও জানেন না। ‘এক হাজারও হতে পারে আবার ১০ হাজারও হতে পারে। জানা নেই, হিসাব রাখিনি।’
কয়েক মাস আগেও তার সাক্ষাৎ পাওয়াটা অসম্ভব বলেই মনে হয়েছিল। সেটা বাস্তবে রূপ পেয়েছে অবশেষে। আমার সঙ্গে ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা রব লরি। লরি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেন। দু’জনে মিলে বেরিয়ে পড়েছিলাম এই লোকটার খোঁজে, যার আরেক নাম স্করপিয়ন। কয়েক বছর ধরে তিনি ও তার গ্যাং বা দল, ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে নৌকায় ও লরিতে করে মানব পাচার বাণিজ্যের বেশির ভাগ অংশই নিয়ন্ত্রণ করছেন। মানব পাচারের প্রক্রিয়ায় ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ৭০ জন অভিবাসী নৌকায় পাড়ি দিতে মৃত্যুবরণ করেছেন। গত মাসে ফ্রান্সের উপকূলে পাঁচ জন মারা যান, যাদের মধ্যে একটি সাত বছরের মেয়েও ছিল।
যাত্রাপথ হিসেবে এটা ভয়ংকর, কিন্তু পাচারকারীদের জন্য খুবই লাভজনক। নৌকা পারাপারের জন্য জনপ্রতি ছয় হাজার পাউন্ড (প্রায় নয় লাখ টাকা) পর্যন্ত নেন তারা। গত বছর ২০২৩ সালে ৩০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ এই পথে পার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ফলে বোঝাই যায় যে লাভের অংকটা কত বড়।
স্করপিয়নের ব্যাপারে আমাদের আগ্রহটা তৈরি হয় ফ্রান্সের একটা অভিবাসী ক্যাম্পে একটা ছোট্ট মেয়ের সাথে পরিচয় হওয়ার পর। রাবারের ডিঙ্গিতে করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে মরতে বসেছিল সে। ডিঙ্গিটা সাগরের উপযোগী নয় – বেলজিয়াম থেকে সস্তায় সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিসটা কেনা হয়েছিল। কোনও লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই সেই ডিঙ্গিতে সওয়ার হয়েছিল ১৯ জন মানুষ। এভাবে কোনও মানুষকে সাগরে পাঠানো যায়?
যুক্তরাজ্যে পুলিশ যখন অভিবাসীদের ধরে, তারা তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে তদন্ত করে দেখে সেগুলো। এই ফোনগুলোতে ২০১৬ সাল থেকে একই নাম্বারের দেখা মিলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাম্বারটা সেভ করা হয়েছে ‘স্করপিয়ন’ নাম দিয়ে। কয়েকটিতে স্করপিয়ন (বিছা) এর ছবি দিয়ে রাখা। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি বা এনসিএ’র সিনিয়র তদন্ত কর্মকর্তা মার্টিন ক্লার্কের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি, এক পর্যায়ে অফিসাররা বুঝতে পারেন “স্করপিয়ন” হচ্ছেন বারজান মাজিদ নামের এক কুর্দিশ ইরাকি।
মাজিদ ২০ বছর বয়সে নিজেও একটা লরিতে করে যুক্তরাজ্যে পাচার হয়েছিলেন। সেটা ২০০৬ সালের কথা। এক বছর পর আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়ে গেলেও, আরো কয়েক বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন তিনি। এই সময়ের একটা অংশ অবশ্য অস্ত্র ও মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের কারণে কারাগারেই কাটে তার। অবশেষে ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ইরাকে ফেরত পাঠানো হয় তাকে। ধারণা করা হয়, এর অল্পদিনের মধ্যেই “উত্তরাধিকারসূত্রে” বড় ভাইয়ের মানবপাচার ব্যবসার দায়িত্ব পান তিনি। তার বড় ভাই তখন বেলজিয়ামে জেল খাটছিলেন।
ক্রমশ স্করপিয়ন নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন মাজিদ। পরে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে মানবপাচার ব্যবসার বেশিরভাগ স্করপিয়নের গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেই ধারণা করা হয়। দুই বছরব্যাপী এক আন্তর্জাতিক পুলিশি অভিযানে বারজান মাজিদের দলের ২৬ জন সদস্যকে আটক করা সম্ভব হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের আদালতে বিচার হয় তাদের। কিন্তু, স্করপিয়ন নিজে গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হন এবং আত্মগোপনে চলে যান।
তার অনুপস্থিতিতেই, বেলজিয়ান আদালতে তার বিচার হয়। মানব পাচারের ১২১ টি ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় তাকে। তাকে ২০২২ সালের অক্টোবরে ১০ বছরের সাজা ও ১০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করে রায় দেয়া হয়। তখন থেকে, স্করপিয়নের কোনও হদিস আর জানা যায় না। তার অন্তর্ধানের এই রহস্যটাই ভেদ করতে চেয়েছিলাম আমরা।
রব লরির যোগাযোগে থাকা এক ব্যক্তি আমাদের একজন ইরানিয়ান লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, যিনি আমাদের জানান, চ্যানেল পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করার সময় স্করপিয়নের সঙ্গে তার চুক্তি হয়েছিল। স্করপিয়ন ইরানি লোকটিকে বলেছিলেন তুরস্কে থাকেন তিনি, সেখানে থেকেই ব্যবসা সামলান।
ইতোমধ্যে মাজিদের বড় ভাই জেল থেকে ছাড়া পান। বেলজিয়ামে তাকে খুঁজে বের করি আমরা। তিনিও বলেন, স্করপিয়নের তুরস্কেই থাকার কথা। যুক্তরাজ্যমুখী অভিবাসীদের জন্য, তুরস্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ । দেশটির অভিবাসন আইনের কারণে আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে ভিসা নিয়ে সেখানে প্রবেশ করা সহজতর।
একটা বার্তা পেয়ে আমরা ইস্তানবুলের একটি ক্যাফেতে গিয়ে হাজির হই, যেখানে বারজান মাজিদকে অতি সম্প্রতি সেখানে দেখা গিয়েছিল। আমাদের প্রাথমিক অনুসন্ধানটা সুবিধার হয়নি। ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি এই ব্যবসা সম্পর্কে আমাদের তথ্য দিতে পারেন কিনা। পুরো ক্যাফে নিস্তব্ধ!
কিছুক্ষণের মধ্যেই, আমাদের টেবিলের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে একটা লোক তার জ্যাকেটের জিপার খোলে, একটা অস্ত্রবহন করছিল সে। এটা একটা হুঁশিয়ারি, যার মানে, আমরা যাদের খোঁজখবর করছি, তারা ভয়ংকর লোক। পরের দফায় কিছুটা সাফল্য আসে। আমরা জানতে পারি, কাছেই একটি মানি এক্সচেঞ্জে দুই লাখ ইউরো জমা দিয়েছেন মাজিদ। সেখানে আমাদের নাম্বার রেখে আসি। ওই দিনই মধ্যরাতে লরির ফোন বেজে ওঠে।
কলার আইডিতে লেখা ছিল “নাম্বার উইথহেল্ড”। অন্য প্রান্ত থেকে কেউ একজন দাবি করেন তিনিই বারজান মাজিদ। এমন সময়ে ফোনটা আসে এবং এত অপ্রত্যাশিতভাবে, কলের শুরুর অংশটা রেকর্ড করার মতো সময়ই পাওয়া যায়নি।
ভেসে আসা কণ্ঠস্বরটি যতটা মনে করতে পারে রব লরি: লোকটা বলছিল, “শুনলাম আপনারা আমাকে খুঁজছেন।” আমি তখন বললাম, “আপনি কে? স্করপিয়ন?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তুমি আমাকে ওই নামে ডাকতে চাও? ঠিক আছে।”
এই লোকটিই আসল বারজান মাজিদ কিনা, সেটা জানার উপায় নেই। তবে, আমাদের জানা তথ্যগুলোর সঙ্গে তারা কথাবার্তার মিল পাওয়া যাচ্ছিল। জানালেন, ২০১৫ সালে দেশে ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত তিনি নটিংহ্যামে ছিলেন। কিন্তু, পাচারের ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
“এটা সত্যি নয়!” তার জোরালো দাবি। “সবই মিডিয়ার সৃষ্টি।” লাইনটা কেটে গেল। আমরা জিজ্ঞেস করলেও, তার অবস্থানের ব্যাপারে কোনও তথ্য দিলেন না।
আবার কখন ফোন আসবে বা আদৌ আসবে কিনা, কে বলতে পারে। এরমধ্যেই, স্থানীয় একজনের মারফতে রব লরি জানতে পারেন স্করপিয়ন তখন তুরস্ক থেকে গ্রিস ও ইতালিতে অভিবাসী পাচারে ব্যস্ত।
তথ্যগুলো রীতিমতো উদ্বেগের। একশো' জনের মতো নারী, পুরুষ ও শিশুকে এমন একেকটা ইয়টে বা ডিঙ্গিতে তুলে দেয়া হতো, যেগুলোর ধারণ ক্ষমতা মাত্র ১২ জনের।
ইয়টগুলো বেশিরভাগ সময় পাচারকারীরাই চালাতো। তাদের নৌযান চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিতে ছোট ছোট দ্বীপের মাঝ দিয়ে বিপজ্জনক রুটগুলো ব্যবহার করতো তারা।
বড় অংকের কারবার হতো। ওই ছোট নৌযানে ঠাঁই পাওয়ার জন্য ১০ হাজার ইউরোর মতো দিতে হতো একেকজন যাত্রীকে।
গত দশ বছরে সাত লাখ ২০ হাজার মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। যাদের মধ্যে আড়াই হাজার জন মারা গেছেন, অধিকাংশই সাগরে ডুবে।
দাতব্য প্রতিষ্ঠান এসওএস মেডিটারেনিয়ানের জুলিয়া শ্যাফারমেয়ার বলছিলেন যে পাচারকারীরা লোকগুলোকে ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। “মনে হয় না, এই মানুষগুলো বাঁচলো কি মরলো, তাতে তাদের কিছু এসে যায়।”
এবার, প্রশ্নটা সরাসরি স্করপিয়নকেই করার সুযোগ পাই আমরা। হঠাৎ, তার ফোন আসে আবার। তিনি আবার পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অবশ্য, ‘স্মাগলার (পাচারকারী)’ শব্দটা আভিধানিকভাবে সরাসরি শারীরিকভাবে জড়িত ব্যক্তিকে বোঝায়। পেছন থেকে কলকাঠি নাড়া কারও বেলায় সেটা হয়তো প্রযোজ্য নয়।
“আপনাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে” উল্লেখ করে তার বক্তব্য, “এমনকি এখনও তো আমি নেই এসবের মধ্যে।” তার দাবি, তিনি কেবলই “মানি ম্যান”। সাগরে ডুবে মারা যাওয়া মানুষগুলোর জন্য খানিকটা সহানুভূতি দেখা গেল যেন তার মধ্যে।
“কখন কার মরণ আসবে উপরওয়ালাই ভালো জানেন। কিন্তু, কখনও কখনও মানুষেরও কিছু দোষ থাকে,” বলেন তিনি। “তিনি তো আর কাউকে বলেননি, ‘নৌকায় গিয়ে ওঠো’।”
আমাদের পরের গন্তব্য মারমারিস রিসোর্ট। তুর্কি পুলিশের ধারণা, সেখানকার একটা ভিলার মালিক স্করপিয়ন। আমরা আশেপাশে খোঁজ নিলাম। এক পর্যায়ে, একজন নারী ফোন করে জানালেন স্করপিয়নের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তার।
তিনি জানতেন, মাজিদের মানব-পাচারে জড়িত থাকার বিষয়টি। তিনি বলেন, এটা তাকে মানসিক চাপের মধ্যে রাখলেও, তার দুশ্চিন্তা ছিল টাকা নিয়ে। অভিবাসীদের ভাগ্য নিয়ে নয়। “সে মানুষগুলোর কথা একটুও ভাবেনি – দুঃখজনক, না?” বলছিলেন তিনি।
“পুরনো দিনের কথা মনে পড়লে আমার গ্লানি হয়, কারণ আমি জানতাম অনেক কিছু। সেগুলো ভালো কিছু নয়।” তিনি জানান, কাছাকাছি সময়ে মারমারিসের ভিলায় তাকে দেখা যায় নি। অবশ্য কারও কাছ থেকে শুনেছেন, তিনি এখন ইরাকে থাকতে পারেন।
আরেকজনও একই রকম তথ্য দিয়ে জানান, ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের সুলায়মানিয়া নামের এক শহরের একটি মানি এক্সচেঞ্জে স্করপিয়নকে দেখেছেন তিনি। আমরা ছুটলাম। যদি সেখানে স্করপিয়নকে না পাই, আমাদেরকে হাল ছেড়ে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম, তাহলে আর চেষ্টা চালাবো না।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত রব লরির যোগাযোগে থাকা লোকটির মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হল। প্রথমে তার সন্দেহ হয়েছিল, হয়তো তাকে ছিনতাই করে ইউরোপে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের। অনেক মেসেজ চালাচালি হয়। প্রথমে যোগাযোগ রক্ষাকারী লোকটি, পরে রব লরি নিজেই কথোপকথন চালিয়ে যায়।
স্করপিয়ন জানান, যদি সাক্ষাতের স্থান তার পছন্দ অনুযায়ী হয়, কেবলমাত্র তাহলেই আমাদের দেখা দেবেন। যদি কোনও ফাঁদে পড়ি, এমন শঙ্কায় আমরা প্রস্তাবটি নাকচ করে দিই। তারপর একটা টেক্সট মেসেজ আসে, “আপনারা কোথায়?” আমরা জানাই, কাছাকাছি একটা শপিং মলে যাচ্ছি। স্করপিয়ন সেই মলেরই নিচ তলার একটা কফি শপে দেখা করার কথা বলে।
অবশেষে, তার দেখা পাওয়া গেল। বারজান মাজিদ দেখতে অনেকটা ধনী গলফারের মতো। পরিপাটি পোশাক পরা - কালো জিন্স, হালকা-নীল শার্টের ওপরে একটা কালো গিলেট (হাতাকাটা জ্যাকেট)। টেবিলে উপর যখন হাত রাখলো, দেখলাম তার নখ ম্যানিকিওর করা।
কাছেরই একটি টেবিলে তিনজন লোক এসে বসলো। আন্দাজ করলাম, তার নিরাপত্তা রক্ষী দল। আলাপে আবার একটা অপরাধী সংগঠনের শীর্ষ ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেন তিনি। তার দাবি, অন্য গ্যাংয়ের সদস্যরা তার নাম জড়াতে চেষ্টা করে।
“কয়েকটা লোক গ্রেফতার হলো। বলে দিলো, ‘আমরা তার(স্করপিয়ন) হয়ে কাজ করতাম’। সাজাটা যাতে একটু কম হয়, সেজন্য এটা বলেছে।”
অন্য পাচারকারীদের কাউকে ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে এবং তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে, এতেও তাকে একটু বিরক্ত মনে হল। “এক লোক তিনদিনে ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে ইতালি থেকে তুরস্কে পাঠিয়েছে, অথচ তার ব্রিটিশ পাসপোর্ট আছে!” বলেন তিনি।
“আমি অন্য কিছু দেশেও ব্যবসা করতে যেতে চাই। কিন্তু, পারছি না।”
যখন, অভিবাসীদের মৃত্যুর পিছনে তার দায় নিয়ে বলার জন্য জোরাজুরি করলাম, তিনি ফোনে যা বলেছিলেন সেটাই আবার শোনালেন। তিনি শুধু টাকা নেন এবং জায়গাটা নিশ্চিত করেন।
তার কাছে স্মাগলার বা পাচারকারী হলো সেই ব্যক্তি যে নৌযান বা লরিতে লোক তোলে এবং পারাপার করে।
“আমি কোনোদিন কাউকে নৌকায় তুলিনি এবং কাউকে খুন করিনি।”
আলাপ শেষ হলো। তবে স্করপিয়ন, রব লরিকে সুলায়মানিয়ায় যে মানি এক্সচেঞ্জ থেকে তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন সেটা দেখার আমন্ত্রণ জানালেন।
ছোট্ট একটা অফিস, জানালায় আরবিতে কিছু লেখা আর কয়েকটি মোবাইল ফোন নাম্বার। লোকে এখানে তাদের পারাপারের টাকা দিতে আসে।
রব লরি সেখানে অবস্থানের সময়ই এক লোককে নগদ টাকা ভর্তি একটি বাক্স বহন করতে দেখেন।
সেদিন স্করপিয়ন জানান, কীভাবে এই ব্যবসায় জড়ালেন তিনি। সময়টা ২০১৬ সাল, যখন হাজার হাজার মানুষ ইউরোপ অভিমুখে ছুটছিল।
“কেউ তাদের বাধ্য করেনি। তারা নিজেরাই চেয়েছিল,” বলেন তিনি।
“তারা স্মাগলারদের হাতে পায়ে ধরতো, ‘প্লিজ, প্লিজ, আমাদের জন্য এইটুকু করো।’ মাঝে মাঝে পাচারকারীরা বলতো, ‘সৃষ্টিকর্তার দোহাই, আমি তাদের সাহায্য করবো।’ এরপর তারা (অভিবাসনপ্রত্যাশী) অভিযোগ জানানো শুরু করলো, ‘এই সমস্যা, ওই সমস্যা...’ না, এসব অভিযোগ সত্যি নয়।”
স্করপিয়ন জানান, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে তাদের কার্যক্রম দেখভাল করা দুই শীর্ষ ব্যক্তির একজন। স্বীকার করলেন, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সামলেছেন তিনি।
“বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করতে হতো। অর্থ, স্থান, যাত্রী, পাচারকারী... সবকিছুতেই ছিলাম আমি।”
এখনও মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছিলেন কিন্তু, কথার সঙ্গে তার কর্মকাণ্ড মেলে না।
স্করপিয়ন যখন তার মোবাইল ফোন স্ক্রল করছিলেন, পেছনের দেয়ালে বাঁধানো ছবির কাঁচের ফ্রেমে প্রতিফলন দেখতে পান রব লরি। স্করপিয়ন অবশ্য টের পাননি।
লরি সেখানে দেখেছিলেন পাসপোর্ট নাম্বারের তালিকা। পরে আমরা জানতে পারি, পাচারকারীরা এগুলো ইরাকি কর্মকর্তাদের পাঠাতো। তারপর তাদের ঘুষ দিয়ে ভুয়া ভিসা বানাতো যাতে অভিবাসীরা তুরস্কে ভ্রমণ করতে পারে।
স্করপিয়নকে খুঁজে পাওয়ার গল্প এ পর্যন্তই। প্রতিটি ধাপে প্রাপ্ত তথ্য যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে এসেছি আমরা। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
![জাতীয় ঈদগাহে ৫ স্তরের নিরাপত্তা, জঙ্গি হামলার শঙ্কা নেই](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/2020-1718520545-20240616135450.jpg)
জাতীয় ঈদগাহে ৫ স্তরের নিরাপত্তা, জঙ্গি হামলার শঙ্কা নেই
![সউদির সঙ্গে মিল রেখে নোয়াখালীর ৬ মসজিদে ঈদুল আজহা উদযাপন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/img-20240616-wa0014-20240616132859.jpg)
সউদির সঙ্গে মিল রেখে নোয়াখালীর ৬ মসজিদে ঈদুল আজহা উদযাপন
![বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৩ টি গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/img-20240616-wa0015-20240616132441.jpg)
বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার ১৩ টি গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন
![সেন্টমার্টিন এর পরিস্থিতি পরিদর্শনে বিজিবি মহাপরিচালক](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/09-20240616132124.jpg)
সেন্টমার্টিন এর পরিস্থিতি পরিদর্শনে বিজিবি মহাপরিচালক
![সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে হোটেলে পুলিশ সদস্য, নেটদুনিয়া উত্তাল](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/jashore-20240616123706.jpg)
সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে হোটেলে পুলিশ সদস্য, নেটদুনিয়া উত্তাল
![রাজধানীতে ঈদের দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/images-3-20240616123522.jpg)
রাজধানীতে ঈদের দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস
![নলছিটিতে সিএনজি-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/accidenthh-20240616122238.jpg)
নলছিটিতে সিএনজি-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
![নিষিদ্ধ হ্যালোসিন পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/images-2-20240616122032.jpg)
নিষিদ্ধ হ্যালোসিন পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা
![কলাপাড়ায় ৭ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ উদযাপন করছেন আগাম ঈদ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/img-20240616-114912-20240616121752.jpg)
কলাপাড়ায় ৭ গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ উদযাপন করছেন আগাম ঈদ
![বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক: উত্তরের পথে স্বস্তির ঈদযাত্রায় বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/received-359075780182307-20240616121534.jpg)
বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক: উত্তরের পথে স্বস্তির ঈদযাত্রায় বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ
![প্রেসক্রিপশনে ভুল ওষুধ লিখে সমালোচনার মুখে ডাক্তার](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/doctor-20240616121309.jpg)
প্রেসক্রিপশনে ভুল ওষুধ লিখে সমালোচনার মুখে ডাক্তার
![ইসরাইলি সংগঠনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/images-1-20240616121024.jpg)
ইসরাইলি সংগঠনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
![বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হলেন বেবী নাজনীন](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/images-20240616120834.jpg)
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হলেন বেবী নাজনীন
![সউদি আরবসহ যেসব দেশে পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/90-20240616115639.jpg)
সউদি আরবসহ যেসব দেশে পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা
![গাজায় হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ৮ সেনা নিহত](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/uuu-20240616115208.jpg)
গাজায় হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ৮ সেনা নিহত
![ঢাকা বোট ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়লেন বেনজীর](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/benjir-20240616114707.jpg)
ঢাকা বোট ক্লাবের দায়িত্ব ছাড়লেন বেনজীর
![প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন নরেন্দ্র মোদি](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/pm-modi-20240616-111949038-20240616114130.jpg)
প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন নরেন্দ্র মোদি
![বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/jem-s-20240616-101502782-20240616113315.jpg)
বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট
![২৪ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৫১ হাজার যানবাহন পারাপার : টোল আদায় ৩ কোটি ৬৫ লাখ](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/tanagil-toll-pic-16-06-24-20240616113104.jpg)
২৪ ঘন্টায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৫১ হাজার যানবাহন পারাপার : টোল আদায় ৩ কোটি ৬৫ লাখ
![নোয়াখালীতে নিজ ফার্মেসী থেকে ব্যাবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার](https://dailyinqilab.com/mediaStorage/content/images/2024June/SM/noakhali-death-normal-20240616110642.jpg)
নোয়াখালীতে নিজ ফার্মেসী থেকে ব্যাবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার