মজলুম হওয়ার সুফল ধরে রাখি-৩
১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ইসলাম ঝগড়া-বিবাদ পছন্দ করে না। তাই লড়াই-ঝগড়ায় লিপ্ত না হয়ে অন্য কোনো উপায়ে যদি জুলুম থেকে আত্মরক্ষা করা এবং নিজের হক আদায় করা সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই করা কর্তব্য। বরং যে ব্যক্তি সাধারণ দুনিয়াবী কোনো বিষয়ে লড়াই-ঝগড়া থেকে বাঁচার উদ্দেশে নিজের হকের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়, তার জন্য হাদিসে মহা পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করে আমি তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে একটি প্রাসাদের যিম্মাদারি নিলাম। (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮০০)।
জালেম থেকে বদলা নিতে চাইলে অবশ্যই শরীয়তের যাবতীয় নীতি ও বিধান রক্ষা করে নিতে হবে, তবে ক্ষমার আচরণ করাটাই সর্বোত্তম। জালেমের প্রতি নিজেদের মনের ঝাল মেটানোর জন্য যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বা কাজ করা হয়, এর দ্বারা কিন্তু মজলুমিয়াতের সুফল কমে যায়। জালেম থেকে বদলা নিতে চাইলে বদলা নেয়ার সুযোগ আছে, তবে অবশ্যই তা হবে শরীয়তের সীমারেখার ভেতরে থেকে। জালেম থেকে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শরীয়তের কোনো নীতি ও বিধান লঙ্ঘন করা যাবে না।
বরং শরীয়তের যাবতীয় উসূল ও আহকাম রক্ষা করেই প্রতিশোধ নিতে হবে। আর কেউ যদি ক্ষমার আচরণ করে তবে তার জন্যও রয়েছে প্রতিদান। ইরশাদ হয়েছে : মন্দের বদলা অনুরূপ মন্দ। তবে যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপোষ-নিষ্পত্তি করে নেয়, তার সওয়াব আল্লাহর যিম্মায়। নিশ্চয় তিনি জালেমদের পছন্দ করেন না। যারা নিজেদের ওপর জুলুম হওয়ার পর (সমপরিমাণে) বদলা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ তো তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। এরূপ লোকদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। আর যে ধৈর্যধারণ করে ও ক্ষমা করে দেয়, তো এটা অবশ্যই অত্যন্ত দৃঢ় মনোবলের কাজ। (সূরা শূরা : ৪০-৪৩)।
মজলুম যদি জালেমের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে মজলুমিয়াতের সমস্ত সুফল একদম বরবাদ হয়ে যায়। তখন মজলুম আর মজলুম থাকে না, বরং সে নিজেও জালেম হয়ে যায়। ফলে জালেমের যতো শাস্তি ও ধমকি কুরআন-সুন্নাহ্য় বর্ণিত হয়েছে, সব তার ওপরেও পতিত হবে। জালেম হয়তো কারো থেকে অন্যায়ভাবে জমি আত্মসাৎ করেছে। কিন্তু যখন সুযোগ আসল তখন মজলুম জালেমের গোটা বাড়িই জ্বালিয়ে দিল। এতে তার পরিবারের অন্যান্য নিরপরাধ লোকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
জালেম হয়তো কাউকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করল বা তার অঙ্গহানি করল। পরবর্তীতে মজলুম সুযোগের অসদ্ব্যবহার করে জালেমকে জানেই মেরে ফেলল। মনে রাখতে হবে, এই সবই জুলুম। এগুলোর কারণে মজলুমের মজলুমিয়াত তো নষ্ট হবেই, উল্টো এখন সে নিজেও জালেম। ফলে তাকেও এখন জুলুমের শাস্তি ভোগ করতে হবে- দুনিয়াতে এবং আখেরাতে।
জালেম যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তাহলে তার থেকে কিসাস ও বদলা নেয়ার অধিকার আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। নিহত ব্যক্তির অভিভাবক ও ওয়ারিসগণ সরকারকে বলে ও আদালতে গিয়ে কিসাস গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। যেমন : শরীয়তের বিধান ও আইন অমান্য করা, হত্যাকারীর পরিবার বা তার দলের অন্য কাউকে হত্যা করা বা নির্যাতন করা ইত্যাদি।
কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা সেই প্রাণকে হত্যা করো না, যার হত্যা আল্লাহ হারাম করেছেন, তবে যথাযথ কারণ হলে (ভিন্ন কথা)। আর যাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় আমি তার অভিভাবককে (কিসাস গ্রহণের) অধিকার দিয়েছি। সুতরাং সে যেন হত্যার বিষয়ে সীমালঙ্ঘন না করে। সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছে। (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৩)।
সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে আন্দোলন-বিক্ষোভ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও স্থাপনা ধ্বংস, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এবার তো দেখা গেল, আন্দোলন চলাকালে ও সরকার পতনের পরও এ ধারা বেশ কয়েকদিন অব্যাহত ছিল। ইসলামের শিক্ষা হলো : ‘সুযোগ পেলে, তো সদ্ব্যবহার কর।’ সুযোগের অসদ্ব্যবহার অন্যায়। কিন্তু এসব মুহূর্তে কতো জায়গায় কতোভাবে যে সুযোগের অন্যায় ব্যবহার হতে থাকে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কে না জানে, কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির মালিক না কোনো ব্যক্তি, না কোনো সরকার।
রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির মালিক হলো সমগ্র জাতি। সুতরাং এগুলো মস্তবড় আমানত। এগুলো ধ্বংস করা বা নিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে জুলুম, আমানতের খেয়ানত এবং আত্মসাৎ। এটা কবীরা গুনাহ। কেউ এমনটা করে থাকলে তার কর্তব্য হলো অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করা। সেইসঙ্গে নিয়ে যাওয়া জিনিস ফেরত দেয়া আর ভাঙচুর বা ধ্বংস করে থাকলে তার ক্ষতিপূরণ দেয়া। অবশ্য কেউ কেউ নিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র ফেরত দিয়েছেন, যা প্রশংসনীয়।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ