তুদুনবিরির ড্রোন হামলার শোকের গল্প,ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় স্বজনেরা
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫ এএম
গত বছর ৩ ডিসেম্বর এক ভয়াবহ ড্রোন হামলায় নাইজেরিয়ার তুদুনবিরি গ্রামে প্রাণ হারান প্রায় ৮৫ জন নিরীহ মানুষ। এদের মধ্যে ছিল শিশুসহ অনেক নারী ও পুরুষ। নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীর ভুল গোয়েন্দা তথ্যের কারণে এই ঘটনাটি ঘটে। সামরিক বাহিনী ভুলক্রমে মনে করেছিল যে, গ্রামবাসীদের আয়োজিত ইসলামিক ধর্মীয় উৎসব মওলুদ ছিল জিহাদিদের একটি গোপন সমাবেশ।
প্রতিবছর তুদুনবিরি গ্রামে মওলুদ উৎসব পালন হয়।এটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম উদযাপনের জন্য আয়োজন করা হয়।২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে এই উৎসব চলাকালীন, নাইজেরিয়ার সামরিক ড্রোন থেকে প্রথম বোমা ফেলা হয়। রাত ১০টার দিকে নারীদের ও শিশুদের একটি গাছের নিচে বসে থাকা স্থানটিতে প্রথম বোমাটি আঘাত হানে।
সাহায্য করার জন্য যখন গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসে তখন দ্বিতীয় বোমাটি ফেলা হয়। এই হামলার ফলে তৎক্ষণাৎ বহু প্রাণহানি ঘটে।সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল এডওয়ার্ড বুবা এই ঘটনাকে "গোয়েন্দা ব্যর্থতা" হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, "আমরা যদি এই প্রাণগুলো ফিরিয়ে আনতে পারতাম, তবে অবশ্যই তা করতাম।"
স্মৃতিকথায় ৩৬ বছর বয়সী ইসলামিক স্কুল শিক্ষক মাসুদ আবদুলরশিদ জানান,তার সাত বছরের মেয়ে হাবিবা এবং তার অনেক ছাত্রছাত্রীকে এই হামলায় হারিয়েছেন। তিনি বর্ণনা করেন, "প্রথম বোমা পড়ার পর আমরা দৌড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আহতদের সাহায্যের জন্য যখন আবার একত্রিত হলাম, তখন দ্বিতীয় বোমাটি পড়ে।" হাবিবার মৃত্যু তার জন্য সবচেয়ে বড় কষ্টের কারণ, কারণ তিনি ছিলেন তার পরিবারের সবচেয়ে যত্নশীল সন্তান।
চার বছরের ছোট মেয়ে জাহারাও এই হামলায় আহত হয়। তার পেটে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি হয়, যা এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। আবদুলরশিদ বলেন, "সরকার প্রথম দিকে চিকিৎসা দিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সেই সাহায্য বন্ধ হয়ে গেছে।"
২০ বছর বয়সী আয়েশা বুহারি তার তিন ছোট ভাইকে হারিয়েছেন। তার বাঁ হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে, যা এখনো সেরে ওঠেনি। তিনি বলেন, "আমি আমার ভাইদের শেষবার কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের মৃতদেহ দেখতে পাই।" এই ঘটনার পর থেকে তিনি দৈনন্দিন কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন।
তুদুনবিরি গ্রামে হামলার পর, নাইজেরিয়ার সরকার ও রাজ্য প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে।কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য গ্রামবাসীর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, যা নতুনকল করে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। ৫০ বছর বয়সী হাশিম আবদুল্লাহ বলেন, "আমার জমি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, অথচ আমাকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। আমি এখন কর্মহীন।"
নাইজেরিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশিম শেটিমা গ্রামটি পরিদর্শন করে বিচার ও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নিহতদের পরিবারকে ২৫ লাখ নাইরা (প্রায় ১,৫০০ মার্কিন ডলার) এবং আহতদের ৭.৫ লাখ নাইরা (প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার) ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। কিন্তু অনেক পরিবার বলছে, এই অর্থ যথেষ্ট নয়।
তুদুনবিরি গ্রামের ড্রোন হামলার ঘটনা নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীর ভুলের করুণ উদাহরণ। ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও শোক এবং শারীরিক কষ্ট নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। যদিও সরকার উন্নয়ন প্রকল্প এবং ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ নিয়েছে, তবে সুষ্ঠু বিচার ও আরও কার্যকর পদক্ষেপের দাবি রয়েই গেছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন