শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষা কঠোরতা নয়, কোমলতাই আসল পন্থা-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান

১১ জুলাই ২০২৩, ১১:২২ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাগান্বিত অবস্থায় শিশুদের প্রহার করা অন্যায় : স্বভাব-প্রকৃতির কারণেই শিশুরা অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। তাই শিশুদের শিক্ষাদান খুবই কঠিন। শান্ত-শিষ্টতার চেয়ে চপলতা ও চঞ্চলতাই তাদের মধ্যে প্রবল। ফলে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করাও বেশ কষ্টকর। কখনো কখনো পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, শিক্ষকের মধ্যে ক্রোধের ভাব সৃষ্টি হয়ে যায় এবং প্রহার করার অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। এ সময় শাস্তি দিবে না; বরং নীরব-নিশ্চুপ থেকে নিজের রাগ দূর করবে। তারপর করণীয় ঠিক করবে। এটাই ইসলামের শ্বাশত শিক্ষা ও ধর্মীয় নির্দেশনা।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শিক্ষাদান কর, সহজ ও কোমল আচরণ কর; কঠোর আচরণ করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হবে তখন চুপ থাক (এ কথা তিনবার বললেন)। (মুসনাদে আহমদ : ২৫৫৬)। আল-আদাবুল মুফরাদের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা শিক্ষাদান কর এবং সহজ-কোমল আচরণ কর’ এ কথা তিনবার বলা হয়েছে। (হাদিস : ১৩২০)।

শিশুদেরকে বা অন্য কাউকে প্রহার করা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কাউকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে কিয়ামতের দিন তার থেকে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে। (আল-আদাবুল মুফরাদ : ১৮৬)।

এ সম্পর্কে হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রাহ.) বলেন, কখনো রাগান্বিত অবস্থায় শিশুকে প্রহার করবে না। পিতা ও উস্তাদ উভয়ের জন্যই এ কথা। এ সময় চুপ থাকবে। যখন ক্রোধ দূর হয়ে যাবে তখন ভেবেচিন্তে শাস্তি দিবে। এতে শাস্তির মাত্রা ঠিক থাকবে। সীমালঙ্ঘন হবে না। কিন্তু যদি রাগান্বিত অবস্থায় মারতে আরম্ভ কর, তাহলে এক থাপ্পড়ের জায়গায় দশ থাপ্পড় দিয়ে ফেলবে। এর কারণে একে তো গুনাহ হলো।

কেননা, প্রয়োজনের অধিক শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত এতে শিশুর ক্ষতি হবে। কেননা, সকল বিষয়ই মাত্রা অতিক্রম করলে ক্ষতি হয়ে যায়। তৃতীয়ত এর জন্য পরে অনুতাপ করতে হবে। তাই তিনি বলেছেন, ক্রুব্ধ অবস্থায় শাস্তি দিবে না।

মুফতি মুহাম্মাদ শফী (রাহ.) বলেছেন, শিশুদেরকে প্রহার করা খুবই ভয়াবহ। অন্যান্য গুনাহ তো তওবার মাধ্যমে মাফ হতে পারে। কিন্তু শিশুদের ওপর জুলুম করা হলে এর ক্ষমা পাওয়া খুবই জটিল। কেননা এটা হচ্ছে বান্দার হক। আর বান্দার হক শুধু তওবার দ্বারা মাফ হয় না। যে পর্যন্ত না যার হক নষ্ট করা হয়েছে সে মাফ করে।

এদিকে যার ওপর জুলুম করা হয়েছে সে হচ্ছে নাবালেগ। নাবালেগের ক্ষমা শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য এ অপরাধের মাফ পাওয়া খুবই জটিল। আর তাই শিশুদেরকে প্রহার করা এবং তাদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করার বিষয়ে সাবধান হওয়া উচিত। (ইসলামী মাজালিস, মুফতি মুহাম্মাদ তাকী উসমানী)।

আল্লামা ইবনে খালদূন ছাত্রদের প্রহার ও কঠোরতাকে ক্ষতিকর আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, খুব স্মরণ রাখবেন। শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে প্রহার করা এবং ডাঁট-ধমক দেওয়া শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটা উস্তাদের অযোগ্যতা ও ভুল শিক্ষা পদ্ধতির নমুনা। প্রহার করার ফলে শিশুদের মনে শিক্ষকের কঠোরতার প্রভাব বিরাজ করে। তাদের মন-মানসিকতায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং তারা লেখাপড়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কঠোরতা তাদেরকে অধঃপতনমুখী করে তোলে। অনেক সময় তাদের মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, প্রহার ও কঠোরতার কারণে শিশুদের মাঝে মিথ্যা বলা ও দুষ্কর্মের মানসিকতা সৃষ্টি হয়। তাদের আত্মমর্যাদাবোধ ও উচ্চ চেতনা দূর হয়ে যায়। শিক্ষকের মারধর থেকে বাঁচার জন্য তারা নানা অপকৌশল, মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে। পরবর্তীতে এই সকল ত্রুটি তাদের মধ্যে বদ্ধমূল হয়ে যায়। উত্তম চরিত্র ও সুন্দর মানসিকতার পরিবর্তে অসৎ চরিত্র ও অনৈতিকতার ভিত রচিত হয়।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আদরের মেয়ে : দুনিয়ার পূর্ণতা আর পরকালের মুক্তির পয়গাম-২
আদরের মেয়ে : দুনিয়ার পূর্ণতা আর পরকালের মুক্তির পয়গাম-১
নাম রাখার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা-১
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার : যে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে নীরবে
শবে বরাত : নববী নির্দেশনাই মুক্তির উপায়-৩
আরও
X

আরও পড়ুন

বাঙালি জাতিসত্ত্বার একটি প্রাথমিক স্তম্ভ একুশে : প্রধান বিচারপতি

বাঙালি জাতিসত্ত্বার একটি প্রাথমিক স্তম্ভ একুশে : প্রধান বিচারপতি

জাতীয় নাগরিক কমিটির ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স উইং গঠন

জাতীয় নাগরিক কমিটির ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স উইং গঠন

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যা বললেন ইশরাক

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যা বললেন ইশরাক

শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রদ্ধা নিবেদন

শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রদ্ধা নিবেদন

তরুণদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা গড়বে আগামীর বাংলাদেশ: সারজিস আলম

তরুণদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা গড়বে আগামীর বাংলাদেশ: সারজিস আলম

ফের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সোনিয়া গান্ধী

ফের অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি সোনিয়া গান্ধী

নিরাপত্তা ইস্যুতে স্থগিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কনসার্ট

নিরাপত্তা ইস্যুতে স্থগিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কনসার্ট

তিন বাসে বিস্ফোরণ, ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

তিন বাসে বিস্ফোরণ, ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলল আরও ২২ লাশ,  নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলল আরও ২২ লাশ, নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক বক্সিংয়ে ইভেন্টে বিজয়ের হাসি সুরো-উৎসবের

থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক বক্সিংয়ে ইভেন্টে বিজয়ের হাসি সুরো-উৎসবের

মানুষ অবিলম্বে ভোট দেবার জনআকাক্সক্ষা প্রতিফলন দেখতে চায় : ড. মঈন খান

মানুষ অবিলম্বে ভোট দেবার জনআকাক্সক্ষা প্রতিফলন দেখতে চায় : ড. মঈন খান

উত্তরা থেকে চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার

উত্তরা থেকে চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার

মোহাম্মদপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত ২

মোহাম্মদপুরে যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত ২

সচিবালয়ে প্রবেশে নতুন নীতিমালা

সচিবালয়ে প্রবেশে নতুন নীতিমালা

এস কে সুর পরিবারের ৩৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, জব্দও ফ্ল্যাট-জমি

এস কে সুর পরিবারের ৩৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ, জব্দও ফ্ল্যাট-জমি

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো

সাবেক এমপি সরওয়ার দম্পতি ও চৌধুরী নাফিজ সরাফতের দুই সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক এমপি সরওয়ার দম্পতি ও চৌধুরী নাফিজ সরাফতের দুই সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

চৌধুরী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ ২৩ ফেব্রুয়ারি

চৌধুরী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ ২৩ ফেব্রুয়ারি

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ জন

রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ জন

বন্দরে মহানবী (সা.)কে নিয়ে কটূক্তিকারী আমিত দাস নৌবাহিনীর হেফাজতে

বন্দরে মহানবী (সা.)কে নিয়ে কটূক্তিকারী আমিত দাস নৌবাহিনীর হেফাজতে