সহনশীলতার প্রতীক নবী করিম (সা.)

Daily Inqilab মাওলনা উবায়দুর রহমান খান নদভী

০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০১ এএম

হুজুর আকরাম (সা.)-এর সবর, সহনশীলতা ও ক্ষমার গুণাবলি নবুওয়াতের মহোত্তম গুণাবলির অন্যতম। হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কিংবা ধনৈশ^র্যের খাতিরে কারও কাছ থেকে প্রতিশোধ নেননি; কিন্তু এমন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন, যে আল্লাহর হালাল করা বস্তুকে হারাম সাব্যস্ত করেছে; আর এ ধরনের লোকের কাছ থেকে আল্লাহর ওয়াস্তেই প্রতিশোধ নিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সর্বাধিক কঠিন সবর ছিল ওহুদ যুদ্ধে, যেখানে কাফেররা তাঁর সাথে যুদ্ধ ও মোকাবিলা করে এবং গুরুতর কষ্ট দেয়। কিন্তু তিনি কেবল সবর ও ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাদের প্রতি স্নেহ ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে তাদের এ অন্যায় মূর্খতাপ্রসূত কাজকে ক্ষমার্হ সাব্যস্ত করে বলেছেন, ‘আল্লাহুম্মা ইহদি ক্বাওমি ফা ইন্নাহুম লা ইয়া’লামুন’। অর্থাৎ, হে আল্লাহ আমার সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করুন। কেননা, ওরা অজ্ঞ। এক রেওয়াতে আছে, হে আল্লাহ ওদেরকে ক্ষমা করুন।

কিন্তু ব্যাপারটি সাহাবায়ে কেরামের কাছে অসহনীয় ঠেকে। তারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি ওদের জন্য বদদোয়া করুন, যাতে ওরা নির্মূল হয়ে যায়। তিনি জবাব দিলেন, আমি অভিসম্পাত করার জন্য প্রেরিত হইনি, বরং আমি সত্যের দাওয়াত ও বিশ^জাহানের জন্যে রহমতরূপে প্রেরিত হয়েছি। (শিফা; মাদারিজুন নবুওয়াত)।
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর পথে আমাকে যতটুকু ভয় দেখানো হয়েছে, ততটুকু অন্য কাউকে দেখানো হয়নি। আল্লাহর পথে আমাকে যতটুকু নির্যাতিত করা হয়েছে, ততটুকু অন্য কাউকে করা হয়নি। একবার ত্রিশটি দিবা-রাত্র আমার এমন অতিবাহিত হয়েছে, যখন আমার ও বেলালের জন্যে এমন কোনো আহার্য বস্তু ছিল না, যা কোনো প্রাণী খেতে, সেই বস্তু ছাড়া, যা বেলাল তার বগলে লুকিয়ে রেখেছিল। (মাআরিফুল হাদিস; শামায়েল)।

মক্কার কাফেররা নবুওয়াতের একুশ বছর পর্যন্ত রাসূলে আকরাম (সা.) ও তাঁর নাম উচ্চারণারীদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে। জুলুম উৎপীড়নের এমন কোনো পদ্ধতি ছিল না, যা ওরা প্রয়োগ করেনি। অবশেষে ওরা তাকে বাস্তুভিটা ও স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের এই জঘন্য শত্রুদল পুরোপুরিভাবে রাসূলে আকরাম (সা.)-এর দয়া ও কৃপার পাত্র হয়ে পড়ে। তাঁর একটি অঙ্গুলির ইশারা ওদের সবাইকে রক্তগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে পারত। কিন্তু বাস্তবে হয়েছি কী!

এককালের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কুরাইশ সরদাররা ভয় ও অনুশোচনার ভারে মাথা নত করে রাসূলে কারীম (সা.)-এর সামনে দণ্ডায়মান। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা আমার নিকট কিরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো? ওরা সম্মিলিত কণ্ঠে জবাব দিলো, হে সত্যবাদী, হে বিশ্বস্ত, আপনি আমাদের সম্ভ্রান্ত ভাই, সম্ভ্রান্ত ভ্রাতুষ্পুত্র। আমরা সর্বদাই আপনাকে দয়ালরূপে পেয়েছি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, অদ্য আমি তোমাদের তা-ই বলব, যা হযরত ইউসুফ (আ.) তার ভ্রাতাদের বলেছিলেন। তিনি বললেন, তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। যাও আজ তোমরা সকলেই মুক্ত। (শিফা; সীরাতে ইবনে হিশাম)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
সন্তানদের নেক আমলের উৎসাহ প্রদান
আরও
X
  

আরও পড়ুন

লজ্জাস্থানে হাত লাগলে অজু ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে।

লজ্জাস্থানে হাত লাগলে অজু ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নামে লুটপাট চলত ফ্যাসীবাদের আমলে — ডিসি আরেফীন

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নামে লুটপাট চলত ফ্যাসীবাদের আমলে — ডিসি আরেফীন

৯ মাস পর বেরোবির ছাত্রলীগ-শিক্ষকসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

৯ মাস পর বেরোবির ছাত্রলীগ-শিক্ষকসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর :  বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে