আসমানি ও জমিনি মুসিবতের কারণ ও করণীয়-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

১১ জুন ২০২৩, ১১:৩১ পিএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

আসমানি মুসিবত সর্বদা আজাবরূপে আসে না। কখনো পরীক্ষার জন্যও আসে। সূরা আরাফে (আয়াত ১৬৮) তা উল্লেখিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, আবার কখনো আজাব হিসেবে আসে। সূরা রূমের-৪১ নম্বর আয়াতে ও সূরা শূরার-৩০ নম্বর আয়াতে এটা উল্লেখিত হয়েছে। এজন্য যেকোনো দুর্যোগ ও বিপদ-আপদকে দ্ব্যর্থহীনভাবে আজাব-গজব বলে আখ্যায়িত করা উচিত নয়। কেননা, তা যেমন আজাব-গজব হতে পারে, তেমনি পরীক্ষাও হতে পারে।

কোথাও কোনো বিপদ-আপদ যদি আজাব হিসেবেও আসে তবুও অপরিহার্য নয় যে, এটা শুধু ওইসব লোকের গোনাহর কারণে এসেছে যারা এ বিপদে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। বরং ভূপৃষ্ঠে সংঘটিত সকল গোনাহই এর কার্যকারণ হিসেবে গণ্য। তবে যেহেতু কিয়ামতের আগে সকল জনপদ একসঙ্গে ধ্বংস করে দেওয়া আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায় নয় আর তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুয়ার বরকত তাই বালা-মুসিবত একেক সময় একেক স্থানে আপতিত হয়। অতএব মুসিবত যেখানেই আসুক ভাবতে হবে যে, এর পিছনে আমারও গোনাহর কার্যকারিতা রয়েছে অতএব গোনাহ পরিহার করা আমার কর্তব্য।

যে মুসিবত আজাব হিসেবে এসেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্যই তা আজাবÑ এটা অপরিহার্য নয়। বরং এ মুসিবতই আল্লাহ কারো জন্য রহমত বানিয়ে থাকেন। আল্লাহর নেককার বান্দা যারা এ মুসিবতে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা শহীদের ছওয়াব লাভ করবেন আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আল্লাহ তাদের মর্যাদা বুলন্দ করবেন।
যে বিপদ আজাব হিসেবে আসে তার সম্পর্কেও আল্লাহ তায়ালার নীতি এই যে, তাতে শুধু অপরাধীরাই আক্রান্ত হয় না, সবাই আক্রান্ত হয়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা সতর্ক করেছেন যে, অর্থাৎ ওই ফিতনা ও মুসিবত সম্পর্কে সতর্ক হও, যা এসে গেলে শুধু অপরাধীদের ওপরই আসবে না, সবার ওপর আসবে।

এজন্য গোনাহে লিপ্ত হওয়ার আগে একথা স্মরণ করা উচিত যে, আমি এ গোনাহর মাধ্যমে শুধু আমার নয়, গোটা সৃষ্টি জগতের ক্ষতিসাধন করছি। নেককার মানুষদেরও শুধু নিজের চিন্তা করাই যথেষ্ট নয়, পরিবার-পরিজন ও সমাজের মানুষেরও সংশোধনের চিন্তা করতে হবে। দাওয়াত ও তালীমকে ব্যাপক করতে হবে এবং সাধ্যমতো ‘আমর বিল মারূপ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ বিষয়ে যতœবান হতে হবে। মোটকথা, এটা নিশ্চিত যে, বিপদগ্রস্ত যেসব মানুষ গোনাহ ও অপরাধ থেকে মুক্ত কিংবা শরিয়তের বিধান এখনো তার জন্য কার্যকর হয়নি তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা এ মুসিবতকে রহমত বানিয়ে থাকেন।

ব্যাপকভাবে সংঘটিত গোনাহ ও অপরাধের সাজা আল্লাহ তায়ালা শুধু আসমানি বালা-মুসিবতের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন এ ধারণা ঠিক নয়। বরং এটা আজাবের একটি প্রকার মাত্র। সবচেয়ে বড় আজাব হচ্ছে সমাজ থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা বিদায় নেওয়া, সততা ও আমাতদারী বিলুপ্ত হওয়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া, শান্তির সমস্ত উপকরণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকা ইত্যাদি। এসব আজাবে আক্রান্ত লোকেরা যদি এই সুখ চিন্তায় বিভোর থাকে যে, আমাদের ওপর আজাব আসেনি, আজাব এসেছে ওই দুর্যোগগ্রস্ত অঞ্চলে, তবে এটা তাদের ভ্রান্তিবিলাস ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এটাও হচ্ছে এক স্বতন্ত্র আজাব।

তাছাড়া একটি বড় মুসিবত যদি কোনো অঞ্চলে আসে তাহলে তা পরোক্ষভাবে আশপাশের গোটা ভূখ-কে, বরং কখনো গোটা পৃথিবীকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই মুসিবতের প্রত্যক্ষ আঘাত থেকে প্রাণে বেঁচে একথা ভাবতে থাকা যে, বেঁচে গেলাম’, এক ধরনের অপরিণত চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়।

যে বিপদ-আপদ পরীক্ষা হিসেবে আসে সেগুলো শুধু তাদের জন্যই পরীক্ষা নয়, যারা এগুলোতে সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে; বরং এটা সবার জন্য, গোটা পৃথিবীর সকলের জন্য পরীক্ষা। পাকিস্তানের ভূমিকম্প শুধু পাকিস্তানিদের জন্য পরীক্ষা নয়। তদ্রূপ বাংলাদেশের তাপদাহ, বন্যা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য পরীক্ষা নয়; বরং গোটা পৃথিবীর সবার জন্যই পরীক্ষা ও তাম্বীহ। আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা করছেনÑ কে সবর করে আর কে ইলাহী ফয়সালার সমালোচনা করে। কে মুসিবত দেখে সজাগ-সতর্ক হয় এবং তওবা করে নিজেকে সংশোধন করে আর কে পূর্বের মতোই উদাসীন নিদ্রায় বিভোর থাকে। কে সামর্থ্য অনুযায়ী বিপদগ্রস্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসে আর কে নিজ স্বার্থ-চিন্তাতেই ডুবে থাকে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় এই যে, ১. ‘সবর’ ও ‘তাফবিয’ অর্থাৎ নিবেদিত চিত্তে ধৈর্যধারণ এবং ‘রিযা বিল কাযা’ অর্থাৎ আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। ২. সকল রকম গোনাহ থেকে তওবা করা এবং অনতিবিলম্বে নিজের সংশোধনে আত্মনিয়োগ করা। আর অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার করা।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
সন্তানদের নেক আমলের উৎসাহ প্রদান
আরও
X
  

আরও পড়ুন

৯ মাস পর বেরোবির ছাত্রলীগ-শিক্ষকসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

৯ মাস পর বেরোবির ছাত্রলীগ-শিক্ষকসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর :  বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার