ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

অন্যের সাথে ওই আচরণ করি যা পেলে আমি খুশি হই-১

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ

০৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

কুরআন মজীদের প্রসিদ্ধ আয়াত : হে ইমানদারগণ! পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। (সূরা বাকারা : ২০৮)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর’। পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করার অর্থ কী? এই যে আমরা মসজিদে প্রবেশ করেছি, পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করেছি। অর্থাৎ আমাদের দেহের কোনো অংশ মসজিদের বাইরে নেই।

যদি আমার পা মসজিদের ভেতরে থাকে আর মাথা মসজিদের বাইরে তাহলে বলা হবে না যে, আমি মসজিদে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করেছি। তো আল্লাহ মুমিনদের আদেশ করেছেন, ‘তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর।’ অর্থাৎ তোমাদের জীবনের সকল অংশ যেন ইসলামের ভেতরে চলে আসে। জীবনের কিছু অংশ ইসলামের ভেতরে আর কিছু অংশ ইসলামের বাইরে, কিছু অংশে ইসলামের অনুসারী আর কিছু অংশে ইসলাম থেকে খারিজ এমন যেন না হয়। আর এ আদেশ আল্লাহ কোনো অমুসলিমকে করেননি। এ আদেশ করেছেন মুমিনকে, মুসলিমকে।

ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করতে হলে সর্বপ্রথম ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে জানতে হবে, ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের বিস্তৃতি সম্পর্কে জানতে হবে। তা জানলে মানার চিন্তা আসবে। না জানলে মানার চিন্তাও আসবে না। তাই ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের ব্যাপকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

আলিমগণ ইসলামের মৌলিক বিধানাবলী পাঁচটি শিরোনামে তুলে ধরেছেন : আকিদা, ইবাদত, মোয়ামালাত, মোয়াশারাত ও আখলাক। আকিদা অর্থ বিশ্বাস। এটি অনেক ব্যাপক বিষয়। ইসলামের একটি মৌলিক বিভাগ। ইসলাম মানুষকে সঠিক ও যথার্থ আকিদা শিক্ষা দান করে। যেমন আল্লাহ এক, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল ও শেষ রাসূল, কিয়ামত হবে, পুনরুত্থান হবে ইত্যাদি।

দ্বিতীয় বিভাগ, ইবাদত। ইবাদত মানে উপাসনা। ইসলামে ইবাদতের প্রসঙ্গ অনেক বিস্তৃত। আমরা যে নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ করি, জাকাত দেই, কুরবানি করি এগুলো ইসলামের একেকটি ইবাদত। তৃতীয় বিভাগ, মোয়ামালাত তথা লেনদেন। লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের অনেক বিধান আছে। একটি মৌলিক বিধান, বেচাকেনা হালাল, রিবা বা সুদ হারাম। চতুর্থ বিভাগ, মোয়াশারা। পারস্পরিক আচরণ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একের সাথে অন্যের আচরণ কী হবে এটি ইসলামের অনেক বড় শাখা।

পঞ্চম বিভাগ, আখলাক। স্বভাব-চরিত্র। যেমন এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল (সা.) তার প্রিয় সাহাবি হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) কে বলেছেন, হে আমার বৎস! তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তুমি সকাল-সন্ধ্যা এমন অবস্থায় অতিবাহিত করবে যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই, তাহলে তাই কর। কারণ এটি আমার সুন্নাহ। আর যে আমার সুন্নাহকে জিন্দা করে সে আমাকে ভালোবাসে। যে আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (জামে তিরমিজি : ২৬৭৮)।

আমরা তো সুন্নত বলতে বুঝি নামাজের সুন্নত, রোজার সুন্নত, হজের সুন্নত ইত্যাদি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কারো প্রতি বিদ্বেষ না থাকা, সবার প্রতি অন্তর নির্মল থাকা এটিও তার সুন্নত। তো আখলাক সম্পর্কে কুরআন মাজীদে অনেক আয়াত রয়েছে এবং হাদিসের কিতাবসমূহে অনেক হাদিস রয়েছে।

এই যে বিভাগগুলো এর মধ্য থেকে সাধারণত আকায়েদ ও ইবাদতকে দ্বীনের অংশ মনে করা হয়। লেনদেনকেও কিছু মানুষ মনে করেন ইসলামী শিক্ষার অধীন। কিন্তু এক্ষেত্রেও অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। তারা মনে করে, আমাদের লেনদেন আমরা যেভাবে ইচ্ছা করব, যেভাবে লাভ হয় সেভাবে করব।

আর মোয়াশারা এবং আখলাক! হাকিমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানবী (রাহ.) বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ অসচেতন। বিশেষভাবে মোয়াশারা বা পারস্পরিক আচরণ সম্পর্কে’। তারা নফল নামাজ পড়াকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, বুজুর্গী ও দ্বীনদারী মনে করে কিন্তু কষ্টদায়ক আচরণ থেকে বেঁচে থাকাকে দ্বীনদারীর বিষয় মনে করে না। তারা এটাকে ব্যক্তিগত সভ্যতা মনে করে। কেউ তা লক্ষ্য করলে সে সভ্য মানুষ। না করলে বড় জোর সে সভ্য-ভদ্র নয়। তবে দ্বীনদার থাকতে কোনো অসুবিধা নেই। কী ভয়াবহ ধারণা, অসভ্য অথচ দ্বীনদার। এটা কীভাবে সম্ভব?

সহিহ মুসলিমে একটি হাদিস আছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : যে চায় তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ইমান রাখে। আর মানুষের সাথে তেমন আচরণ করে যেমন আচরণ পেতে সে পছন্দ করে’।

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জালেমের সহযোগী-সমর্থকও জালেম
আল কুরআনে মানব হত্যার শাস্তি-২
আল-কুরআনে মানবহত্যার শাস্তি-১
মুমিন কখনো বেপরোয়া হয় না-২
মুমিন কখনো বেপরোয়া হয় না-১
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত