কুরআনের ডাক ঘরে প্রবেশের আগে অনুমতি নাও
০৯ মে ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৩, ১২:০৪ এএম
আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারীমে মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, কারো ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি চাও। হুট করে কারো ঘরে ঢুকে যেও না। কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! নিজ গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না অনুমতি পাও ও তার বাসিন্দাদেরকে সালাম দাও। এ পন্থাই তোমাদের জন্য শ্রেয়। আশা করা যায়, তোমরা লক্ষ্য রাখবে। তোমরা যদি তাতে কাউকে না পাও, তবুও যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হয়, তাতে প্রবেশ করো না। তোমাদেরকে যদি বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তবে ফিরে যেও। এটাই তোমাদের পক্ষে শুদ্ধতর। তোমরা যা কিছুই কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। (সূরা নূর : ২৭-২৮)।
এ আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশ করার আগে অনুমতি চাইতে ও সালাম দিতে বলা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করলে সেই ঘরের লোকদের নানারকম কষ্ট ও অসুবিধা হয়। এতে ইসলামের ফরজ বিধান পর্দা ও সতরও লঙ্গিত হয়। এটা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার সয়লাবের অন্যতম বড় কারণ।
অনুমতি কীভাবে গ্রহণ করতে হবে আয়াতে তাও শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। নিয়ম হলো, বাইরে থেকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলবে। শুধু গলা খাকারি বা এটা সেটা বলে আওয়াজ দেবে না। যদি মনে হয় ঘরের ভেতরে যে আছে, সে সালাম শুনবে না, তবে করাঘাত করবে বা বেল চাপবে। তারপর কেউ বেরিয়ে এলে তাকে আগে সালাম দেবে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি না মিলবে, ততক্ষণ প্রবেশ করবে না।
আবার দীর্ঘক্ষণ ধরে করাঘাত করতে থাকবে না। দুই-তিনবার আওয়াজ দেয়ার পরেও যদি ঘরের লোকদের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া না যায়, তাহলে ফিরে আসবে। অনেকের স্বভাব হলো, দুই-তিনবার আওয়াজ করার পরে যদি ভেতর থেকে সাড়া না আসে, তাহলে ‘ঘরে কেউ আছে কি না’ জিজ্ঞেস করতে করতে ঘরের ভেতরে ঢুকে যায় অথবা উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে। এতে ঘরের লোকদের বাড়তি অসুবিধায় পড়তে হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের এ সংক্রান্ত অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে তারা কারো ঘরে যাওয়ার পরে উচ্চস্বরে সালাম দিয়েছেন, জবাব না পেলে তিনবার সালাম দিয়েছেন। তারপরও উত্তর না এলে ফিরে গেছেন। উমর (রা.)-এর ঘরে গিয়ে আবু মূসা আশআরী (রা.)-এর সালাম দেয়া এবং সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর ঘরে গিয়ে নবীজির সালাম দেয়ার ঘটনা দু’টি তো অনেক প্রসিদ্ধ।
হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, সালাম না দিয়ে শুধু ‘আমি’ বলাটা রাসূলুল্লাহ (সা.) অপছন্দ করতেন। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, জাবের (রা.) নবীজির ঘরে গিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইলে নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, কে? জাবের (রা.) বললেন ‘আমি’। তার এই কেবল ‘আমি’ বলাটা নবীজি অপছন্দ করেছিলেন। অবশ্যই সালাম দেয়ার পরে সাহাবায়ে কেরাম প্রয়োজন হলে নিজের নাম বলতেন। একই ঘরের লোকদেরও অন্যের ব্যক্তিগত কামরায় প্রবেশের আগে অনুমতি নেয়া উচিত। এক্ষেত্রেও সালাম দেয়া সর্বোত্তম। কোনো রকম সতর্ক না করেই অন্যের কামরায় হুট করে ঢুকে পড়া কিছুতেই উচিত নয়।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীগণ এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখনও সাবালকত্বে পৌঁছেনি সেই শিশুগণ যেন তিনটি সময়ে (তোমাদের কাছে আসার জন্য) অনুমতি গ্রহণ করে, ফজরের নামাজের আগে, দুপুর বেলা যখন তোমরা পোশাক খুলে রাখ এবং ইশার নামাজের পর। এ তিনটি তোমাদের গোপনীয়তা অবলম্বনের সময়। এ ছাড়া অন্য সময়ে তোমাদের ও তাদের প্রতি কোনো কঠোরতা নেই। তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তো সার্বক্ষণিক যাতায়াত থাকেই। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের কাছে আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
আর তোমাদের শিশুরা সাবালকত্বে উপনীত হলে তারাও যেন অনুমতি গ্রহণ করে, যেমন তাদের আগে প্রাপ্তবয়স্কগণ অনুমতি গ্রহণ করে আসছে। এভাবেই আল্লাহ নিজ আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নূর : ৫৮-৫৯)।
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নাবালক বুঝমান শিশুদের অনুমতির জন্যও তিনটি সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সাধারণত এ সময়গুলোতে মানুষের পোশাক পরিপাটি থাকে না। আর নাবালক ছাড়া অন্যদের জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করেননি। অর্থাৎ তারা যখনই অন্যের কামরায় প্রবেশ করবে, তখনই অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবে। এক্ষেত্রে শিথিলতা ইসলামী শিষ্টাচার বহিভূর্ত। ঘরের ছোট-বড় সকল সন্তানকে তাদের পরস্পরের ও মা-বাবার ঘরে প্রবেশের এ ইসলামী আদব শিক্ষা দেয়া অতীব জরুরি।
অনুমতি নেয়ার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয় নিজের মা-বাবার কামরায় প্রবেশ করার সময়। অথচ কুরআন কারীমে সন্তানের ব্যাপারেই বলা হয়েছে, তারা যেন মা-বাবার ঘরে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে। এক সাহাবী নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি আমার মায়ের ঘরে প্রবেশের সময়ও কি অনুমতি নেব?
নবীজি বললেন, তুমি কি তাকে উলঙ্গ দেখতে পছন্দ করবে? তিনি বললেন, না। নবীজি বললেন, তাহলে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করো। (দ্র. মারাসিলে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা ৩৩৬)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান