ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতি

গাজায় ঐতিহাসিক পরাজয় ইসরাইলের

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৯ এএম | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২২ এএম

 

ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা নৃশংস সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরাইল ও হামাস। বুধবার যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা।

 

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরুর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিল। একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি তার শপথ গ্রহণের আগে জিম্মি হস্তান্তর চুক্তি না হলে গুরুতর সমস্যা হবে। এ ছাড়া, জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে গড়ে তোলা ইসরাইলি সংগঠন 'হোস্টেজস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম'ও অবিলম্বে জিম্মি বিনিময় চুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিল।

 

সবদিক থেকে আসা চাপের মুখে গত শনিবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, হামাসের সঙ্গে জিম্মি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। এই চুক্তিকে ইসরাইলের ‘ঐতিহাসিক পরাজয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের শীর্ষনেতা খলিল আল-হাইয়া।

 

এক টেলিভিশন ভাষণে আল-হাইয়া বলেছেন, গাজায় ইসরাইল তার কোনো লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি। যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় চুক্তি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি ইসরাইলের জন্য এক বিশাল পরাজয়। জার্মানির ডিপিএ সংবাদ সংস্থার বরাতে আল-হাইয়া বলেন, আমাদের জনগণ দখলদারদের সব প্রকাশ্য ও গোপন পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে। আজ আমরা প্রমাণ করেছি যে, আমাদের প্রতিরোধ দখলদারদের কখনো জয়ী হতে দেবে না।

 

আল-হাইয়া আরও বলেন, আমাদের প্রতিরোধ আজ প্রমাণ করেছে যে, আমরা বেঁচে থাকার এবং নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দখলদারদের কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের দুর্বল করতে পারবে না। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, হামাস কখনো ইসরাইলি আগ্রাসন ভুলবে না বা ক্ষমা করবে না। আমাদের প্রতিটি রক্তবিন্দুর জন্য প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

 

নিউইয়র্ক টাইমস অনুসারে, আল হাইয়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে হামাসের আক্রমণকে সামরিক কৃতিত্ব এবং জনগণের জন্য গর্বের বিষয় হিসেবে প্রশংসা করেন। ওই হামলা গাজার যুদ্ধের সূচনা করে। আল-হাইয়ার এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, হামাস এখনও আপসহীন অবস্থানে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে।

 

হামাসের সিনিয়র নেতা খালিল আল-হাইয়া তার বক্তব্যে ইরান-সমর্থিত অন্যান্য মিত্র শক্তি, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের প্রশংসা করেন। যারা হামাসের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে। আল-হাইয়া আরও বলেন, হামাস ইসরাইল ধ্বংসের লক্ষ্যে অটল থাকবে এবং তারা জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদকে তাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখে যাবে। তিনি বলেন, আমাদের শত্রুরা কখনো আমাদের দুর্বলতার মুহূর্ত দেখবে না।

 

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতির সময় নির্ধারণ করেছে। এই চুক্তিতে শর্তের মধ্যে রয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে এবং হামাসের হাতে আটক বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

 

চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে ৩৩ জন ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস, যাদের মধ্যে সব নারী, শিশু ও ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষরা রয়েছেন। চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকরের বিষয়ে আলোচনাগুলো প্রথম ধাপের ১৬তম দিনের মধ্যে শুরু হবে। সেখানে অবশিষ্ট সব ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট মৃতদেহগুলোর ফেরত দেয়া এবং গাজা পুনর্গঠনের কাজ শুরুর কথা রয়েছে। এই কাজ মিশর, কাতার ও জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক
লস অ্যাঞ্জেলেসে এবার ‘আগুন টর্নেডোর’ আশঙ্কা
যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও গাজায় হামলা ইসরাইলের, নিহত অন্তত ৩০
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হামাস-ইসরাইল
যে সব শর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতি
আরও

আরও পড়ুন

টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক

টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক

এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার আইন বাতিল করতে প্রস্তাব

এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার আইন বাতিল করতে প্রস্তাব

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেবে না এলডিপি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেবে না এলডিপি

ফুডি অ্যাপে ডোমিনোজের পিৎজা অর্ডার করলেই ৪০% ছাড়!

ফুডি অ্যাপে ডোমিনোজের পিৎজা অর্ডার করলেই ৪০% ছাড়!

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে যা জানালেন দুই উপদেষ্টা

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে যা জানালেন দুই উপদেষ্টা

ভোরে মিলল রাস্তার পাশে শিশু সাফওয়ানের লাশ

ভোরে মিলল রাস্তার পাশে শিশু সাফওয়ানের লাশ

রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও আইএসপিতে ভ্যাট আরোপ থেকে পিছিয়ে আসতে পারে সরকার

রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও আইএসপিতে ভ্যাট আরোপ থেকে পিছিয়ে আসতে পারে সরকার

লস অ্যাঞ্জেলেসে এবার ‘আগুন টর্নেডোর’ আশঙ্কা

লস অ্যাঞ্জেলেসে এবার ‘আগুন টর্নেডোর’ আশঙ্কা

দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু

দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু

মোংলায় ভটভটি উল্টে ২ জন নিহত, আহত ২

মোংলায় ভটভটি উল্টে ২ জন নিহত, আহত ২

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ প্রকাশ

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ প্রকাশ

নাম ভাঙিয়ে তদবির-টেন্ডারবাজি: সতর্ক করলেন সারজিস

নাম ভাঙিয়ে তদবির-টেন্ডারবাজি: সতর্ক করলেন সারজিস

গুলশান থেকে ওবায়দুল কাদেরের ‘পালিত ছেলে’ গ্রেফতার

গুলশান থেকে ওবায়দুল কাদেরের ‘পালিত ছেলে’ গ্রেফতার

আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার

আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার

বায়ুদূষণে আজ সবার শীর্ষে ঢাকা

বায়ুদূষণে আজ সবার শীর্ষে ঢাকা

শৈলকুপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

শৈলকুপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়

বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়

ব্যাংক খাত নিপুন কারিগরের মতো যেভাবে ধ্বংস করেন এসকে সুর

ব্যাংক খাত নিপুন কারিগরের মতো যেভাবে ধ্বংস করেন এসকে সুর

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক বর্জন করবে লেবার পার্টি

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক বর্জন করবে লেবার পার্টি

দেশে ফিরতে চান মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া অভি

দেশে ফিরতে চান মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া অভি