কিভাবে কার্যকর হবে ইসরাইল - হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি?
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পিএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পিএম
লেবাননে এখন সকাল। যার অর্থ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঘোষিত ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি এখন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ইসরাইল সতর্ক করে দিয়েছে, যুদ্ধবিরতি হলেও বেসামরিক মানুষজন এখনি যেন বাড়িঘরে ফিরে না যায়।
কয়েক ঘণ্টা আগের রিপোর্ট অনুযায়ী বৈরুতের দুইটি এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে আবারও বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে। তবে, যদি এই চুক্তি বজায় থাকে, তবে এটি ইসরাইল ও ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।
দু'পক্ষের মাঝে চলমান এই যুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে গত সেপ্টেম্বর মাসে, যখন ইসরাইল বোমা হামলা বাড়ায় এবং সীমিত স্থল অভিযান শুরু করে। এখানে উল্লেখ্য, যুদ্ধ বিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরাইলি বাহিনী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে সরে যাবে এবং এই সময়ের মাঝে হিজবুল্লাহর পরিবর্তে লেবাননের সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির কারণ
মঙ্গলবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর, নেতানিয়াহু একটি বিবৃতি দিয়ে এ ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সে সময় হোয়াইট হাউস থেকে চুক্তিটিকে বৃহত্তর শান্তির পথ হিসেবে স্বাগত জানান।
এই মুহূর্তে হিজবুল্লাহ'র সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
১. ইরানের হুমকির প্রতি মনোযোগ দেয়া: এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও তিনি উল্লেখ করেছেন যে ইসরাইল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রধান অংশ এবং ইরানের পরমাণু কর্মসূচির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংস করেছে।
হিজবুল্লাহকে সবসময় ইরানের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান ঢাল হিসাবে দেখা হতো। কিন্তু হিজবুল্লাহ’র ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস হওয়ার ফলে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সামরিক ভারসাম্য ইসরাইলের পক্ষে চলে গেছে।
২. ক্লান্তি: এই শব্দটি তিনি সরাসরি ব্যবহার করেন নি। তবে তিনি এটি বলেছেন যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর একটি বিরতি নেয়া এবং পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করাটা প্রয়োজন। ইসরাইলি বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশটির সামরিক বাহিনী দুই দিকে দুইটি দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। তবে এখন লেবাননে যদি সংঘাত শেষ হয়, তাহলে গাজায় আরও বেশি ইসরাইলি বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধের কোনও সমাপ্তি দেখা যাচ্ছে না।
৩. হামাসকে বিচ্ছিন্ন করা: হিজবুল্লাহকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে নেয়ার অর্থ হল হামাসের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়া।
হামাস বরাবরই মনে করেছে যে ইরানের ‘এক্সিস অব রেজিসট্যান্স’ বা ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ এর বাকি সদস্যরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়বে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন যে ইসরাইলি বন্দিদের মুক্ত করার জন্যই তারা এই যুদ্ধ করছেন। যদিও তার এই দাবিটি বিতর্কিত।
গাজায় এখনও আটক থাকা ইসরাইলি বন্দিদের পরিবার ও আত্মীয়রা মি. নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তারা অভিযোগ করেছেন তিনি গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন এবং বন্দিদের মুক্তি নিয়ে চুক্তি করার ক্ষেত্রে অবহেলা করছেন।
বিবিসি বাংলা'র খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।
চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণা দলের এমন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন বাইডেনের বহির্মুখী প্রশাসনের কারণে এই শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। যা এ মাসে ট্রাম্পের বিজয়ে উদ্ভাসিত হয়েছিল।
“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সঠিকভাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে তার ঐতিহাসিক বিজয় এ অঞ্চলের নেতাদের শান্তির দিকে নিয়ে যাবে এবং আমরা ঠিক এটাই ঘটতে দেখছি” বলেন এ কর্মকর্তা।
তবে এই যুদ্ধ বিরতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এই চুক্তির আওতায় ইসরাইলি বাহিনী ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের প্রত্যাহারের পর দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার লেবানিজ সেনা মোতায়েন করা হবে। কিন্তু তাদের কিভাবে মোতায়েন করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সামরিক বাহিনীর অভিযোগ তাদের এ দায়বদ্ধতা পূরণের জন্য সম্পদ, অর্থ, জনবল এবং সরঞ্জাম নেই।
কিভাবে কার্যকর হবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি?
যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবিসিকে যা বলেছেন তা হলো:
পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে ইসরাইলি সেনাদের ‘পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার’ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণে এবং হিজবুল্লাহ উত্তরে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে লেবাননের সামরিক বাহিনী ব্লু লাইনের চারপাশের এলাকায় টহল দেবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স বিদ্যমান ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় যোগ দেবে। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে লেবাননের সামরিক, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এবং লেবাননে জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন বাহিনী (ইউনিফিল) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই এলাকায় চুক্তি কার্যকর করতে সহায়তা করবে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের সম্ভাব্য সব অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে।
লেবাননের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সেনা থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ফরাসি বাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং যোগাযোগের মাধ্যমে লেবাননের সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশগুলো লেবাননের সামরিক বাহিনীকে একটি সামরিক কারিগরি কমিটি বা এমটিসি’র মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা করবে।
এ পরিকল্পনাটিতে ‘টেকসই যুদ্ধ বিরতি’ হতে পারে এমন পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় দক্ষিণ লেবাননে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আইনজীবী হত্যার অবিলম্বে বিচার চাই -ইসলামী আন্দোলন ঢাকা জেলা দক্ষিণ
আইনজীবী সাইফুল হত্যাকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান ফখরুলের
মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে মহা জট, ফড়নবিশকে জরুরি তলব দিল্লিতে
নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদলের ১২ নেতাকর্মীর পদত্যাগ কমিটি বাতিলের দাবি
সাত কলেজ অনার্স প্রথম বর্ষের কালকের পরীক্ষা স্থগিত
আওয়ামী নেতাদের নির্দেশে চট্রগ্রামে নৈরাজ্য সৃষ্টির ব্যর্থ চেষ্টা
ইসকন দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে - বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন
বৃষ্টির কবলে দ. আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট
‘চিকিৎসা নিতে করাচি যান, ভারতে নয়’, বাংলাদেশিদের ভিসা বাতিলের দাবি শুভেন্দুর
বিসিএস প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিজি প্রেসের দুই কর্মচারী গ্রেফতার
ভারতে বাইক ভাঙ্গার দৃশ্য ভাইরাল অনলাইন জুড়ে
পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উসকানি সৃষ্টি করা হচ্ছে
ডিইপিজেড কর্তৃপক্ষের পাওনা পরিশোধের আশ্বাসে ৩২ ঘন্টা পর মহাসড়ক ছাড়ল শ্রমিকরা
হিউজের মৃত্যুর এক দশক আজ
উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল চট্টগ্রাম
বিডিআর সদস্যদের পুনরায় চাকরির দাবিতে ফেনীতে মানববন্ধন
তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের গনতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যয়
উগ্র সংগঠন ইসকন পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে হত্যালীলা খেলছে : মাহিন সরকার
যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক মিনিটেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত করবে রাশিয়ার নতুন ক্ষেপাণাস্ত্র