ইসলামে শিক্ষা ও তার গুরুত্ব-২
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম

দুনিয়ার নিযাম ও ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখার জন্য যেমন জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি দ্বীনের হিফাজতের জন্য এবং দুনিয়ার সকল কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক হওয়ার জন্য দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজন। মুসলিম সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ যেন দ্বীন মোতাবেক চলতে পারে এবং হারাম থেকে বেঁচে হালালভাবে জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য কুরআন-সুন্নাহয় পারদর্শী একটি জামাত বিদ্যমান থাকা অপরিহার্য।
কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেন বের হয় না প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একটি দল, যাতে তারা দ্বীনের তাফাক্কুহ অর্জন করে এবং ভীতি প্রদর্শন করে তাদের জাতিকে যখন তারা ফিরে আসে তাদের নিকট। সম্ভবত তারা আল্লাহ ভীতি অর্জন করবে।’ (সূরা তাওবা : ১২২)। এজন্য প্রত্যেক জনপদে দ্বীনের ইলমে পারদর্শী ব্যক্তিত্ব বিদ্যমান থাকা ফরযে কিফায়া। আর এই উদ্দেশে দ্বীনের ইলমের চর্চা অব্যাহত রাখা সমাজের অপরিহার্য কর্তব্য।
কুরআন-সুন্নাহর চর্চা ও অনুসরণের অভাব হলে সমাজের সব অঙ্গনে দুর্নীতি ও অনাচার দেখা দেবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক ঈমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে তা মানুষের ক্ষতি ও অকল্যাণে ব্যবহৃত হবে। মানুষের সব আবিষ্কারকে অর্থপূর্ণ ও কল্যাণমুখী করার জন্যই অপরিহার্য প্রয়োজন ইলমে ওহীর চর্চা।
তদ্রƒপ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে সম্পূর্ণ অবিকলভাবে সংরক্ষণ করার জন্য কুরআন-সুন্নাহর বিশেষজ্ঞ তৈরি করা অপরিহার্য। ইসলামের অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন করে সঠিক ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী চিন্তাধারা পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছে দেয়াও আলিমদের কর্তব্য। এ বিষয়ে হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রজন্মের ন্যায়-নিষ্ঠ লোকেরা দ্বীনের এই ইলমকে ধারণ করবে। তারা সীমালংঘনকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থীদের মিথ্যাচার এবং মূর্খদের অপব্যাখ্যা থেকে একে রক্ষা করবে।’ (সুনানে বায়হাকী : ১০/২০৯)।
এ শিক্ষার বিষয়বস্তু যেহেতু সরাসরি দ্বীনের সাথে সম্পৃক্ত তাই এর ফযীলতও অন্যান্য শিক্ষার তুলনায় বেশি। নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করা হলো : ১. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন বহুগুণ। (সূরা মুজাদালা : ১১)।
২. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী : ২/৭৫২)। ৩. রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ আসান করে দেন। (সহীহ মুসলিম : ২/৩৪৫)। ৪. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা ওই ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করে দিন, যে আমার কোনো হাদিস শুনেছে। অতঃপর অন্যের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। (সুনানে আবু দাউদ : ২/৫১৫)। ৫. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন। (সহীহ বুখারী ১/১৬)।
তবে দ্বীনী ইলমের উপরোক্ত ফযীলত লাভের জন্য শর্ত হলো : ইখলাছ। শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই ইলম অর্জন করতে হবে। পার্থিব কোনো উদ্দেশে তা অর্জন করা যাবে না। পার্থিব সুনাম-সুখ্যাতির উদ্দেশে দ্বীনী ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। হাদিস শরীফে এসেছে যে, জাহান্নামে সর্বপ্রথম নিক্ষিপ্ত তিন ব্যক্তির একজন হবে ওই আলিম, যে লোকের কাছে আলিম হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার জন্য ইলম চর্চা করেছে। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে এমন ইলম শিখল, যা শুধু আল্লাহর জন্যই শেখা হয় সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। (সুনানে আবু দাউদ : ২/৫১৫)।
মোটকথা, ইসলামে দ্বীনী শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি জাগতিক শিক্ষারও গুরত্ব রয়েছে। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু, বহু দ্বীনী কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে।
পক্ষান্তরে, জীবনের সকল কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনী শিক্ষার বিকল্প নেই। দ্বীনী ইলমের চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমেই সমাজে ঈমান-আমল, আল্লাহ ভীতি ও আখিরাত-মুখিতা সৃষ্টি হবে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়া যেমন আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আখিরাতের কামিয়াবী অর্জন করা যায় না তেমনি দুনিয়ার জীবনও দুর্নীতি, অনাচার, জুলুম ও শোষণ থেকে মুক্ত করা যায় না। এজন্য আখিরাতে কামিয়াবী ও দুনিয়ায় শান্তি নিরাপত্তার জন্য দ্বীনী ইলমের চর্চা অপরিহার্য।
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রত্যেক মানুষের মেধা, আয়ু ও সামর্থ্য সীমিত, সকল বিষয় একই ব্যক্তি শিখে ফেলবে এটা সম্ভব নয়। অতীতেও এ রকম হয়নি। বর্তমানেও হয় না। সমাজে যে ডাক্তার হয় সে একই সাথে অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, আইনবিদ, কৃষিবিদ, দার্শনিক সবকিছু হয় না। হতে পারেও না।
তাই ইসলামের দিকনির্দেশনাও হচ্ছে প্রতিটি প্রয়োজনীয় বিষয়ে সমাজের কিছু কিছু লোক পারদর্শী হবে। প্রত্যেকে তার স্ব স্ব শিক্ষার মাধ্যমে অন্যকে সাহায্য করবে। এভাবে পুরো সমাজ একটি ইউনিটের ন্যায় হবে। পেশা ও বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য সত্ত্বেও যে বিষয়টি সবাইকে মেলবন্ধনে আবদ্ধ রাখবে তা হচ্ছে ঈমান ও ইসলাম।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহবান তারেক রহমানের

কাল মস্কোতে বিজয় কুচকাওয়াজে যোগ দেবেন ২৯ জন বিদেশি নেতা

হুতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা বন্ধের ঘোষণা ট্রাম্পের

ভারতের তিন রাফালসহ ছয় বিমান ধ্বংস

আইএমএফ’র ঋণ : নত হচ্ছে না বাংলাদেশ

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-৩

আকাশযুদ্ধে ধরাশায়ী রাফাল : আর্থিক ক্ষতির মুখে ফ্রান্সের দাসো

কী আছে ৩৭৫০ কোটি টাকার রাফালে?

‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে ইরান মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত’

তৃতীয় পক্ষ নয়, কাশ্মীর ইস্যুতে সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষেই যুদ্ধ করবে চীন -খাজা আসিফ

ভারত ও পাকিস্তানকে সংযত হওয়ার আহবান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের ডন-এর প্রতিবেদন : ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়ছে

ভারতের এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয় -নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না সরকার

পাকিস্তানের ভূখন্ডে ভারতের সামরিক হামলা গোটা অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ

একনেক শেষে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ : সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার হিসাব না দিয়ে পালিয়েছে পিডি

খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে ৭৯ ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে বাংলাদেশে পুশইন

আ. লীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিলো ‘জুলাই ঐক্য’

সুশাসন ও স্বচ্ছতায় ঘুরে দাঁড়াবে দেশের আর্থিক খাত : গভর্নর

সোনাইমুড়ীতে কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মসজিদের ইমামকে পেটানোর অভিযোগ