পুত্র-কন্যার মাঝে সমতা কিছু নির্দেশনা-২

Daily Inqilab আবদুল্লাহ ফাহাদ

০৮ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম | আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫ এএম

বিবাহের কারণে কন্যার অধিকার রহিত হয় না : আমাদের সমাজের অবস্থা তো এই যে, একে তো পিতা তার জীবদ্দশায় মেয়েদের সম্পদ দেয় না। এমনকি যদি বলা হয়, আপনি তো সব সম্পদ ছেলেদেরই দিয়ে দিলেন, মেয়েদের কিছু দিলেন না? তখন জবাবে বলে, আমি তো মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। বিবাহের সময় তাকে যা কিছু দিয়েছি তাতেই তার পাওনা আদায় হয়ে গেছে। এই ধারণা ভুল। বিয়ের সময় মেয়েকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী দেওয়ার কারণে তার মীরাছের হক শেষ হয়ে যায় না। তেমনি এ কারণে তাকে পিতার সম্পদ থেকেও বঞ্চিত করা যায় না।

ছেলের বিয়েতে পিতা যেমন খরচ করেন তেমনি মেয়ের বিয়েতেও করবেন। সাধারণত দেখা যায়, পুত্রের বিয়েতে বেশি খরচ করা হয়। এটাও ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা উচিত। এর সহজ উপায় হলো, নিজের আর্থিক সঙ্গতি অনুসারে আগেভাগেই নির্দিষ্ট করে নেবে যে, প্রত্যেক পুত্র-কন্যার বিয়েতে এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করব। এরপর সে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ থেকে ছেলে-মেয়ের বিয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করবে। যদি কারো ক্ষেত্রে কিছু বেচে যায় তাহলে নগদ আকারে তা প্রদান করবে। এমন যেন না হয়, এক সন্তানের বিয়েতে বেশি খরচ করা হলো, অন্য সন্তানের বিয়েতে কম। কারণ এটাও এক ধরনের অন্যায়, যা শরীয়তে অপছন্দনীয়।

মোটকথা মেয়ের বিয়েতে সবকিছু দিয়ে দিয়েছি, এখন আর তার কোনো অধিকার নেই, জীবদ্দশাতেও সে আর কিছু পাবে না, মৃত্যুর পরও মীরাছের সম্পদে তার কোনো অধিকার থাকবে নাÑ এটা স্পষ্ট জুলুম এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।

কোনো কোনো পিতা-মাতা তাদের জীবদ্দশায়ই তাদের সম্পদ শুধু মৌখিক বা লিখিত আকারে বণ্টন করে দেন। যেমন ঐ জমি এই ছেলের নামে, অমুক দোকান ঐ ছেলের নামে, অমুক ফ্ল্যাট এই মেয়ের নামে, অমুক প্লটটি অমুক মেয়ের নামে ইত্যাদি। কিন্তু প্রত্যেকের অংশ পৃথক পৃথক করে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপরোক্ত মৌখিক বা লিখিত ঘোষণার পরও সম্পদ পিতা-মাতার কব্জাতেই থাকে। এমনও হয় যে, একটি বণ্টনযোগ্য সম্পদ একাধিক সন্তানের নামে লিখে দেওয়া হয়।

যেমনÑ একটি বড় দোকান বা বাড়ি দুই-তিন সন্তানের নামে লিখে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকের অংশ তার কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। মনে রাখতে হবে যে, হস্তান্তর করা ছাড়া শুধু মৌখিক বা লিখিত বণ্টনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা শরীয়তে নেই এবং এভাবে তাদের মালিকানাও প্রতিষ্ঠিত হয় না; বরং তা যথারীতি পিতার সম্পদ বলেই গণ্য হয়। সুতরাং পিতার মৃত্যুর পর মীরাছ বণ্টনের নিয়ম অনুযায়ী পুনরায় তা বণ্টন করতে হবে।

তাই জীবদ্দশায় সম্পদ বণ্টন করতে চাইলে সঠিক পদ্ধতি এই যে, প্রথমে বণ্টনযোগ্য সকল সম্পদ পৃথক পৃথক করে ভাগ করবে। এরপর সন্তানদের হাতে তা হস্তান্তর করবে। আর সম্পদ বিভিন্ন ধরনের হলে কমপক্ষে এসবের চাবি, ডকুমেন্ট বা মালিকানা সার্টিফিকেট ইত্যাদি হস্তান্তর করতে হবে। আরো সহজ ও উত্তম পন্থা এই যে, যিনি জীবদ্দশায় তার সকল সম্পদ বণ্টন করতে চান তিনি প্রথমে মুফতির কাছ থেকে তার করণীয় বুঝে নিবেন। এরপর সে নিয়মে বণ্টন করবেন। যেন তার এই বণ্টনটি শরীয়তের দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য হয়।

যাইহোক, মেয়েকে তার প্রাপ্য হিস্যা থেকে কম দেওয়া বা একেবারেই না দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জুলুম ও নাজায়েয। হাদিস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি তার ওয়ারিশকে মীরাছ থেকে বঞ্চিত করে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৬/২১৫)।

নারীর প্রতি এই অবিচার মূলত জাহেলি যুগ থেকে চলে আসা ভ্রান্ত চিন্তারই কুফল। জাহেলি যুগে আরবের কাফিররা কন্যাসন্তানকে কোনো কিছুই মনে করত না। এমনকি তাদের বাঁচার অধিকারটুকু দিতেও প্রস্তুত ছিল না। আর এখন মুসলমানরাও মেয়েদের মীরাছ থেকে বঞ্চিত করে। এমনকি জীবদ্দশায় সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রেও তাদের বঞ্চিত করে। বিয়েশাদিতে প্রথাগত সামান্য কিছু ব্যয় করেই মনে করে যে, তাদের হক আদায় হয়ে গেছে। এখন অবশিষ্ট সম্পদে তাদের কোনো অধিকার নেই, এতে শুধু পুত্রদের অধিকার। এই চিন্তা ও রীতি সম্পূর্ণ ভুল; বরং পিতার সম্পদে পুত্র-কন্যা উভয়ের অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা জরুরি।

আর আগেও বলা হয়েছে যে, সন্তানের প্রয়োজনের কারণে হাদিয়া-উপহারের ক্ষেত্রে কম-বেশি করতে কোনো দোষ নেই। তাই কোনো মেয়ে যদি অভাবী হয়, যার আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন, আর ছেলে সচ্ছল, প্রয়োজনের সকল কিছুই তার আছে, এ অবস্থায় পিতা যদি মেয়েকে কিছু বেশি দেন তাহলে কোনো দোষ নেই। তবে সকলেই যদি অভাবী হয় কিংবা আর্থিক দিক থেকে সকলের অবস্থা এক ধরনের হয় তাহলে তাদের মাঝে সমতা রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে কম-বেশি করবে না।

মোটকথা, শরীয়তের অনেক বিধান রয়েছে, যে সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। এ জন্য ইলমে দ্বীন অর্জনের চেষ্টা করা সকলের জন্য অপরিহার্য।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আদরের মেয়ে : দুনিয়ার পূর্ণতা আর পরকালের মুক্তির পয়গাম-২
আদরের মেয়ে : দুনিয়ার পূর্ণতা আর পরকালের মুক্তির পয়গাম-১
নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা-১
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার : যে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে নীরবে
শবে বরাত : নববী নির্দেশনাই মুক্তির উপায়-৩
আরও
X

আরও পড়ুন

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যা বললেন ইশরাক

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যা বললেন ইশরাক

শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রদ্ধা নিবেদন

শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রদ্ধা নিবেদন

তরুণদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা গড়বে আগামীর বাংলাদেশ: সারজিস আলম

তরুণদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা গড়বে আগামীর বাংলাদেশ: সারজিস আলম

ফের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সোনিয়া গান্ধী

ফের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সোনিয়া গান্ধী

নিরাপত্তা ইস্যুতে স্থগিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কনসার্ট

নিরাপত্তা ইস্যুতে স্থগিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কনসার্ট

তিন বাসে বিস্ফোরণ, ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

তিন বাসে বিস্ফোরণ, ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলল আরও ২২ লাশ,  নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলল আরও ২২ লাশ, নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক বক্সিংয়ে ইভেন্টে বিজয়ের হাসি সুরো-উৎসবের

থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক বক্সিংয়ে ইভেন্টে বিজয়ের হাসি সুরো-উৎসবের

মানুষ অবিলম্বে ভোট দেবার জনআকাক্সক্ষা প্রতিফলন দেখতে চায় : ড. মঈন খান

মানুষ অবিলম্বে ভোট দেবার জনআকাক্সক্ষা প্রতিফলন দেখতে চায় : ড. মঈন খান

উত্তরা থেকে চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার

উত্তরা থেকে চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার

মোহাম্মদপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত ২

মোহাম্মদপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত ২

সচিবালয়ে প্রবেশে নতুন নীতিমালা

সচিবালয়ে প্রবেশে নতুন নীতিমালা

এস কে সুর পরিবারের ৩৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, জব্দও ফ্ল্যাট-জমি

এস কে সুর পরিবারের ৩৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, জব্দও ফ্ল্যাট-জমি

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো

সাবেক এমপি সরওয়ার দম্পতি ও চৌধুরী নাফিজ সরাফতের দুই সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক এমপি সরওয়ার দম্পতি ও চৌধুরী নাফিজ সরাফতের দুই সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

চৌধুরী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ ২৩ ফেব্রুয়ারি

চৌধুরী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ ২৩ ফেব্রুয়ারি

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ জন

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ জন

বন্দরে মহানবী (সা.)কে নিয়ে কটূক্তিকারী আমিত দাস নৌবাহিনীর হেফাজতে

বন্দরে মহানবী (সা.)কে নিয়ে কটূক্তিকারী আমিত দাস নৌবাহিনীর হেফাজতে

উত্তরায় প্রকাশ্যে কোপানোর মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য কারাগারে

উত্তরায় প্রকাশ্যে কোপানোর মামলায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই সদস্য কারাগারে

কেরানীগঞ্জে রগকাটা মুন্না ডিবির হাতে গ্রেফতার

কেরানীগঞ্জে রগকাটা মুন্না ডিবির হাতে গ্রেফতার