আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাকাতের ভূমিকা

Daily Inqilab ড. ওয়ালীয়ুর রহমান খান

১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ পিএম

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাকাতব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক করার গুরুত্ব অপরিসীম। সকল মুসলিম বিত্তবান নর-নারীর ওপর সঠিকভাবে হিসাব করে জাকাত প্রদান করা ফরজ। জাকাত অস্বীকার করা কুফরি এবং সঠিকভাবে আদায় না করা ফাসেকি ও কবিরা গুনাহ। যে বছরের যে দিনটিতে নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হবে, হিজরি সনের হিসেবে পরবর্তী সনের সেই দিনটি তার জাকাত প্রদানের সময় বা বর্ষপূর্তি। বছর পূর্ণ হলেই জাকাত প্রদান করা ফরজ। রমজানের অপেক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করলে জাকাত খেলাপি গণ্য হয়ে পরকালের শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

যারা ধনী হওয়ার সময় কাল বুঝেননি বা মনে রাখেননি তারা রমজানের কোনো একটি দিনকে জাকাত প্রদানের সময় নির্ধারণ করেছেন। তারাও ঐ দিনই হিসাবে বসবেন। তখন মোট অর্থসম্পদে কিছু অংক প্রবেশ করলে তা জাকাতযোগ্য হবে আর কিছু টাকা বের হয়ে গেলে তা জাকাতের হিসাবে আসবে না।

সাহিবে নিসাব অর্থাৎ হিজরি বছরান্তে কারো মালিকানায় সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা তার মূল্য সোনার বর্তমান বাজার মূল্যে আনুমানিক ৬/৭ লাখ টাকা আর রুপার হিসাবে ৭৫-৮০ হাজার টাকা বা সমমূল্যের ব্যবসা পণ্য থাকলে মোটের ওপর শতকরা ২.৫ ভাগ জাকাত দিতে হবে। গরিবদের উপকার বিবেচনায় রুপার নিসাব ধরে জাকাত প্রদান করা ইসলামের মূলনীতি ও জাকাত ফরজ হওয়ার উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় ফকীহগণ রুপার হিসেবে জাকাত দিতে বলেছেন।

তাই ররুƒপার হিসাবে নগদ অর্থ দিয়ে এমনভাবে জাকাত প্রদান করা উচিত যেন গ্রহীতা তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। খাদ্য ও ওষুধ ক্রয়, ঘর নির্মাণ, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ কিংবা মেয়ে বিয়ে দেয়া অনেক জরুরি বিষয় একাধিক শাড়ি লুঙ্গির চেয়ে। জাকাত প্রদান করার ক্ষেত্রে তালিবে ইলম ও আল্লাহর পথে নিবেদিত ব্যক্তিগণকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য আল্লাহ্ তাআলা আদেশ করেছেন।

সূরা বাকারার ২৭৩ আয়াতে আছে : ‘ওই সব দরিদ্র মানুষের জন্য যারা আল্লাহ্ তাআলার পথে আবদ্ধ হয়ে আছে, বাইরে সমাজে যখন তখন বের হতে পারে না, তাদের অমুখাপেক্ষী ভাব দেখে অজ্ঞ লোকেরা তাদের ধনী মনে করে। তাঁরা মানুষের নিকট হাত পেতে চায় না। তোমরা তাদের চিনবে তাদের চেহারা অবয়ব অনুধাবন করে। তোমরা যা কিছু দান করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।’

পিতা-মাতা ও তদূর্ধ্ব এবং পুত্র-কন্যা ও অধস্তন ব্যতীত সব আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যারা নিসাবের মালিক নন, জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের প্রথম অগ্রাধিকার। এরপর আল্লাহ্ তাআলার পথে ও প্রতিবেশীর হক। ঈমান ও নামাজের দাওয়াতের মতো জাকাতের দাওয়াত দেয়া আমাদের কর্তব্য। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের অধীনে জাকাত ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে কয়েক বছর চললে প্রচার ও প্রসার লাভ করবে। এর দ্বারা দেশ ও সমাজ এমন সচ্ছল হবে যে, পাঁচ-ছয় বছর পর জাকাত নেয়ার জন্য লোক খুঁজতে দীনদার বিত্তশালীদের গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হতে পারে। মুসলিম উম্মাহর এখন প্রথম কাজ আমানতদার ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি, জাকাত ও দানের বিশাল তহবিল গঠন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গতির সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীর চালকের আসনগুলো আয়ত্তে আনা। অথবা চালকের আসনে অধিষ্ঠিত বনী আদমগুলোকে প্রয়োজন অনুযায়ী ঈমান হিদায়াত ও তাকওয়ার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা।

জাকাতের অন্যতম উদ্দেশ্য জনগণকে অভাব-অনটন থেকে মুক্ত করে সচ্ছল বানানো। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জাকাতের ভ‚মিকা অপরিসীম। অভাব দূর হলে অপরাধ অর্ধেক হ্রাস পাবে। আর জাতীয় চরিত্র ও স্বভাব ভালো হলে বাকি অর্ধেক অপরাধ ও অনাচার দূর হবে। সমাজ হবে শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণময়।

 

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
সন্তানদের নেক আমলের উৎসাহ প্রদান
আরও
X
  

আরও পড়ুন

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর :  বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

নোয়াখালীতে কারাগারের ১৮ ফুট দেয়াল টপকে আসামির পালানোর চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

নোয়াখালীতে কারাগারের ১৮ ফুট দেয়াল টপকে আসামির পালানোর চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

‘বিতর্কিত কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে’

‘বিতর্কিত কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে’

কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় মামলা

কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় মামলা