আমলে প্রাণবন্ত হোক জিলহজ ও জিলহজের প্রথম দশক-১

Daily Inqilab মুহাম্মাদ ফজলুল বারী

২০ জুন ২০২৩, ১১:১৮ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

আসমান-জমিনের সৃষ্টি অবধি আল্লাহ তায়ালা বছরকে বার মাসে বিভক্ত করেছেন। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে এটিই আল্লাহর নিয়ম। এর মধ্য থেকে আল্লাহ চারটি মাসকে করেছেন সম্মানিত ও মহিমান্বিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : আল্লাহ যেদিন আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তায়ালার বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। (সূরা তাওবা : ৩৬)।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় সময়ের হিসেব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-জমিনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল (কারণ, আরবরা মাস-বছরের হিসেব কম-বেশি ও আগ-পিছ করে ফেলেছিল); বার মাসে এক বছর। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক : জিলকদ, জিলহজ, মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মাঝের মাস। (সহিহ বুখারি : ৪৬৬২)।

জিলহজ সম্মানিত চার মাসের শ্রেষ্ঠ মাস। এ চার মাসের মধ্যে জিলহজ মাসের ফজিলত সবচেয়ে বেশি। কারণ, এ মাসেই আদায় করা হয় ইসলামের অন্যতম প্রধান রোকন ও নিদর্শন হজ এবং অপর নিদর্শন ও মহান আমল কুরবানি। এ মাস আল্লাহর কাছে সম্মানিত। এতে রয়েছে এমন দশক, আল্লাহ তায়ালা যার কসম করেছেন। বিদায় হজের ভাষণে নবীজি (সা.) জিলহজ মাসকে শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, জেনে রাখো! সবচেয়ে সম্মানিত মাস হলো, তোমাদের এ মাস (জিলহজ)। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৯৩১)।

আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে বান্দাদের দান করেছেন ফজিলতপূর্ণ বিভিন্ন দিবস-রজনী। বছরের কোনো কোনো মাস, দিন বা রাতকে করেছেন ফজিলতপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যম-িত। যাতে এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বান্দা ক্ষমা লাভ করতে পারে, নেক আমলে সমৃদ্ধ হতে পারে এবং আল্লাহর প্রিয় হতে পারে। এর মধ্যে জিলহজ মাস অন্যতম প্রধান ফজিলতপূর্ণ মাস।

এ মাসের প্রথম দশককে আল্লাহ তায়ালা করেছেন বৈশিষ্ট্যম-িত। এ দিনগুলোতেই হজের মৌলিক আমল সম্পাদিত হয়। দশ জিলহজ সারা বিশ্বের মুসলিমগণ কুরবানি করেন। এ দিনগুলোর নেক আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট অধিক প্রিয়।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর নিকট জিলহজের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও (এর চেয়ে উত্তম) নয়? তিনি বললেন, না আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এর চেয়ে উত্তম, যে নিজের জানমাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে। অতঃপর কোনো কিছু নিয়ে ঘরে ফিরে আসেনি। (সুনানে আবু দাউদ : ২৪৩৮)।

আশারায়ে জিলহজ : আল্লাহ কসম করেছেন যে দশ রাতের। আমরা জেনেছি, জিলহজ মাস আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের অন্যতম প্রধান মাস। আবার এ মাসের মধ্যে প্রথম দশক হলো প্রধান। এ দশক এতটাই ফজিলতপূর্ণ ও মহিমান্বিত যে, আল্লাহ তায়ালা এ দশ রাতের কসম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : শপথ ফজরের, শপথ দশ রাত্রির। (সূরা ফাজর : ১-২)।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও মুজাহিদ (রাহ.)-সহ অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও মুফাসসির বলেন, এখানে ‘দশ রাত্রি’ দ্বারা জিলহজের প্রথম দশ রাতকেই বুঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৪/৫৩৫)। এ দশককে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলা হয়েছে।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হলো, জিলহজের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হলো, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই। তবে ওই ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শাহাদাত লাভ করেছে। (মুসনাদে বাযযার : ১১২৮)।

সম্মানিত মাস সম্মানিত দশক : গুনাহের মাধ্যমে এর সম্মান বিনষ্ট না করি। মুমিন তো আল্লাহর দেওয়া বিভিন্ন সুযোগকে গনিমত মনে করে কাজে লাগায়। এসকল ফজিলতপূর্ণ মওসুমে নেক আমলের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করে তার আমলের খাতা। কিন্তু কখনো কখনো কারও দ্বারা এমন হয়ে যেতে পারে যে, নেক আমলের তো তাওফিক হলো না; কিন্তু গুনাহে কলুষিত হলো আমলনামা। এমনটি কখনোই কাম্য নয়। এক কবি বড় সুন্দর বলেছেন, নেক আমল করতে যদি না পার, গুনাহে লিপ্ত হয়ো না।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
সন্তানদের নেক আমলের উৎসাহ প্রদান
আরও
X
  

আরও পড়ুন

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর :  বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

নোয়াখালীতে কারাগারের ১৮ ফুট দেয়াল টপকে আসামির পালানোর চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

নোয়াখালীতে কারাগারের ১৮ ফুট দেয়াল টপকে আসামির পালানোর চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

‘বিতর্কিত কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে’

‘বিতর্কিত কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে’