ক্ষমতার দম্ভ চিরস্থায়ী নয়-২

Daily Inqilab খন্দকার মনসুর আহমদ

১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম

পৃথিবীতে অনেক শক্তিশালী জাতি সীমা লঙ্ঘনের কারণে ধ্বংস হয়েছে। মহান আল্লাহ আদ ও ছামুদ জাতিকে ধ্বংস করেছেন। শাদ্দাদ, নমরূদ, ফেরাউন ও আবরাহার মতো প্রবল প্রতাপী জালেমদের তিনি ধ্বংস করেছেন। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় হল, ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না। অথচ মহান আল্লাহ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্য পবিত্র কুরআনে বারবার তাকীদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : সুতরাং হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা! তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। (সূরা হাশর : ২)।

তবে সীমা লঙ্ঘনকারীদেরকে মহান আল্লাহ একটা সময় পর্যন্ত অবকাশ দেন। তাদের অনাচার যখন চূড়ান্তে পৌঁছে তখন তিনি তাদেরকে পাকড়াও করেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আদ, ছামুদ ও এ ধরনের জাতিসমূহের ধ্বংসের দিকে ইঙ্গিত করে ইরশাদ করেন : এবং আমি সেসব জনপদবাসীদের ধ্বংস করেছি যখন তারা অনাচার করল এবং আমি তাদের জন্য স্থির করেছিলাম এক নির্দিষ্ট ক্ষণ। (সূরা কাহ্ফ : ৫৯)।

ক্ষমতার দম্ভে যারা যাচ্ছেতাই করতেন, তারা আজ ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত। আবর্জনার মতোই জাতি তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলেছে। জুলুমবাজ নেতা-নেত্রী ও তাদের সহযোগীরা অনেকেই আজ পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। অনেকে আজ পালানোর পথও খুঁজে পাননি। অনেকে পালাতে গিয়ে লজ্জাজনকভাবে ধরা পড়েছেন। কেউ কারাগারে বা কেউ রিমান্ডে আছেন। এককথায় তারা আজ তাদের কৃতকর্মের করুণ পরিণতি ভোগ করছেন। জুলুম দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের হোতাদের পতন ও করুণ পরিণতি জাতিকে এ বার্তাই দিচ্ছে যে, এসকল অপরাধ করে কেউ রক্ষা পাবে না, তাই রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্বশীল থেকে নিয়ে সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল প্রতিটি ব্যক্তিকে জুলুম ও দুর্নীতি থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

নিষ্ঠা ও ন্যায়নীতির সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নয়তো আখেরাতের কঠিন শাস্তি তো অবধারিত আছেই; দুনিয়াতেও এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপমানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। স্বৈরতন্ত্রের পতন এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে সকল পর্যায়ের পদস্থ ও দায়িত্বশীলদেরই শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং নেওয়া উচিত। সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিবর্গেরও এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

জুলুম, স্বেচ্ছাচারিতা, একনায়কসুলভ আচরণ, আত্মস্বার্থচর্চা, আমানতের খেয়ানত, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অন্যের হক ও মর্যাদার ক্ষতি সাধন, নিজের সুযোগ সুবিধা পূর্ণমাত্রায় ও অবিলম্বে আদায় করে নেওয়া এবং অন্যের হক প্রদানে কার্পণ্য, গড়িমসি ও টালবাহানা ইত্যাদি অপরাধ সমাজ জীবনকে কলুষিত করে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। এসব অপরাধ করেও একটা সময় পর্যন্ত পদে ও ক্ষমতায় সদর্পে টিকে থাকা সম্ভব হলেও একপর্যায়ে কুদরতি ফয়সালা অনুসারে পতন ঘটে এবং পাপ ও অপরাধের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়। যদিও পদ ও ক্ষমতায় থাকাকালে সে বিষয়টি কারো মাথায় আসে না।

ইতিহাসে এর ছোট-বড় হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে। সকল পর্যায়ে একথাও আমাদের মনে রাখতে পারলে ভালো হবে যে, সমাজবদ্ধ জীবনে কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি যদি নিজের স্বার্থ ও সুবিধাকেই গুরুত্ব দেন এবং অন্যের স্বার্থ ও সম্মানকে অবজ্ঞা করেন, অথবা ব্যক্তিস্বার্থে নীতিহীনতার আশ্রয় নেন, তাহলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একসময় লাঞ্ছিত হতে হয়। যদিও তিনি সমাজের কোনো নামিদামি ও সম্মানিত ব্যক্তি হন। প্রকৃতপক্ষে জুলুম করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুঠারাঘাত হানা, যা চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ।

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
সন্তানদের নেক আমলের উৎসাহ প্রদান
আরও
X
  

আরও পড়ুন

লজ্জাস্থানে হাত লাগলে অজু ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে।

লজ্জাস্থানে হাত লাগলে অজু ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নামে লুটপাট চলত ফ্যাসীবাদের আমলে — ডিসি আরেফীন

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার নামে লুটপাট চলত ফ্যাসীবাদের আমলে — ডিসি আরেফীন

৯ মাস পর বেরোবির ছাত্রলীগ-শিক্ষকসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

৯ মাস পর বেরোবির ছাত্রলীগ-শিক্ষকসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

শেরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

উপযুক্ত জবাব দিয়েছি, ভারত উত্তেজনা না বাড়ালে আর পদক্ষেপ নয়: সানাউল্লাহ

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর :  বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে