কুরআন অবমাননা ওদের দীনতা আমাদের উদাসীনতা-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

২৭ জুলাই ২০২৩, ১১:২৬ পিএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

গত আলোচনায় উল্লেখিত পূর্ববর্তী নবীগণের দাওয়াতের বিবরণ পাঠ করলে এই বাস্তবতা জীবন্ত হয়ে উঠে যে, আদর্শত্যাগী সম্প্রদায়ের কাছে যখন কোনো জবাব থাকে না তখন তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। অন্যায়-অবিচারের মাধ্যমে সত্যকে পরাস্ত করতে চায়। কিন্তু সত্যের পৃষ্ঠপোষক স্বয়ং আল্লাহ।

তিনি সত্যকেই বিজয়ী করেন। উল্লেখিত উদাহরণগুলোর পরবর্তী অংশই এর প্রমাণ। আখেরি পয়গাম্বর হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সম্পর্কে বর্তমান সময়ের কাফির-মুশরিকদের কটুক্তি, আখেরি আসমানী কিতাব কুরআন মজীদের অবমাননা, আখেরি দ্বীন ইসলামের বিধিবিধান সম্পর্কে অপপ্রচার আর ঈমানদার মুসলিমদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রপাগান্ডা-এই সব একই সূত্রে গাঁথা। এর প্রতিটি ঘটনা পশ্চিমা নাস্তিক্যবাদী সমাজের যুক্তি ও আদর্শের দীনতার এক একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। এটি হচ্ছে একটি দিক। দ্বিতীয় যে দিকটি সম্পর্কে পাঠকবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই তা হচ্ছে, আল্লাহর কালাম যে মুসলিম উম্মাহর কত বড় সম্পদ তা আবার আমাদের নতুন করে উপলব্ধি করতে হবে। কারণ এ সম্পদের কারণেই আজ মুসলিম উম্মাহ পশ্চিমাদের ঈর্ষা ও হিংসার পাত্র। কুরআন মজীদ যদিও অবতীর্ণ হয়েছে আরবের উম্মী নবীর ওপর, কিন্তু তা শুধু আরব জাতির জন্য নাজিল হয়নি, তা নাজিল হয়েছে বিশ্ব মানবের জন্য।

কুরআন ইয়াহুদি ও নাসারাকে আহ্বান করেছে কুরআনের সম্পদ সীনায় ধারণের জন্য এবং কুরআনের আলোতে আলোকিত হওয়ার জন্য। বরং তাদের জন্য ঘোষণা করেছে দুই প্রতিদান, কিন্তু বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতা তাদেরকে সত্য গ্রহণের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত করেছে।

কুরআন মজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেন : আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন সেজন্য তারা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে! আমি ইবরাহীমের বংশধরকেও তো কিতাব ও হিকমত প্রদান করেছিলাম এবং তাদেরকে বিশাল রাজ্য দান করেছিলাম। অতঃপর তাদের কতক তাতে বিশ্বাস করেছিল আর কতক তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। দগ্ধ করার জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। (সূরা নিসা : ৫৪-৫৫)।

অন্য জায়গায় বলেন : কিতাবীদের মধ্যে যারা কুফরি করেছে তারা এবং মুশরিকরা চায় না যে, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তোমাদের ওপর কোনো কল্যাণ অবতীর্ণ হোক। অথচ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজ রহমতের জন্য বিশেষরূপে মনোনীত করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। (সূরা বাকারা : ১০৫)।

এ আয়াতে ‘যারা কুফরি করেছে’ অংশটুকুর তাৎপর্য হচ্ছে, যে সকল কিতাবী আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছেন তারা তো কুরআন নাজিল হওয়াকে তাদের জন্যও কল্যাণের বিষয় মনে করতেন। তারা ছিলেন সত্যের প্রতি সমর্পিত এবং সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি থেকে পবিত্র। তারা নিজেদেরকে মনে করতেন আল্লাহর বান্দা, সুতরাং আল্লাহর কালাম ও আল্লাহর রাসূলের ওপর ঈমান আনতে তাদের কোনো বাধা ছিল না। তবে এ ধরনের সৌভাগ্যবানের সংখ্যা তখনও কম ছিল, এখনও কম।

আজ যারা কুরআন মজীদের অবমাননা করে এবং আসমানী কিতাবের অমর্যাদা ও প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে তাদের অসৎ পূর্বসূরীদের অনুসরণ করে তাদের পরিণাম স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন। কুরআন মজীদের এইসব আয়াত এবং বর্তমান সময়ের কুরআন অবমাননার বিভিন্ন ঘটনায় এ সময়ের মুসলমানদের জন্য অনেকগুলো শিক্ষণীয় বিষয় আছে।

প্রথম বিষয় এই যে, এ ধরনের প্রতিটি ঘটনা কুরআনের সত্যতার জীবন্ত প্রমাণ। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তর্জগতের যে সংবাদ দান করেছেন, তারা তাদের কর্মকা-ের মাধ্যমে ওই সংবাদের সত্যতা ঘোষণা করছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান সময়ের ইহুদি-খ্রিস্টান তাদের কর্মকা-ের মাধ্যমে যখন নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেছে তখন তাদেরকে চিনে রাখা মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য। সুতরাং তাদেরকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করা এবং চিন্তা ও কর্মে তাদের অনুসরণ করা যে কত বড় আত্মঘাতী বিষয় হবে সে সম্পর্কে সচেতন হওয়াও মুসলমানের কর্তব্য।

তৃতীয়ত, শত অযোগ্যতা ও পশ্চাৎপদতা সত্ত্বেও মুসলিম জাতি এখনো যে সম্পদের কারণে পশ্চিমাদের ঈর্ষা ও বিদ্বেষের লক্ষ্যবস্তু তা হচ্ছে আল্লাহর কালাম ও দ্বীন ইসলাম। সুতরাং অন্য সকল ক্ষেত্রে অগ্রগামিতার প্রচেষ্টার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য, এই সম্পদকে জীবন দিয়ে রক্ষা করা, কুরআন মজীদের সাথে সম্পর্ক কায়েম করা, কুরআনের প্রতি ঈমান ও আস্থা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করা, কুরআনের সহীহ-শুদ্ধ তিলাওয়াত ও কুরআনের শিক্ষা-নির্দেশনা নিজে জানা ও মানা এবং সন্তান-সন্ততি, পরিবার পরিজনকে জানানো ও মানানো।

এমনকি কুরআন বিদ্বেষী ব্যক্তি ও সম্প্রদায় কিংবা তাদের সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজনকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করার চেষ্টা করা কর্তব্য, আজ প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম নিজ নিজ এলাকায় কুরআনী মকতব কায়েমের দৃঢ় সংকল্প করতে পারেন এবং কুরআনী শিক্ষা বিস্তারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করতে পারেন। এটাই হবে কুরআন-বিদ্বেষী সম্প্রদায়ের কুরআন-অবমাননার সবচেয়ে কার্যকর জবাব।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

ভূমিকম্পের শঙ্কা : প্রস্তুতি নিতে হবে মোকাবিলার

ভূমিকম্পের শঙ্কা : প্রস্তুতি নিতে হবে মোকাবিলার

ধর্মীয় সম্প্রীতির এদেশ : যার মূলে আছে ইসলামের আদর্শ

ধর্মীয় সম্প্রীতির এদেশ : যার মূলে আছে ইসলামের আদর্শ

গণস্বার্থে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে

গণস্বার্থে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে

কুষ্টিয়ায়  স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০