অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়-২

Daily Inqilab মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ

১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

ইসলাম ধর্ম হলো সুস্পষ্ট ও আলোকিত একটি পথ। যারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ঈমানের আলোয় ইসলামের পথে চলবে, তারা পুরোপুরি আলোকিত মানুষ। তারা ধর্মান্ধ নয়; বরং ধর্মপ্রাণ। চোখ আছে, ভালো-মন্দ দেখতে ও বুঝতে পারে এবং আলো ও সত্যকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে চায় বলেই তারা দ্বীনের অনুশাসন মেনে চলে। গোমরাহীর অন্ধকারে পথ হারায় না। অন্যদিকে যারা ধর্মপ্রাণ মানুষকে ‘ধর্মান্ধ’ বলে, তাদের অনেকে প্রবৃত্তিপূজারী, আবার অনেকে ধর্মবিদ্বেষী। তাদের চর্মচক্ষু আছে বটে, কিন্তু তাদের হৃদয় অন্ধকার। তাই তারা অধর্ম ও গোমরাহীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। সে অন্ধকারকে তারা আবার আলো ও প্রগতি বলে বিভ্রমে পড়ে আছে। আল্লাহ তা‘আলা গত আলোচনায় আলোচ্যকৃত আয়াতসমূহে তাদেরকেই লক্ষ করে বলেছেন, ‘অন্ধ ও বধির’ এবং তারা ‘অন্ধকার দ্বারা পরিবেষ্টিত’। তারা যা কিছুুকে আলো বলছে এবং যে আলোর দিকে মানুষকে ডাকছে, আল্লাহ তা‘আলা সেগুলোকে অন্ধকার বলেছেন। তারা যাদেরকে অন্ধ বলছে, আল্লাহ তাদেরকেই চক্ষুষ্মান বলেছেন। আর কে না জানে, আল্লাহ তা‘আলার কথাই চিরন্তন সত্য।

এই প্রকৃত অন্ধরা কিয়ামতের দিন কবর থেকে চোখেরও অন্ধত্ব নিয়ে পুনরুত্থিত হবে। তখন তারা বলবে, আল্লাহ! আমি দুনিয়ায় থাকতে দেখতে পেতাম। আজ আপনি আমাকে অন্ধ করে ওঠালেন কেন? এ কথা আল্লাহ তা‘আলা কোরআন কারিমে এভাবে বলেছেন : আর যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সঙ্কটময়। আর কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে ওঠাব। সে বলবে, হে রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে ওঠালেন কেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম! আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ সেভাবেই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে। (সূরা ত্বহা : ১২৪-১২৬)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্ধ হয়ে থেকেছে সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট থাকবে। (সূরা বনি ইসরাইল-৭২) আর যারা দুনিয়ায় প্রকৃত চক্ষুষ্মান, তারা আখিরাতেও আল্লাহর পক্ষ থেকে আলোপ্রাপ্ত হবে। তাদের কাছে সেদিন ওই অন্ধরাও আলো চাইবে। আল্লাহ তা‘আলা কোরআন কারিমে বলেন : সেদিন তুমি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীগণকে দেখবে, তাদের আলো তাদের সামনে ও তাদের ডান দিকে ধাবিত হচ্ছে (এবং তাদেরকে বলা হবে), তোমাদের জন্য আজ এমন সব উদ্যানের সুসংবাদ, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে, যাতে তোমরা সর্বদা থাকবে। এটিই মহা সাফল্য।

সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা মুমিনগণকে বলবে, আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা করো, যাতে তোমাদের আলো থেকে আমরাও কিছুটা আলো গ্রহণ করতে পারি। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা তোমাদের পেছনে ফিরে যাও, তারপর আলো তালাশ করো। তারপর তাদের মাঝখানে স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর। তার মধ্যে থাকবে একটি দরজা, যার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে শাস্তি। তারা মুমিনগণকে ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? মুমিনগণ বলবে, হ্যাঁ, ছিলে বটে কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদে ফেলেছ। তোমরা অপেক্ষা করছিলে, সন্দেহে নিপতিত ছিলে এবং মিথ্যা আশা তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম আসল। আর সেই মহাপ্রতারক (অর্থাৎ শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করে যাচ্ছিল। (সূরা হাদিদ : ১২-১৪)

অতএব যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানের আলো দিয়ে চক্ষুষ্মান করেছেন, তারা অন্ধ বা ধর্মান্ধ নয়, পথহারা বা ভ্রান্তপথেও নয়; বরং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকেই চক্ষুষ্মান ও আলোকিত বলেছেন এবং তারাই সঠিক পথপ্রাপ্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ঈমানহারা অন্ধদের চেয়ে উত্তম বলেছেন। চক্ষুষ্মান ঈমানদারগণ এবং ঈমানহারা অন্ধরা কিছুতেই বরাবর হতে পারে না। আর তাই তাদের কর্তব্য হলোÑ জীবনের সব ক্ষেত্রে এ আলোয় পথ দেখে চলা।

এ আলো সঙ্গে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করে চললেই তারা সফল হতে পারবে, গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। সেই সঙ্গে তাদের দায়িত্ব, সর্বত্র এ আলো ছড়িয়ে দেয়া। যারা এ আলো পায়নি, তাদের কাছে তা পৌঁছে দেয়া, আর যারা মুখ ফিরিয়ে অন্ধকারে উ™£ান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের কাছে এ আলোর মাহাত্ম্য তুলে ধরা।
মুমিনদের একমাত্র অভিভাবক আল্লাহ তা‘আলা। আর যারা আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করেনি, তারা শয়তানের অনুসারী। যারা আল্লাহর অভিমুখী হয়, আল্লাহ তাদেরকে অন্তর্চক্ষু দান করেন এবং অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসেন। আর শয়তান তার অনুসারীদের প্রলোভন দেখিয়ে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। যার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করে তার হৃদয়ে ঈমানের আলো দিয়েছেন এবং তাকে সঠিক পথে নিয়ে এসেছেন; এর পরও যদি সে হেলায় খেলায় পথ হারিয়ে ফেলে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আর কেউ নয়।

চক্ষুষ্মান হওয়া এবং নিজের ঠিকানা জানার পরও লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারা চরম নির্বুদ্ধিতা। অতএব প্রত্যেক মুমিনের আবশ্যক, আল্লাহ যে তাকে ঈমানের আলো দান করে চক্ষুষ্মান বানিয়েছেন, সে জন্য আল্লাহর শোকরগোজার হওয়া এবং এ আলোয় নিজেকে পরিপূর্ণ আলোকিত করে ইসলামের পথে চলা।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-৩
জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
আরও
X
  

আরও পড়ুন

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহবান তারেক রহমানের

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহবান তারেক রহমানের

কাল মস্কোতে বিজয় কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন ২৯ জন বিদেশি নেতা

কাল মস্কোতে বিজয় কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন ২৯ জন বিদেশি নেতা

হুতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধের ঘোষণা ট্রাম্পের

হুতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধের ঘোষণা ট্রাম্পের

ভারতের তিন রাফালসহ ছয় বিমান ধ্বংস

ভারতের তিন রাফালসহ ছয় বিমান ধ্বংস

আইএমএফ’র ঋণ : নত হচ্ছে না বাংলাদেশ

আইএমএফ’র ঋণ : নত হচ্ছে না বাংলাদেশ

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-৩

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-৩

আকাশযুদ্ধে ধরাশায়ী রাফাল : আর্থিক ক্ষতির মুখে ফ্রান্সের দাসো

আকাশযুদ্ধে ধরাশায়ী রাফাল : আর্থিক ক্ষতির মুখে ফ্রান্সের দাসো

কী আছে ৩৭৫০ কোটি টাকার রাফালে?

কী আছে ৩৭৫০ কোটি টাকার রাফালে?

‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে ইরান মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত’

‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে ইরান মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত’

তৃতীয় পক্ষ নয়, কাশ্মীর ইস্যুতে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষেই যুদ্ধ করবে চীন -খাজা আসিফ

তৃতীয় পক্ষ নয়, কাশ্মীর ইস্যুতে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষেই যুদ্ধ করবে চীন -খাজা আসিফ

ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার আহবান বাংলাদেশের

ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার আহবান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের ডন-এর প্রতিবেদন : ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে

পাকিস্তানের ডন-এর প্রতিবেদন : ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে

ভারতের এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয় -নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারতের এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয় -নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না সরকার

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না সরকার

পাকিস্তানের ভূখন্ডে ভারতের সামরিক হামলা গোটা অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ

পাকিস্তানের ভূখন্ডে ভারতের সামরিক হামলা গোটা অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ

একনেক শেষে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব না দিয়ে পালিয়েছে পিডি

একনেক শেষে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব না দিয়ে পালিয়েছে পিডি

খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৭৯ ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন

খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৭৯ ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন

আ. লীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিলো ‘জুলাই ঐক্য’

আ. লীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিলো ‘জুলাই ঐক্য’

সুশাসন ও স্বচ্ছতায় ঘুরে দাঁড়াবে দেশের আর্থিক খাত : গভর্নর

সুশাসন ও স্বচ্ছতায় ঘুরে দাঁড়াবে দেশের আর্থিক খাত : গভর্নর

সোনাইমুড়ীতে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমামকে পেটানোর অভিযোগ

সোনাইমুড়ীতে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমামকে পেটানোর অভিযোগ