হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফের নিহতের খবর নিশ্চিত করল সংগঠনটি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩ এএম | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৫ এএম

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। ইসরায়েল গত বছরের জুলাই মাসেই তার মৃত্যুর দাবি করেছিল, তবে হামাস এতদিন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। পরে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দেইফের নিহতের খবর প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করে হামাস। হামাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জ্যেষ্ঠ নেতা বরাবরই প্রচার থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করতেন। ঘনিষ্ট সহচররা ছাড়া তার হদিস কেউ জানতে পারত না।

 

এছাড়া হামাসের সামরিক শাখার উপপ্রধান মারওয়ান ইশার নিহত হওয়ার খবরও নিশ্চিত করেছে হামাস। যদিও এই কমান্ডারের নিহতের খবর গত বছরের মার্চে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মূলত মোহাম্মদ দেইফ হামাসের সামরিক শাখা ইজ আল-দিন আল-কাসাম ব্রিগেডের নেতৃত্ব ছিলেন। তিনি এমন একজন ছায়াময় ব্যক্তিত্ব যিনি ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘দ্য মাস্টারমাইন্ড’ এবং ইসরায়েলিদের কাছে ‘দ্য ক্যাট উইথ নাইন লাইভস’ নামে পরিচিত।

 

বিবিসি গত বছর এক প্রতিবেদনে বলেছিল, মোহাম্মদ দেইফ ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে এবং ইসরায়েলিদের কাছে ‘মৃত্যুর মানুষ’ বা ‘নয়টি জীবন নিয়ে জন্মানো যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচিত। ইসরায়েলের ফেরারী সন্ত্রাসী তালিকায় তার নাম ছিল সবার ওপরে। দেইফকে হত্যার জন্য ইসরায়েল বছরের পর বছর হন্যে হয়ে খুঁজেছে।

 

এর আগে ২০২১ সালে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে লড়াই চলাকালে মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার চেষ্টা করেছিল ইসরায়েল, কিন্তু তাকে হত্যা করা যায়নি। তখন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র হিডাই যিলবারম্যান নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, “এই পুরো অভিযান চলার সময় আমরা মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার চেষ্টা করেছি।” গত দুই দশকে মোহাম্মদ দেইফকে হত্যার জন্য সাতবার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছিল ইসরায়েল। দেইফকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই ইঁদুর-বেড়াল খেলা নিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীও ছিল বেশ হতাশ।

 

মোহাম্মদ দেইফ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজা থেকে জীববিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি অভিনয় এবং থিয়েটার প্রতি আগ্রহের জন্য পরিচিত ছিলেন, আর সেখানে তিনি একটি শিল্পী দলও গঠন করেছিলেন। যখন হামাসের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়, তিনি বিনা দ্বিধায় এই দলে যোগ দেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাকে ১৯৮৯ সালে গ্রেপ্তার করে, আর হামাসের সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করার অভিযোগে বিনা বিচারে ১৬ মাস কারাগারে কাটান তিনি।

 

মোহাম্মদ দেইফ সম্পর্কে যা জানা যায়, তা মূলত ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে। এসব রিপোর্ট অনুসারে, মোহাম্মদ দেইফের জন্ম ১৯৬০ এর দশকে গাজার খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে। গাজা তখন ছিল মিসরের দখলে। জন্মের সময় তার নাম রাখা হয়েছিল মোহাম্মদ ডিয়াব ইব্রাহীম আল-মাসরি। বহু দশক ধরে চলতে থাকা ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের মধ্যে কীভাবে তিনি বেড়ে উঠেছেন, সে সম্পর্কেও জানা যায় খুব কম। হামাস যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন মোহাম্মদ দেইফ একজন তরুণ। ১৯৮০-এর দশকের শেষে তিনি হামাসে যোগ দেন।

 

হামাসের যে বিখ্যাত ‘কাসাম রকেট’, সেটির পরিকল্পনা এবং তৈরির কৃতিত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ দেইফকে। গাজার ভূগর্ভে যেসব টানেল খনন করা হয়েছে, সেগুলোও মোহাম্মদ দেইফের পরিকল্পনা। তিনি বেশিরভাগ সময় এসব টানেলের মধ্যে কাটাতেন বলেও শোনা যায়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর চোখ এড়িয়ে এখান থেকেই তিনি হামাসের সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

 

হামাসের সামরিক শাখার অন্যতম কৌশলবিদ দেইফ গাজার সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন, যা হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে প্রবেশে সহায়তা করেছিল। এছাড়াও, হামাসের প্রধান অস্ত্র কাসাম রকেট তৈরির পেছনেও তার বড় ভূমিকা ছিল। ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যার ফলে ১৫ মাসের যুদ্ধে ৪৭,৪৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

 

এদিকে, ১৯ জানুয়ারি থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকে ১৫ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ৪০০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে কেউ দীর্ঘমেয়াদী সাজাপ্রাপ্ত, কেউ বিনা অভিযোগে আটক ছিল। মুক্তিপ্রাপ্তদের বেশিরভাগ পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজায় ফিরে গেছেন, তবে ৭০ জনের বেশি বন্দিকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

‘মুসলিমদের সঙ্গে শত্রুতা বন্ধ করুন’— ভারতের প্রতি ওমানের গ্র্যান্ড মুফতির আহ্বান
২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির রেকর্ড দেখেছে পৃথিবী
ইতালির মাউন্ট এটনায় ফের অগ্ন্যুৎপাত, ছড়াচ্ছে উত্তপ্ত লাভা-ছাই
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সউদী আরবের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক চুক্তি
সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প
আরও
X
  

আরও পড়ুন

‘সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক’

‘সাম্য হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক’

মাদক আস্তানায় পরিণত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান: হাসনাত আবদুল্লাহ

মাদক আস্তানায় পরিণত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান: হাসনাত আবদুল্লাহ

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে পরিবর্তন করছে সরকার

পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে পরিবর্তন করছে সরকার

বাংলাদেশের নির্বাচন পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ বিষয়: প্রেস সচিব

বাংলাদেশের নির্বাচন পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ বিষয়: প্রেস সচিব

কাশিয়ানীতে ছিনতাই হওয়া তেলবাহী ট্রাক উদ্ধার

কাশিয়ানীতে ছিনতাই হওয়া তেলবাহী ট্রাক উদ্ধার

‘মুসলিমদের সঙ্গে শত্রুতা বন্ধ করুন’— ভারতের প্রতি ওমানের গ্র্যান্ড মুফতির আহ্বান

‘মুসলিমদের সঙ্গে শত্রুতা বন্ধ করুন’— ভারতের প্রতি ওমানের গ্র্যান্ড মুফতির আহ্বান

২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির রেকর্ড দেখেছে পৃথিবী

২০২৪ সালে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির রেকর্ড দেখেছে পৃথিবী

ইতালির মাউন্ট এটনায় ফের অগ্ন্যুৎপাত, ছড়াচ্ছে উত্তপ্ত লাভা-ছাই

ইতালির মাউন্ট এটনায় ফের অগ্ন্যুৎপাত, ছড়াচ্ছে উত্তপ্ত লাভা-ছাই

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সউদী আরবের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক চুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সউদী আরবের ৩০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক চুক্তি

সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

সিরিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

গাজায় যুদ্ধ থামবে না, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

গাজায় যুদ্ধ থামবে না, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি

কালিগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

কালিগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল

রিয়াল ছেড়ে কেন ব্রাজিলে আনচেলত্তি

রিয়াল ছেড়ে কেন ব্রাজিলে আনচেলত্তি

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি ছাত্রদল নেতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি ছাত্রদল নেতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

এই প্রথমবারের মতো  ‘বাবার কারাবাস’ নিয়ে প্রকাশ্যে  কথা বললেন ইমরান খানের সন্তানদ্বয়

এই প্রথমবারের মতো ‘বাবার কারাবাস’ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেন ইমরান খানের সন্তানদ্বয়

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা