ক্ষমতার দম্ভ চিরস্থায়ী নয়-১
১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯ এএম
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে সংযোজিত হয় এক নতুন অধ্যায়। ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থান এবং তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে এদিন পতন ঘটে সুদীর্ঘ স্বৈরশাসনের। থেমে যায় অত্যাচার ও দুর্নীতির সুদীর্ঘ ধারা। কবর রচিত হয় জগদ্দল পাথরের মতো চেপে থাকা একটি অবৈধ সরকারের। পালাতে বাধ্য হন সে সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নেন। আসে বাংলাদেশের নতুন বিজয় ও স্বাধীনতা। যারা ক্ষমতার জোরে দেশকে তাদের অত্যাচার ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন, তাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। অনেকে গ্রেপ্তার হন। নিষ্ঠুর নেত্রী ব্যাপক গণহত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার ফন্দি আঁটলেও মহান আল্লাহর ফয়সালার সামনে তার সকল অপকৌশল ও অশুভ পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়ে।
ইতিহাস বলে, জুলুম করে সাময়িকভাবে পার পাওয়া গেলেও মহান আল্লাহর কঠিন পাকড়াও থেকে বাঁচা সম্ভব হয় না। তিনি জালেমকে দুনিয়া ও আখেরাতে পাকড়াও করেন। এটাই কুরআনের সত্য। ইতিহাসের সত্য। তবে তিনি জালেম শক্তিকে কিছুকাল অবকাশ দেন। তারপর তাঁর নির্ধারিত সময়ে তিনি মজলুমদের সাহায্য করেন এবং জালেম শক্তিকে এমনভাবে পাকড়াও করেন, যা তারা কল্পনাও করতে পারে না। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সুদীর্ঘ স্বৈরশাসনের হোতাদের করুণ পরিণতিও সমগ্র মানব জাতিকে নতুন করে এ বার্তাই দিচ্ছে যে, জুলুম ও সীমালঙ্ঘন করে কেউ রেহাই পাবে না।
পতিত স্বৈর-শাসকগোষ্ঠী যে দেশকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলে ধরে নিয়েছিল, প্রাণে বাঁচতে সে দেশ ছেড়ে যেতে হবেÑ তা কি তারা কেউ কোনোদিন ভেবেছিল? অতীতেও সীমালঙ্ঘনকারীদের পরিণতি এমনই হয়েছিল। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইহুদিদের বনু নাযীর গোত্র সম্পর্কে বলেন : তোমরা কল্পনাও করনি যে, তারা বের হয়ে যাবে। এবং তারা মনে করেছিল, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি এমন এক দিক থেকে আসল, যা ছিল তাদের ধারণাতীত। এবং আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন। (সূরা হাশর : ০২)।
পবিত্র কুরআনের এ মহাবাণীর আরেকটি নিদর্শনই যেন এবার বাংলাদেশে দেখা গেল। মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার দরবারে মুক্তিকামী অগণিত মানুষের সকাতর আহাজারি ছিল দেশময়। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সমবেত লাখ লাখ ঈমানদার মানুষের ওপর পরিচালিত বর্বর হামলা ও গণহত্যাসহ অসংখ্য জুলুমের বিচার বা প্রতিকারের কোনো পথ ছিল না। গুম খুন গ্রেপ্তার আতঙ্কে দেশের মানুষ ছিল অসহায়। কোনো দল বা গোষ্ঠী ঐ নিষ্ঠুর শক্তিকে পরাস্ত করার কোনো উপায় খুঁজে পায়নি।
বারবার প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিজেদের জন্য ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হচ্ছিল। অবশেষে মহান আল্লাহ তাঁর কুদরতে এমন এক উপায় বের করলেন, যা কারোর কল্পনায়ও ছিল না। তিনি দেশের নিরস্ত্র ছাত্রসমাজকে হিম্মত দান করলেন। প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে জালেমের অস্ত্র ও গুলির মুখে বুক পেতে দেয়ার সাহস দিলেন। আর অল্প দিনের মধ্যে এক অসাধারণ ইতিহাস রচিত হয়ে গেল।
কেউ কি কল্পনা করতে পেরেছিল, এমনটি ঘটবে? ক্ষমতাগর্বী নেতৃবর্গ কি কল্পনা করতে পেরেছিলেন, এত দ্রুত এত বড় একটা বিপ্লব ঘটে যাবে? তাদের কৃতকর্মের এই করুণ পরিণতি বরণ করতে হবে? নিজ দলের ক্ষমতা রক্ষায় বেপরোয়া সশস্ত্র ঘাতকরা কি অনুমান করতে পেরেছিল, এতো দ্রুত তাদের দিন ফুরিয়ে যাবে? কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর নির্ধারিত সময়ে জাতির পরিত্রাণের পথ করে দিয়েছেন। তিনি সব দেখেছেন এবং নির্ধারিত সময়ে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি মোটেও উদাসীন ছিলেন না। পবিত্র কুরআনে তিনি ইরশাদ করেন : তুমি কখনো মনে করো না যে, জালেমরা যা করে, সে বিষয়ে আল্লাহ গাফেল। (সূরা ইবরাহীম : ৪২)।
ক্ষমতাগর্বী সেই স্বৈরশাসকরা আজ কোথায়? তাদের সাজানো সুখের বাগান থেকে তারা আজ কত দূরে! রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে গড়া প্রাসাদ-অট্টালিকা ও গাড়ি-বাড়ি আজ বিবর্ণ পড়ে আছে। সম্পদের পাহাড় গড়েও তারা আজ অসহায়। কীভাবে দিনগুজরান করছেন এখন তারা? মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অতীতের জালেমদের পরিণতির কথা কতো সুন্দর করে বলে দিয়েছেন : তারা ছেড়ে গেছে কতো উদ্যান ও প্রস্রবণ; কতো শস্যখেত ও সুরম্য প্রাসাদ! কতো বিলাস-উপকরণ, যা নিয়ে তারা আনন্দিত হতো। এরূপই ঘটেছিল এবং আমি এই সমুদয়ের উত্তরাধিকারী করেছিলাম ভিন্ন সম্প্রদায়কে। (সূরা দুখান : ২৫-২৮)।
অনাচারীদের পরিণতি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন : আমি ধ্বংস করেছি কতো জনপদ, যেগুলোর বাসিন্দা ছিল জালেম, এসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কতো কূপ পরিত্যক্ত হয়েছিল এবং কত সুউচ্চ প্রাসাদও। তারা কি দেশভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়। (সূরা হজ্ব : ৪৫-৪৬)। ইতিহাস প্রমাণ করে, পৃথিবীতে কোনো মানবগোষ্ঠী যখন সীমালঙ্ঘন করে তখন মহান আল্লাহর গযব ও শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ