দুনিয়ার মোহ মানুষকে পথচ্যুত করে
০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম

দীর্ঘ আশা মানুষের জন্য অনেক বড় দুর্ভাগ্যের কারণ। শয়তান মানুষকে বলে, আরে বোকা! সামনে তো অনেক সময় আছে। এই সময়টা ভোগ করতে হবে এবং বড় বড় আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে হবে। শয়তানের এই কুমন্ত্রণায় প্রতারিত হয়ে মানুষ তার সব মনোযোগ দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের পেছনে নিয়োজিত করে। বড় বড় স্বপ্ন দেখতে থাকে এবং সেই স্বপ্নের পেছনেই ছুটতে থাকে। এভাবে সে আখিরাতের কথা ভুলে যায়। মৃত্যুর কথাও ভাবতে চায় না।
এ কারণে দুনিয়ায় ভোগ-বিলাসের লম্বা লম্বা স্বপ্ন দেখতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমি তোমাদের সম্পর্কে সবচেয়ে ক্ষতিকর যে বিষয়ের আশঙ্কা করি তা হচ্ছে দুটি : ১. প্রবৃত্তির অনুসরণ ও ২. দীর্ঘ আশা। কারণ প্রবৃত্তির অনুসরণ সত্য থেকে বিচ্যুত করে, আর দীর্ঘ আশা, এটাই তো হলো দুনিয়ার মোহ। সুতরাং মানুষ যখন দুনিয়াকে বেশি ভালোবাসে তখন দুনিয়াকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয় এবং আখিরাতে নাবিয়িন, সিদ্দিকিন, শুহাদা-সালেহিনের সাথে আল্লাহর সান্নিধ্যে জান্নাতে থাকার চেয়ে দুনিয়ার চাকচিক্য ও ভোগ-বিলাসকেই উত্তম মনে করে।
পক্ষান্তরে, দুনিয়ার আশা-আকাক্সক্ষা যখন কম হয় এবং আখিরাতের ফিকির যখন অন্তরে থাকে তখন মানুষ নেক আমলের দিকে অগ্রসর হয় এবং জীবনের মূল্যবান সময়কে কাজে লাগায়। জীবনের সময় খুবই অল্প। আর যে সময়টুকু চলে যায় তা কখনো ফিরে আসে না। অন্যদিকে, আখিরাতের পথে আছে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা। আল্লাহর রাসূল সা: সেসব প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কেও সাবধান করেছেন।
এক হাদিসে ইরশাদ করেছেন, তোমরা সাতটি অবস্থা আসার আগেই আমল করে নাও। তোমরা কি শুধু অপেক্ষায় আছ ওই দারিদ্র্যের, যাকে তোমরা ভুলে গেছ কিংবা ওই ধনাঢ্যতার, যা মানুষকে বেপরোয়া করে দেয়, কিংবা ওই অসুস্থতার, যা মানুষকে অক্ষম করে দেয় কিংবা ওই বার্ধক্যের, যা মানুষকে বুদ্ধিহীন করে ফেলে কিংবা ওই মৃত্যুর, যা দ্রুত এগিয়ে আসছে, কিংবা দাজ্জালের, সে তো প্রতীক্ষার সব বস্তুর মধ্যে সর্ব নিকৃষ্ট, কিংবা অপেক্ষা করছো কিয়ামতের, কিয়ামত তো আরো ভয়াবহ ও ভীতিময়। (জামে তিরমিজি-২৪০৮)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার কাঁধ ধরলেন এবং বললেন, তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো, যেন একজন ভিনদেশী বা পথিক। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের অপেক্ষা করো না। আর সকালে করো না সন্ধ্যার অপেক্ষা। তুমি সুস্থতাকেই গ্রহণ করো অসুস্থতার (ক্ষতিপূরণের) জন্য এবং জীবনকে গ্রহণ করো মৃত্যুর (পাথেয় সংগ্রহের) জন্য। (সহিহ বুখারি : ১১/১৯০-২০০)
রাসূলুল্লাহ সা: মুমিনদেরকে এমন কিছু বিষয় শিখিয়ে দিয়েছেন, যা তাদেরকে দীর্ঘ আশার মরীচিকা থেকে রক্ষা করে এবং তাদের সামনে দুনিয়ার প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরে। তিনি আদেশ করেছেন মৃত্যুকে স্মরণ করার, কবর জিয়ারত করার, মৃতকে গোসল দেয়ার, জানাজার সাথে যাওয়ার, অসুস্থের খোঁজখবর নেয়ার ও নেককার মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ করার। কারণ এসব বিষয় মানুষকে সজাগ করে এবং অমোঘ ভবিষ্যতের প্রস্তুতি গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।
বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করলে দুনিয়ার মোহ কেটে যায় এবং আখিরাতের ফিকির পয়দা হয়। ফলে তা বান্দার মধ্যে বেশি বেশি নেক আমলের প্রেরণা সৃষ্টি করে এবং ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় অবৈধ ভোগ-বিলাস থেকে বিরত রাখে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, সব ভোগ-উপভোগ বিনাশকারীকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো। (জামে তিরমিজি-২৪০৯)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, একজন আনসারি ব্যক্তি (সাহাবি) আরজ করলেন, আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তির পরিচয় কী? আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, যে মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যুর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তারাই তো দূরদর্শী। দুনিয়ার সম্মান ও আখিরাতের মর্যাদা তো তারাই নিয়ে গেল। (সুনানে ইবনে মাজাহ-২৪০৯)।
কবরস্তানের অধিবাসীদের কথা স্মরণ করুন। একসময় তারাও তো এই পৃথিবীতে ছিল। তাদেরও ছিল সুঠাম দেহ, অগাধ সম্পদ ও বিপুল ক্ষমতা। কিন্তু আজ তারা কবরের বাসিন্দা। মাটির পোকা তাদের দেহকে খেয়ে ফেলেছে, তাদের হাড্ডিকে চূর্ণ করে দিয়েছে। তো এই পরিণতি কি সবার জন্য অপেক্ষা করছে না? তাহলে কেন আমি প্রস্তুত হচ্ছি না? আখিরাতের পুঁজি কেন সংগ্রহ করছি না? নেক আমলই হচ্ছে আখিরাতের পুঁজি, আখিরাতের একমাত্র মুদ্রা।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পুলিশের ৯ অতিরিক্ত ডিআইজিকে বদলি

টঙ্গীতে মাদকের বস্তি উচ্ছেদ, ১২০ কোটি টাকার জমিতে হতে যাচ্ছে স্কুল ও খেলার মাঠ

ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ অগ্রহণযোগ্য: নিরাপত্তা উপদেষ্টা

সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান তারেক রহমানের

বিজেজিইএ’র নতুন চেয়ারম্যান বাবুল সি. ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল

তারুণ্য ধরে রাখতে খাবার তালিকা পরিবর্তন

পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে : জেলা প্রশাসক

নরসিংদীতে ছাগলের ঘাস খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩, গ্রেফতার ২

ছাগলনাইয়ায় গণ-অধিকার পরিষদের বর্ধিত সভা পন্ড!

দিনাজপুরে পড়াশুনার ফাঁকে নারীদের উপার্জন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা
লাল বেনারসি এল শীতলজোড়ায় কিন্তু এল না বর : বিয়ের আগেই না ফেরার দেশে বাবলু

রাজস্থলীর বাঙ্গালহালিয়া বাজারে অজ্ঞাত একটি লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জ জুলাই ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ এর চেক ও সঞ্চয়পত্র বিতরণ

জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়িয়ে

কিশোরগঞ্জে জাতীয় বিজ্ঞানমেলা ও অলিম্পিয়াড আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালীতে তালাকপ্রাপ্তা এক মহিলা গণধর্ষণের শিকার

নোয়াখালীতে কারাগারের ১৮ ফুট দেয়াল টপকে আসামির পালানোর চেষ্টা, ভিডিও ভাইরাল

‘বিতর্কিত কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে’

কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় মামলা