ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কোরআন মজীদের বক্তব্যে সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগা-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

২১ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন : যে ব্যক্তি আমার উপদেশ (ও পথনির্দেশ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে সংকীর্ণ জীবন। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাব অন্ধ করে। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে উঠালেন কেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। তিনি বলবেন, এভাবেই তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ তাই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে। (সূরা ত্বহা : ১২৪-২৫)।

কিয়ামতের দিন যাকে অন্ধ করে উঠানো হবে এবং যাকে আল্লাহ তার রহমত ও দয়া থেকে সরিয়ে রাখবেন তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে আছে? লক্ষ্য করার বিষয় হলো, আল্লাহ তায়ালার ঘোষণায় আছে তার দুনিয়ার জীবনও হবে সংকীর্ণ। আর যে ব্যক্তি সংকীর্ণ ও সংকটময় জীবনের অধিকারী হবে, সে তো দুনিয়াবী দৃষ্টিতেও হবে দুর্ভাগা।

তার দুনিয়ার জীবন সংকটময় কীভাবে হবে, সে বিষয়ে আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী (রাহ.) লেখেন : ‘বাহ্যিকভাবে যদিও তার কাছে বিপুল ধন-সম্পদ ও ভোগ-বিলাসের সামগ্রী থাকে, তবে তার অন্তরে অল্পেতুষ্টি ও তাওয়াক্কুলের গুণ না থাকার কারণে সর্বাবস্থায় কেবল দুনিয়ার লোভ, অধিক সম্মান, সম্পদ ও উন্নতি লাভের চিন্তা এবং যে কোনো সময় অভাবে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কায় সে থাকে উৎকণ্ঠিত।

সে কখনোই অর্থার্জনের লোভ-লালসা থেকে বের হতে পারে না। উপরন্তু বয়সের আধিক্য, শারীরিক দুর্বলতা ও নিশ্চিত মৃত্যুর চিন্তা এবং যে কোনো প্রেক্ষাপটে সকল ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় তার জন্য স্বতন্ত্র অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্য তাদের অনেককেই দেখা যায়, রাত-দিনে মাত্র দুয়েক ঘণ্টা কিংবা সর্বোচ্চ তিন চার ঘণ্টা ঘুমাতে পারে। অনেকে নানা দুশ্চিন্তায় অসহ্য হয়ে জীবনের উপর মৃত্যুকে প্রাধান্য দিয়ে আত্মহত্যা করে।

কোরআন ও হাদিসের বক্তব্য এবং বাস্তব জীবনের বহু অভিজ্ঞতা এ সত্যের সাক্ষ্য দেয় যে, দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর জিকির ও তাঁর নির্দেশ পালন ছাড়া কিছুতেই কারো অন্তরে সুখ ও শান্তি অর্জন হয় না’। (তাফসিরে উসমানী, পৃষ্ঠা : ৪২৭ [ঈষৎ পরিবর্তিত])।

এখানে সংকীর্ণ জীবনের যে ব্যাখ্যা উল্লেখিত হয়েছে তা আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখার মতো। একটু খেয়াল করলেই বুঝে আসবে আমাদের জীবনও তেমনই সংকীর্ণ কি না, যে সংকীর্ণতার কারণ হলো আল্লাহর স্মরণ ও নসিহত-বিমুখতা!

আরেক আয়াতে প্রকৃত দুর্ভাগার কর্ম ও পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তায়ালা বলেন : যে ব্যক্তি (আল্লাহকে) ভয় করে সে অবশ্যই উপদেশ গ্রহণ করবে। আর তা থেকে দূরে থাকবে কেবল সেই ব্যক্তি, যে চরম দুর্ভাগা। যে প্রবেশ করবে মহাঅগ্নিতে। তারপর সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না। (সূরা আলা : ৯-১৩)।

এখানেও দুর্ভাগা বলা হয়েছে এমন ব্যক্তিকে, যে আল্লাহর হেদায়েত ও নির্দেশনা মোতাবেক জীবনযাপন করে না। দ্বীনি উপদেশ ও নসিহত থেকে দূরে থাকে। ঈমান, আমল, ইবাদত ও আখেরাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সবশেষে তার পরিণতি বলা হয়েছে, মহাঅগ্নি অর্থাৎ জাহান্নাম।

প্রকৃত সৌভাগ্যবান ও দুর্ভাগাদের সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ভাষায় আল্লাহ তায়ালা বলেন : অতএব আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিলাম লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে। তাতে নিপতিত হবে কেবল সেই ব্যক্তি, যে চরম দুর্ভাগা। যে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর তা থেকে অবশ্যই রক্ষা পাবে সেই ব্যক্তি, যে পরম মুত্তাকি। যে তার ধন-সম্পদ দান করছে আত্মশুদ্ধির জন্য। (সূরা লাইল : ১৪-১৮)।

এখানে দুর্ভাগার বিপরীতে আনা হয়েছে মুত্তাকির কথা। বলা হয়েছে, মুত্তাকি সেই লেলিহান অগ্নি থেকে রক্ষা পাবে, যাতে নিপতিত হবে কেবল চরম দুর্ভাগা। এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় ভাগ্যবান ও সৌভাগ্যবান কারা এবং হতভাগা ও দুর্ভাগা কারা। জাগতিক বিচারে যে অসুখী, অসচ্ছল, গরিব, অতি সাধারণ, মাজলুম ও নিঃস্ব, প্রকৃত বিচারে এবং আখেরাতের হিসেবে সেও হতে পারে চিরসফল, চিরসুখী ও মহাসৌভাগ্যবান।

অপরদিকে জাগতিক বিচারে যে বিপুল ধন-সম্পদের মালিক, উচ্চ পদ ও পদবীর অধিকারী, ক্ষমতা ও লোকবলে অতি মাননীয়, প্রকৃত বিচারে এবং আখিরাতের হিসেবে সেও হতে পারে চরম ব্যর্থ, চিরদুঃখী ও নিতান্ত দুর্ভাগা। সেজন্য প্রকৃত সৌভাগ্যবান হওয়ার চেষ্টা করা এবং দৃষ্টিভঙ্গি শোধরানো আমাদের জরুরি কর্তব্য। সবকিছু কেবলই দুনিয়াবী হিসেবে বিবেচনা করার মানসিকতা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২
আরও

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা

আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা