নেক কাজে অগ্রগামীদের চারটি গুণ
১২ জুন ২০২৩, ১১:২৯ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
তারা কি মনে করে, আমি তাদেরকে যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যাচ্ছি তা দ্বারা তাদের কল্যাণ সাধনে ত্বরা দেখাচ্ছি? না, বরং (প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে) তাদের কোনো অনুভূতি নেই। নিশ্চয় যারা নিজ প্রতিপালকের ভয়ে ভীত এবং যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতসমূহে ঈমান রাখে এবং যারা নিজ প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করে না এবং যারা যে কোনো কাজই করে, তা করার সময় তাদের অন্তর এই ভয়ে ভীত থাকে যে, তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে। তারাই কল্যাণ অর্জনে তৎপরতা প্রদর্শন করছে এবং তারাই সে দিকে অগ্রসর হচ্ছে দ্রুতগতিতে। (সূরা মুমিনুন : ৫৫-৬১)।
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে নেক কাজে অগ্রগামীদের চারটি মৌলিক গুণের কথা বলা হয়েছে। মক্কার কাফেররা মনে করত এবং এখনো অনেক মানুষ এই ভুল ধারণায় নিপতিত যে, যেহেতু ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এবং দুনিয়াবী আরাম-আয়েশ আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন সেহেতু এটা একথা প্রমাণ করে, আল্লাহ আমাদের ওপর খুশি আছেন। খুশি না হলে কি তিনি এত নিয়ামত দিতেন!
এই আয়াত বলছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি বোঝার উপায় দুনিয়ার নিয়ামত নয়। দুনিয়ার নিয়ামত তো তিনি যাকে ভালবাসেন তাকেও দেন এবং যাকে ভালবাসেন না তাকেও দেন। তবে দ্বীন পালনের নিয়ামত তিনি তাদেরকেই দেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন। তাই তাঁর ভালবাসা ও সন্তুষ্টির মাপকাঠি দ্বীন, দুনিয়া নয়।
এরপর আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কয়েকটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যাসহ গুণগুলো উল্লেখ করা হলো : এক. তারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে ভীত থাকে। অর্থাৎ আল্লাহর ভয়ে ভীত থেকে তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকে এবং করণীয় বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করে। এসব নেক আমল করার পরও তাদের মন থেকে ভয় কাটে না। সব সময় এই পেরেশানি লেগেই থাকে, ঈমানের মৃত্যু নসিব হবে তো? হায়! আল্লাহর হক তো কিছুই আদায় করতে পারলাম না!
দুই. তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের ওপর ঈমান রাখে। কুরআনে আল্লাহ যে সকল আয়াত অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো তিলাওয়াত করে। সেগুলোর অর্থ ও মর্ম অনুধাবনের চেষ্টা করে। পাশাপাশি পৃথিবীতে আল্লাহর যে সকল নিদর্শন রয়েছে, সেগুলো নিয়েও চিন্তা ফিকির করে। যেমন: মায়ের গর্ভে শিশুর বিকাশ, বৃষ্টির অবতরণ, মাটির নিচে পানির সংরক্ষণ ইত্যাদি। সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সে ¯্রষ্টার পরিচয় লাভ করে এবং তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা বোঝার চেষ্টা করে।
তিন. তারা আল্লাহর সাথে শিরক করে না। শিরক দুই প্রকার : শিরকে জলি, শিরকে খফি। আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নিকট প্রার্থনা করা, মানত করা : এগুলো শিরকে জলি বা বড় শিরক। একজন মুমিন তো এসব বড় শিরকে লিপ্ত হওয়ার কল্পনাও করতে পারে না। আরেক ধরনের শিরক হলো শিরকে খফি বা গোপন শিরক। যেমন : আমলের মধ্যে লোক দেখানোর প্রবণতা থাকা। দানের ক্ষেত্রে সুনাম-সুখ্যাতির নিয়ত থাকা। তো আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই ছোট শিরক থেকেও বেঁচে থাকেন।
শিরকে খফি আসলেও খুব মারাত্মক ও আমল বিধ্বংসী। এ থেকে বাঁচাটা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এ ব্যাপারে সবচে বেশি সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে লোক দেখানো ও সুখ্যাতির নিয়ত বড়ই মারাত্মক। নিজের কোনো কাজ একটু সুন্দর হলেই মানুষের বাহবা পাওয়ার আশা মনে জাগে। শয়তান এ পথে আক্রমণ করে সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা; ইসতিগফার করা এবং বারবার নিয়ত শুধরে নেওয়া।
চার. তারা নামাজ-রোজা, দান-সদকা যে নেক কাজই করে আখেরাতের কথা সদা মনে জাগরুক রাখে। নেক কাজে অগ্রগামী থাকে। প্রতিযোগিতামূলকভাবে নেক কাজে অংশগ্রহণ করে। নেক কাজ করে গর্ব করে না; বরং মনে ভয় রাখে, এসকল নেক কাজ আল্লাহ কবুল করবেন তো! আখেরাতে এগুলোর বিনিময়ে পাব তো! নেক কাজের ক্ষেত্রে আমি রিয়ার (লোক দেখানোর) শিকার নই তো!
তো এখানে মোট চারটি গুণের কথা বলা হলো। আল্লাহর ভয়, আল্লাহর আয়াতসমূহের ওপর বিশ্বাস, সব ধরনের শিরকী কর্মকা- থেকে বেঁচে থাকা, নেক কাজ করার পরও গর্ব না করা : এ চার গুণের অধিকারী লোকদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, এ সকল লোক কল্যাণ অর্জনে সদা তৎপর থাকে এবং নেক কাজের দিকে দ্রুত অগ্রসর হয়। আল্লাহ আমাদেরকে এ চার গুণের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন, আমীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি