ওরাই আল্লাহর দলভুক্ত ওরাই সফল-২

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

১৭ জুলাই ২০২৩, ১১:২৮ পিএম | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

সূরা মুজাদালার যে আয়াত নিয়ে আমরা গত আলোচনায় আলোচনা করেছি, এখানে আল্লাহ তায়ালার দলভুক্তদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে- তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রুদের প্রতি কোনোরূপ ভালোবাসা পোষণ করে না। আগুন আর পানি যেমন একত্রিত হতে পারে না, শত্রুতা আর ভালোবাসাও তেমনি একসঙ্গে চলতে পারে না। শত্রু তো শত্রুই, তাকে ভালোবাসতে হবে কেন? শত্রু যদি এমন হয়, যাকে ভালোবাসতে হয়, তবে তার সঙ্গে আবার শত্রুতা কেন? অবশ্য শত্রুতা পোষণ করা মানেই অকল্যাণকামিতা নয়, এমনকি স্বাভাবিক ভদ্রতা-সৌজন্য থেকে তাকে বঞ্চিত করাও নয়।

মুমিন ব্যক্তি কাকে ভালোবাসবে, কার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবেÑ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। মুমিন আল্লাহকে ভালোবাসবে, আল্লাহ তায়ালার প্রিয় রাসূলকে ভালোবাসবে, ভালোবাসবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বন্ধুদের। বন্ধুর বন্ধু তো নিজেরও বন্ধু। এ মূলনীতি অনুসারে, আল্লাহ তায়ালার বন্ধু যারা, তারা প্রতিটি মুমিনেরই বন্ধু। অর্থাৎ মুমিন মুমিনের বন্ধু। মুমিনের বন্ধুত্ব ভালোবাসা হৃদ্যতা ঘনিষ্ঠতা সবই মুমিনদের সঙ্গে। এখানেও দুটি বিষয়:

এক. একজন মুমিন নিজের ঘনিষ্ঠ অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে একজন মুমিনকেই বেছে নেবে, কোনো কাফেরকে নয়। পবিত্র কুরআনে এ বিষয়টি নির্দেশিত হয়েছে এভাবে : হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে (অর্থাৎ কোনো কাফেরকে) অন্তরঙ্গ বন্ধু বানিয়ো না। ওরা তোমাদের অনিষ্ট সাধনে কোনোরূপ ত্রুটি করে না। ওরা মনেপ্রাণে কামনা করেÑ তোমরা কষ্ট ভোগ কর। (সূরা আলে ইমরান : ১১৮)।

দুই. মুমিনমাত্রই আরেকজন মুমিনের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করবে। পূর্ব কোনো পরিচয় না থাকলেও একে অন্যের প্রতি আন্তরিকতা লালন করবে। মুমিন মুমিনকে ভালোবাসবে। পবিত্র কুরআনের ভাষায় : মুমিনেরা পরস্পর ভাই ভাই। (সূরা হুজুরাত : ১০)।

মুমিনের প্রতি মুমিনের এ ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্ববোধের পুরস্কারও অনেক ঈর্ষণীয়। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি হাদিস, এক ব্যক্তি যাচ্ছিল এক গ্রামে। সেখানে তার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার পথে এক ফেরেশতা পাঠিয়ে দিলেন। ফেরেশতার কাছ দিয়ে যখন সে যাচ্ছিল তখন ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলল, আমি এ গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছি। ফেরেশতা জানতে চাইলেন, এ ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজন কি তোমার আছে তার কাছে?

সে উত্তর দিলো না, তবে আমি তাকে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যে ভালোবাসি। ফেরেশতা তখন তাকে জানালেন, আমি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমার কাছে এসেছি। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমার কাছে এ বার্তাটি পৌঁছে দেয়ার জন্যে এসেছিÑ তুমি যেমন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাস, আল্লাহ তায়ালাও তোমাকে ভালোবাসেন। (সহিহ মুসলিম : ২৫৬৭)।

আমরা উপরে বলে এসেছি, সকল মানুষই দু’টি ভাগে বিভক্তÑ এক. আল্লাহর দল, দুই. শয়তানের দল। যারা শয়তানের দলের অন্তভুর্ক্ত, যারা ওর অনুসারী, তারা কাফের। তাদের সঙ্গে মুমিনদের, তথা আল্লাহর দলের লোকদের শত্রুতা ও বিরোধ পুরোটাই আদর্শকেন্দ্রিক, দ্বীনকেন্দ্রিক। যারা মুমিন, তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তারা আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত সকল নবীকেই নবী হিসেবে বিশ্বাস করে, তারা একমাত্র নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শরিয়তই অনুসরণ করে।

আর যারা কাফের, তারা কেউ আল্লাহ ও পরকালকে অস্বীকার করে, কেউ স্বীকার করলেও তার সঙ্গে আরও শত সহস্র মিথ্যা মাবুদের উপাসনা করে, কেউ নবী মুহাম্মাদ (সা.) কে অস্বীকার করে। এরা সকলেই আল্লাহ তায়ালার শত্রু, তাঁর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শত্রু। এ শত্রুতা কেবলই দ্বীন নিয়ে। এরা শুরুতেই চেয়েছিলÑ এ দ্বীনের কণ্ঠ চেপে ধরে এর যাত্রা থামিয়ে দিতে। মনে প্রাণে চেয়েছিল, দ্বীন ইসলাম যেন কিছুতেই বিজয়ী দ্বীন হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। তারা চেয়েছিল আল্লাহর নূর তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিতে। তাদের শত্রুতার এ ধারা বন্ধ হয়নি কখনো।

আমরা যারা নিজেদেরকে মুমিন হিসেবে পরিচয় দিই, এ পরিচয়ের ভেতর দিয়ে আমরা নিজেদেরকে আল্লাহ তায়ালার দলভুক্ত দাবি করে থাকি। মুমিন যে, সে তো আল্লাহর দলভুক্ত হবেই। কিন্তু এ দলের সদস্যদের যে বৈশিষ্ট্য তা কি আমরা পুরোপুরি ধারণ করতে পেরেছি? এর উত্তর শুনতে হবে নিজের কাছ থেকেই। উত্তর যদি ইতিবাচক না হয়, তবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এসব বৈশিষ্ট্য নিজের মধ্যে ধারণ করার সংগ্রামে।

এ সংগ্রাম শয়তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, তাঁর দ্বীনের প্রতি এবং দ্বীনদারদের প্রতি লালন করতে হবে অকৃত্রিম ভালোবাসা। আল্লাহ তায়ালার দলভুক্ত নিজেকে করতে চাইলে এর কোনো বিকল্প নেই।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
সন্তানদের নেক আমলের উৎসাহ প্রদান
আরও
X
  

আরও পড়ুন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর :  বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড ‌‌আয়োজ‌নে প্রস্তু‌তিমূলক সভা অনু‌ষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

নোয়াখালীতে কারাগারের ১৮ ফুট দেয়াল টপকে আসামির পালানোর চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

নোয়াখালীতে কারাগারের ১৮ ফুট দেয়াল টপকে আসামির পালানোর চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

‘বিতর্কিত কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে’

‘বিতর্কিত কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে’

কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় মামলা

কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় মামলা

ইরানের কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র যেকারণে একটি সামরিক সম্পদ

ইরানের কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র যেকারণে একটি সামরিক সম্পদ

বিশ্ব যুব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ইয়াজদানির স্বর্ণ জয়

বিশ্ব যুব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ইয়াজদানির স্বর্ণ জয়

কীসের অপারেশন সিঁদুর, মুখ দিয়ে খারাপ কথা বের হবে : কবীর সুমন

কীসের অপারেশন সিঁদুর, মুখ দিয়ে খারাপ কথা বের হবে : কবীর সুমন

তিন দফা দাবিতে ৯ জেলায় ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

তিন দফা দাবিতে ৯ জেলায় ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

বিজিএমইএ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলো ফোরাম জোট

বিজিএমইএ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলো ফোরাম জোট

আপাতত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না সরকার: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা

আপাতত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না সরকার: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা