ঢাকা   মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫ | ৭ মাঘ ১৪৩১

ট্রাম্পের অভিষেক নিয়ে ‘বিভক্ত’ আমেরিকানরা

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম | আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্রুত নির্বাহী পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন তার সমর্থকরা। অন্যদিকে সমালোচকরা তার পরিকল্পিত গণনির্বাসন, বৈচিত্র্য ও ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তি নীতিতে ফিরে যাওয়ায় উপহাস করেছেন।

 

গতকাল সোমবার (২০ জানুয়ারি) ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

দেশব্যাপী বহু আমেরিকানের রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে নিজেকে শান্তির দূত এবং ঐক্যের দূত হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করলেও দেশটি এখনও মেরুকরণে রয়েছে। কারণ তার বক্তৃতা তীব্র পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। তিনি অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং ফেডারেল সরকারকে পুনর্গঠনের জন্য একটি বড় এজেন্ডা চালু করার পরিকল্পনা কথা বলেছেন।

ট্রাম্প ২০২০ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের কাছে হেরে যান এবং তারপরে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করেন। তিনি তার নির্বাচনি প্রচারণায় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা, অভিবাসন আইন কঠোর করা এবং ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে "গভীর রাষ্ট্রীয়" ফেডারেল আমলাতন্ত্রকে হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান মার্কোসে সোমবার হোম ডিপোর একটি পার্কিং লটে কাজ খুঁজতে মাত্র দুজনকে দেখা গেছে। যদিও সেখানে সাধারণত অনেক অভিবাসী দিনমজুর জড়ো হন। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে ট্রাম্পের নীতিগুলি অভিবাসী শ্রমের ওপর নির্ভরশীল নির্মাণ ও কৃষি শিল্পকে ব্যাহত করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে ২৪ জন মারা গেছেন। সেখানকার বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প কীভাবে এই দাবানলের প্রতিক্রিয়া জানাবেন, যা হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং ১০ হাজারের বেশি কাঠামো ধ্বংস করেছে।

৬১ বছর বয়সী ডেনিস জোন্স বলেছেন, "আমি আশা করব যে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রতি তার সহানুভূতি থাকবে।"

অগ্নিকাণ্ডের কারণে ১১ দিনের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়ি খালি করে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্যান্ডি বার্চ বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন এবং তার সফরের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

এমন এক সময়ে ট্রাম্প ওভাল অফিসে বসেছেন যখন দেশটিতে সুদের হার কমছে এবং কর্মসংস্থানের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটছে। কিন্তু অনেক ভোটার বাইডেনের অর্থনৈতিক নীতিতে অসন্তুষ্ট ছিলেন। ব্যবসায়ী ও রক্ষণশীল ভোটাররা ট্রাম্পকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

শিকাগোর দক্ষিণাঞ্চলের এনগলউড এলাকার বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী জামাল জনসন বলেন, তিনি ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন কারণ ট্রাম্প ডিজিটাল মুদ্রার সমর্থক। জনসন বলেন, "অর্থনীতি এবং বর্তমান পরিস্থিতির কারণে মানুষ আতঙ্কিত।"

টেক্সাসের হিউস্টনের বাইরের বাসিন্দা জ্যাক জোনস বলেছেন, তিনি ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে "চরম উদ্বিগ্ন", বিশেষত নারীর অধিকার নিয়ে।

জোনস বলেন, "ট্রাম্পকে এমন উপদেষ্টারা ঘিরে রেখেছেন যারা নিঃস্বার্থ নয় এবং ধনী হওয়ার জন্য আমাদের ধ্বংস করতে চায়।"

নারীর অধিকারের প্রশ্নে ট্রাম্প সমালোচিত হয়ে আসছেন। তার নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন সুপ্রিম কোর্ট বিচারকের মাধ্যমে ২০২২ সালে রো বনাম ওয়েড মামলার রায় বাতিলের ফলে নারীর গর্ভপাতের অধিকার ফেডারেল স্তরে প্রত্যাহার হয়।

গত শনিবার হাজার হাজার মানুষ ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের অভিষেক এবং নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হন। তবে এবারের প্রতিবাদ ২০১৭ সালের প্রথম মেয়াদের চেয়ে অনেক ছোট ছিল।

ট্রাম্প তার অভিষেক বক্তৃতায় নিজেকে "শান্তি রক্ষক" এবং "ঐক্যবাদী" হিসেবে উল্লেখ করলেও, নাগরিক অধিকার নেতারা এতে কটাক্ষ করেছেন। কালার অব চেঞ্জ পিএসির নির্বাহী পরিচালক জামার ব্রাউন বলেন, "তিনি ঠিক তার বিপরীত কাজ করবেন, বিশেষত তার রক্ষণশীল সমর্থকদের সন্তুষ্ট করতে।"

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অভিষেক দিনটি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে এটি মার্কিন সমাজের ভিন্ন ভিন্ন অংশে আশার আলো এবং আশঙ্কার ছায়া ফেলেছে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ব্রিকসে যোগদানের আমন্ত্রণ পর্যালোচনা করছে সউদী আরব
পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ট্রাম্পের
পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান ট্রাম্প
শপথ নিয়েই যেসব নির্বাহী আদেশ সই করলেন ট্রাম্প
ইলন মাস্কের ‘নাৎসি’ অঙ্গভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক
আরও

আরও পড়ুন

বৈষম্যবিরোধীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারামারি, তরুণীসহ আহত ৭

বৈষম্যবিরোধীদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মারামারি, তরুণীসহ আহত ৭

সবজি দেখে লিখলো খাতায়

সবজি দেখে লিখলো খাতায়

আবারও শীতের কবলে সৈয়দপুর

আবারও শীতের কবলে সৈয়দপুর

লাকসাম আল-আমিন ইনস্টিটিউটে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা

লাকসাম আল-আমিন ইনস্টিটিউটে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা

ব্রিকসে যোগদানের আমন্ত্রণ পর্যালোচনা করছে সউদী আরব

ব্রিকসে যোগদানের আমন্ত্রণ পর্যালোচনা করছে সউদী আরব

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের গণসমাবেশ

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের গণসমাবেশ

সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৬ নেতা-কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার

সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৬ নেতা-কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের মতবিনিময়

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের মতবিনিময়

মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের নির্বাচন  সম্পন্ন

মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী এসোসিয়েশনের নির্বাচন সম্পন্ন

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে বহিষ্কারের দাবিতে মহিলা দলের ঝাড়ু মিছিল

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে বহিষ্কারের দাবিতে মহিলা দলের ঝাড়ু মিছিল

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ট্রাম্পের

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ট্রাম্পের

সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপকগণকে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শুভেচ্ছা

সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপকগণকে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শুভেচ্ছা

সোনারগাঁওয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক

সোনারগাঁওয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার সাংবাদিক

আবাহনীর ৬ মিনিটের ঝড়ে এলোমেলো ফকিরাপুল

আবাহনীর ৬ মিনিটের ঝড়ে এলোমেলো ফকিরাপুল

পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান ট্রাম্প

পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চান ট্রাম্প

ইসলামি দলগুলোর ঐক্য চায় জামায়াতের আমির ও চরমোনাই পীর

ইসলামি দলগুলোর ঐক্য চায় জামায়াতের আমির ও চরমোনাই পীর

শপথ নিয়েই যেসব নির্বাহী আদেশ সই করলেন ট্রাম্প

শপথ নিয়েই যেসব নির্বাহী আদেশ সই করলেন ট্রাম্প

বাগবাড়ীতে ১ হাজার পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

বাগবাড়ীতে ১ হাজার পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ

ইলন মাস্কের ‘নাৎসি’ অঙ্গভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক

ইলন মাস্কের ‘নাৎসি’ অঙ্গভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক

খুবি কেন্দ্রে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে নানা সিদ্ধান্ত

খুবি কেন্দ্রে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্নের লক্ষ্যে নানা সিদ্ধান্ত