কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত ও সূরা : বিশেষ কিছু ফজিলত-২
১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:২৯ পিএম | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৬ পিএম
সূরা কাহফ : আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে দাজ্জালের ফেতনা থেকে সে মুক্ত থাকবে। (সহিহ মুসলিম : ৮০৯)। অন্য বর্ণনায় সূরা কাহফের শেষ দশ আয়াত সম্পর্কে এই ফজিলতের কথা উল্লেখিত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য : সহিহ ইবনে হিব্বান : ৭৮৬)। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তাকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত একটি নূর বেষ্টন করে রাখবে। (মুসতাদরাকে হাকেম : ৩৩৯২)। হাদিসটির সনদ হাসান।
সূরা ইয়াসীন : জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য রাতের বেলা সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করবে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান : ২৫৭৪)। হাদিসটি সালিহ লিল আমাল। আতা ইবনে আবী রাবাহ (রাহ.) বলেন, আমার কাছে এই হাদিস পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করবে তার যাবতীয় প্রয়োজন পুরা করা হবে। (সুনানে দারেমী : ২/৫৪৯)।
সূরা মুলক : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে। যে ব্যক্তি নিয়মিত সেই সূরা তিলাওয়াত করবে তার জন্য ক্ষমা আদায় করা পর্যন্ত সূরাটি সুপারিশ করতে থাকবে। সেই সূরা হলো, ‘তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক’। (সুনানে আবু দাউদ : ১৪০০)। ইমাম তিরমিযিজ (রাহ.) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে। নিয়মিত যে ব্যক্তি সেই সূরা তিলাওয়াত করবে তার পক্ষে সে তর্ক করবে। এক পর্যায়ে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। সেটি হলো সূরা মুলক। (আলমুজামুল আউসাত তবারানী : ৩৬৫৪)। হাদিসটি হাসান। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন : যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা মুলক পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে এর ওসিলায় কবরের আজাব থেকে মুক্ত রাখবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জামানায় এই সূরাকে আমরা বলতামÑ ‘মানেআ’ অর্থাৎ কবরের আজাব প্রতিরোধকারী। যে ব্যক্তি প্রতি রাতে এই সূরা তিলাওয়াত করল সে অনেক তিলাওয়াত করল এবং উত্তম কাজ করল। (সুনানে কুবরা নাসায়ী : ১০৫৪৭)।
সূরা ইখলাস : আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) একদিন সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে বললেন : তোমাদের কেউ কি রাতের বেলা কুরআন মাজীদের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে পারবে? বিষয়টি তাঁদের কাছে কঠিন মনে হলো। তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কে তা পারবে? তখন তিনি বললেন : সূরা ইখলাস কুরআন মাজীদের এক তৃতীয়াংশ (তিলাওয়াতের সমান)। (সহিহ বুখারি : ৫০১৫)।
সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী (সা.) রাতে যখন বিছানায় আসতেন, (ঘুমানোর আগে) সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে দুই হাতের তালুতে (একত্র করে) ফুঁ দিতেন। এরপর সেই দুই হাতে চেহারা ও পুরো শরীর যতদূর সম্ভব মুছে নিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) অসুস্থ হয়ে গেলে আমাকে আদেশ করতেন, আমি তা (সূরাগুলো পড়ে হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে শরীর মোছার কাজ) করে দিতাম। (সহিহ বুখারি : ৫৭৪৮)।
আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন : সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে পড়লে তা তোমার জন্য সকল সমস্যা ও অনিষ্ট থেকে (রক্ষার ক্ষেত্রে) যথেষ্ট হবে। (জামে তিরমিজি : ৩৫৭৫)।
এক্ষেত্রে যে বিষয়টি আমাদের খেয়াল রাখা উচিত সেটি হলো, আমরা যেমন কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াত ও সূরা সহিহ হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন ফজিলত লাভ করার উদ্দেশ্যে তিলাওয়াত করি, তেমনিÑ বরং তারচেয়েও বেশি গুরুত্বের সাথে পুরো কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতের ব্যাপারে যতœশীল হওয়া উচিত। সেই সাথে তিলাওয়াত করা উচিত তাজবীদ ও তারতীলের সাথে। তিলাওয়াত হওয়া উচিত তাদাব্বুর ও তাফাক্কুরের সাথে।
যেন আমরা কুরআন থেকে নসিহত গ্রহণ করতে পারি এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআনের হেদায়েত ও নির্দেশনা লাভ করতে পারি। বিশেষ করে যারা বুঝে বুঝে কুরআন তিলাওয়াতের সামর্থ্য রাখেন, তাদের জন্য তো অবশ্যই এ বিষয়ে অধিক যতœশীল হওয়া উচিত। আর যারা বর্তমানে সমর্থ নন, তাদেরও উচিত সহিহ শুদ্ধ তিলাওয়াত শেখার পর কুরআন বোঝার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এভাবে তিলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। অধিক পরিমাণে তিলাওয়াত করার এবং কুরআনের মাধ্যমে জীবন আলোকিত করার সৌভাগ্য নসিব করুন। Ñআমীন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি