মজলুম হওয়ার সুফল ধরে রাখি-১
১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

জুলুম আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত হারাম কাজ। আল্লাহ তায়ালা জুলুম করেন না এবং তিনি জুলুম ও জুলুমকারীকে পছন্দও করেন না। হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন : আমার বান্দারা! আমি নিজের জন্য জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের পরস্পরের ক্ষেত্রেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একে অপরের প্রতি জুলুম করো না। (সহিহ মুসলিম : ২৫৭৭) জুলুমের পরিণতি বড় ভয়াবহ। জালেম তো মনে করে, জুলুম ও নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে সে মজলুমদের ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেছে এবং সফল হয়ে গেছে; অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : (হে নবী!) আপনি বলে দিন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আপন স্থানে নিজেদের কাজ করতে থাকো, আমিও কাজ করছি। শিগগিরই তোমরা জানতে পারবে, কে লাভ করবে দুনিয়ার (শুভ) পরিণাম। নিশ্চয় জালেমরা সফল হবে না। (সূরা আনআম : ১৩৫)
জালেমকে আল্লাহ কখনো কখনো ছাড় দেন, তবে ছেড়ে দেন না। কিন্তু হতভাগা জালেম এ ছাড় পেয়ে আরো উদ্ধত ও অহঙ্কারী হয়ে ওঠে। সে ভেবে দেখে না, তার আগেও বহু জালেম ছিল, যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে : সে কি জানে না, আল্লাহ তার আগে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের এমন এমন ব্যক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা ছিল তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং বেশি জনবলের অধিকারী? (সূরা কাসাস : ৭৮)
হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আল্লাহ জালেমকে অবকাশ দেন। এরপর যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন আর তাকে ছাড়েন না। এরপর নবী (সা.) এ আয়াত পাঠ করেন : (এমনই হয় তোমার রবের পাকড়াও, যখন তিনি জনপদসমূহকে পাকড়াও করেন এ অবস্থায় যে, তারা জুলুমে লিপ্ত। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও অতি মর্মন্তুদ, অতি কঠিন। সূরা হুদ : ১০২ (সহিহ বুখারি : ৪৬৮৬)
তাই সবারই কর্তব্য জুলুম থেকে বেঁচে থাকা। বিশেষত যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা জমিনের শাসনভার ন্যস্ত করেছেন তাদের এ বিষয়ে আরো বেশি সতর্ক থাকা উচিত। মুআজ ইবনে জাবাল রা.-কে যখন নবী (সা.) ইয়েমেনের দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন তখন তাকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ করেছেন : মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ তার এবং আল্লাহর মাঝে কোনো আড়াল নেই। (সহিহ বুখারি : ১৪৯৬)
শাসকের আশেপাশে যারা থাকে, তাদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। তাদের সম্পর্কেও হাদিস শরিফে কঠিন ধমকি রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : শোনো! তোমরা কি শুনেছ, আমার পরে বিভিন্ন শাসক আসবে; যে ব্যক্তি তাদের কাছে গিয়ে তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে প্রতিপালন করবে এবং তাদের জুলুম-অত্যাচারে তাদের সহযোগিতা করবে, সে আমার নয় এবং আমিও তার নই। সে হাউজে (কাউসারে) আমার কাছে আসতে পারবে না। আর যে তাদের কাছে যাবে না, তাদের মিথ্যাকে সত্য প্রতিপালন করবে না এবং তাদের জুলুম-নির্যাতনে তাদের সাহায্য করবে না, সে আমার এবং আমিও তার। সে হাউজে আমার কাছে আগমন করবে। (সুনানে নাসায়ি : ৪২০৮)
মোট কথা, জালেমকে ও জালেমের দোসরদেরকে আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ঘৃণা করেন। অপরদিকে মজলুমের প্রতি তিনি বিশেষ করুণা বর্ষণ করেন। তাঁর ও মজলুমের মাঝে তিনি কোনো আড়াল রাখেন না। মজলুমের দোয়া তিনি কখনো ফিরিয়ে দেন না। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। ইফতারের আগ পর্যন্ত রোজাদারের দোয়া, ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া। তার দোয়াকে আল্লাহ মেঘের ওপরে নিয়ে যান, তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেন আর আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জতের কসম! কিছু বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব। (জামে তিরমিজি : ৩৫৯৮)
মজলুমের প্রতি আল্লাহ সাহায্যের ওয়াদা করেছেন। কিছুটা বিলম্বে হলেও আল্লাহ মজলুমকে সাহায্য করেন এবং সবশেষে তাকেই বিজয়ের আসনে অধিষ্ঠিত করেন। আল্লাহর ইচ্ছার সামনে জালেমকে পরাস্ত হতেই হয় এবং তার সমস্ত কূটকৌশল ভেস্তে যায়। ইতিহাসে এর বহু নজির আছে।
কুরআন মাজিদে ফেরাউন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় ফেরাউন ভূমিতে উদ্ধত হয়ে উঠেছিল এবং তার অধিবাসীদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের এক দলকে দুর্বল করে রেখেছিল। তাদের পুত্রদের সে জবাই করত আর তাদের নারীদের জীবিত ছেড়ে দিত। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন। আর আমি চাচ্ছিলাম, সে দেশে যাদের দুর্বল করে রাখা হয়েছিল, তাদেরকে নেতা বানিয়ে দিতে এবং তাদেরকে (সে দেশের ভূমি ও সম্পদের) উত্তরাধিকারী করে দিতে এবং (চাচ্ছিলাম,) সে দেশে তাদেরকে ক্ষমতাসীন করতে আর ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্যদেরকে সেই জিনিস দেখাতে, যার আশঙ্কা তারা তাদের (অর্থাৎ বনি ইসরাইলের) দিক থেকে করছিল। (সূরা কাসাস : ৪-৬)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

লজ্জাস্থানে হাত লাগলে অজু ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নামে লুটপাট চলত ফ্যাসীবাদের আমলে — ডিসি আরেফীন

৯ মাস পর বেরোবির ছাত্রলীগ-শিক্ষকসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা
লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে