রমজান মাসের রোজার হকিকত
২৫ মার্চ ২০২৩, ১০:২৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৫০ এএম

ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের মধ্যে ঈমান, নামাজ ও জাকাতের পরই রোজার স্থান। হাদিস শরীফে এসেছে : পাঁচটি স্তম্ভের ওপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত, আল্লাহ তায়ালা এক বলে স্বীকার করা, নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, রমজানের রোজা রাখা ও হজ পালন করা’। (সহিহ মুসলিম ১/৩২)। সুতরাং রমজানের পূর্ণ মাস রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার’। (সূরা বাকারা : ১৮৩)।
শরয়ী ওজর ছাড়া যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি রোজাও পরিত্যাগ করে সে নিকৃষ্ট পাপী। দ্বীনের মৌলিক ফরজ লঙ্ঘনকারী এবং ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারীরূপে সে পরিগণিত হবে। আর এ কাজ সে রোজার যে মঙ্গল ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে তা কস্মিণকালেও পাবে না। এমনকি এ রোজার কাজা করে নিলেও তা ফিরে পাবে না। হাদিস শরীফে এসেছে ‘যে ব্যক্তি কোনো ওজর বা অসুস্থতা ব্যতিরেকে রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে তবুও ওই এক রোজার ক্ষতি পূরণ হবে না’। (জামে তিরমিজি : ৭২৩)।
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, আমাদের সমাজে অনেক সবল-সুঠাম দেহের অধিকারী ব্যক্তিও অকারণে, সামান্য ছুতায় অসুস্থ হওয়ার অমূলক আশঙ্কায় রোজা পরিত্যাগ করে। এতে তারা আখেরাতের কত বড় ক্ষতি নিজের ওপর টেনে নিচ্ছে তা একটু ভেবেও দেখে না।
রোজা এমন একটি ইবাদত যা বাহ্যত কষ্টকর হলেও তার প্রচলন ছিল সর্বকালে। হযরত আদম (আ.)-এর যুগ থেকে শেষ নবী (সা.) পর্যন্ত সকল নবীর উম্মতের ওপরই তা ফরজ ছিল। (রূহুল মাআনী ২/৫৬)। অবশ্য পূর্বযুগে রোজার ধরন ছিল বিভিন্ন প্রকৃতির। রোজা রাখার পদ্ধতির ভিন্নতা ছাড়াও ফরজ রোজার সংখ্যাও বিভিন্ন রকম ছিল। প্রাথমিক অবস্থায় উম্মতে মুহাম্মদীর ওপরও কেবলমাত্র আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজার ফরজ বিধান আসার পর আশুরার রোজা ফরজ হওয়ার হুকুম রহিত হয়ে যায়। (মাআরিফুস সুনান ৫/৩২৩)।
রোজার হেকমত তথা অন্তনির্হিত তাৎপর্য সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে একটি কথা ভালোভাবে জানা থাকা দরকার। তা এই যে, মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তায়ালা ও মানুষের মাঝে সম্পর্ক হলো মহান স্রষ্টা ও ক্ষুদ্র সৃষ্টি এবং মহা মুনিব ও সাধারণ দাসের সম্পর্ক। এ সম্পর্কের সুস্পষ্ট দাবি হলো, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বিশ্ব প্রতিপালক স্রষ্টার যে কোনো নির্দেশ পালন করতে মানুষ সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
ওই নির্দেশের হেকমত (তাৎপর্য) তার বুঝে আসুক আর নাই আসুক। সুতরাং মহান আল্লাহ তায়ালা যত প্রকার ইবাদতের নির্দেশ দিবেন সেগুলোর কোনো কারণ বা তাৎপর্যের পিছনে না পড়ে তৎক্ষণাৎ নতশিরে তা মেনে নেওয়াই হচ্ছে বান্দার দায়িত্ব।
বলাবাহুল্য, শরীয়ত নির্দেশিত কোনো ইবাদতই তাৎপর্যহীন বা যুক্তিবিরোধী নয়। তবে সব কিছুর যুক্তি বা হেকমতই যে বান্দার জানা থাকবে বা বান্দার জ্ঞান-বুদ্ধি তাকে স্পর্শ করতে পারবে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে অতি সামান্য জ্ঞানই দান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : তোমাদেরকে অতি সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। (সূরা আল ইমরান : ৮৫)।
আল্লাহ রাববুল আলামীনের নির্দেশনসমূহে কত হেকমত, কত কারণ এবং কত উদ্দেশ্যই থাকতে পারে, বান্দার কত কল্যাণই তাতে নিহিত থাকতে পারে। অসীম জ্ঞানের অধিকারী সে সত্তার নির্দেশনসমূহের তাৎপর্য সসীম জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কতই বা বুঝতে পারবে! তবুও ইসলামী প-িতগণ বিভিন্ন ইবাদতের বিভিন্ন ধরনের হেকমত বর্ণনা করেছেন। রোজার ব্যাপারেও বিভিন্ন হেকমতের কথা তাঁরা বলেছেন। যদিও শরীয়তের নির্দেশ মান্য করা এ সকল হেকমত বুঝে আসার সাথে সম্পর্কিত নয় তথাপি সম্মানিত পাঠকম-লীর কৌতুহল নিবারণের উদ্দেশ্যে নিম্নে রোজার দুই-একটি হেকমত সম্পর্কেও আলোকপাত করা হলো।
‘আল্লাহ তায়ালা মানুষের স্বভাবে যে ফেরেশতা সুলভ বৈশিষ্ট্য চরিত্রে গচ্ছিত রেখেছেন, তার উন্নতি ও উৎকর্ষসাধন এবং নফস ও প্রবৃত্তির দমন ও নিবৃত্তির অন্যতম মাধ্যম হলো রোজা। কানা’আত, আত্মশুদ্ধি, সবর ও শোকর, তাকওয়ার মতো বৈশিষ্ট্যগুলোর উন্নতি ও বিকাশে রোজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। উপরন্তু রোজার মাধ্যমে মানুষ উদার ও প্রবৃত্তিরথ জৈবিক তাড়না হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে ঊর্ধ্ব জগৎ তথা আপন স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগসূত্র স্থাপনে সক্ষম হয়।
তাছাড়া নিরেট চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বছরের কিছু দিন অবশ্যই পানাহার বর্জন করা উচিত। এটি স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ উপকারী। তাই হিন্দু-খ্রিস্টান সকল ধর্মেই রোজার মতো উপবাস করার প্রচলন রয়েছে। (যদিও ইসলামের রোজার সাথে সেসব উপবাসের পদ্ধতিগত বহু পার্থক্য রয়েছে)। (আরকানে আরবাআ : ২৬৪)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মোরেলগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত সাফায়েতের পরিবারের পাশে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ব্যাপক দরপতনে শেয়ারবাজার, দু’দিন এভাবে থাকলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বাজার

পরিচয় মেলেনি সেই নবজাতকের, বেড়ে উঠবে শিশু নিবাসে

বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় পাক-ভারত যুদ্ধ কাম্য নয়: ববি হাজ্জাজ

পাকিস্তানে ভারতের হামলা যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়েছে: তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মাদারীপুরের ডাসারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে খাটের নীচ থেকে উদ্ধার ভিডিও ভাইরাল

সখিপুরে এক ভূয়া পশু চিকিৎসককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল জরিমানা

ইউনাইটেডে 'ভালো আছেন' গারাঞ্চো

এটিএম আজহারের মুক্তি না দিলে মার্স পর জাস্টিস কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে

গাজীপুরে বাজারে নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে অস্ত্রসহ মিছিল, আটক ২

টেস্টকে বিদায় বললেন রোহিত

চুয়াডাঙ্গার ভারত সীমান্তবর্তী হরিপুর থেকে ৩টি স্বর্ণের বারসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি

রকেট ‘বিদ্রোহী’ নামক বানিজ্যিক ভিত্তিতে দেশের প্রথম ময়মনসিংহে প্রদর্শন

শ্রমিক আন্দোলন: আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা ও গঠনমূলক সংলাপের প্রতিশ্রুতি বিএটি বাংলাদেশের

আপাতত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না সরকার: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা

বিজিএমইএ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলো ফোরাম জোট

তিন দফা দাবিতে ৯ জেলায় ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

কীসের অপারেশন সিঁদুর, মুখ দিয়ে খারাপ কথা বের হবে : কবীর সুমন

বিশ্ব যুব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ইয়াজদানির স্বর্ণ জয়

বজ্রপাতের ঝুঁকি : সচেতনতার বিকল্প নেই