ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-২

Daily Inqilab মাওলানা ফজলুদ্দীন মিকদাদ

১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ এএম

আমরা প্রত্যেকেই জীবনে বহু পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে যদি কোনো কারণে জাগতিক সাফল্য লাভে ব্যর্থ হই, তাহলে মন খারাপ করে হতাশ হয়ে বসে পড়ি। আবার অনেক সময় কোনো একটি বিষয় অপছন্দনীয় ও অপ্রীতিকর মনে হয়, তা থেকে বাঁচার জন্য সবরকম চেষ্টা করি, তারপর যখন সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিষয়টির সম্মুখীন হতেই হয়। তখন সাধারণত মনে হয়, আমার তো বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে এবং মানসিকভাবে এমন ভেঙে পড়ি, যেন জীবন শেষ হয়ে গেছে।


অথচ হতেই পারে যে, বিষয়টির বাস্তব কল্যাণ আমার বাহ্যিক দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছে বলে আমি তা বুঝতে পারছি না। সে ক্ষেত্রে সূরা বাকারার ২১৬ নং আয়াতের বার্তাটি মনে রাখা দরকার, আয়াতটির বার্তা হলোÑ ‘তোমার প্রকৃত কল্যাণ ও অকল্যাণ কিসেÑ তা তুমি জানো না, আল্লাহ তাআলা জানেন। তুমি যা কামনা করছ, বাস্তবে তা তোমার জন্য দুঃখজনকও হতে পারে, আর যা অপছন্দ করছ, তা হতে পারে প্রভূত সুফলবাহী। কাজেই তোমার কর্তব্য-করণীয়র ফয়সালা আল্লাহ তাআলার ওপর ছেড়ে দাও এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলো। আর তাকদির অনুযায়ী যা ঘটে তাতেই খুশি ও সন্তুষ্ট থাকো।’


অন্ততপক্ষে ইসলামের এই শিক্ষা তো সবসময়ই মনে রাখা দরকার যে, মুমিন বান্দার জীবনে কষ্টকর যা কিছু ঘটে, তাতে যদি সে সবর করে, তাহলে আখিরাতে সে জন্য সে মহাপ্রতিদান পাবে। নবীগণের জীবনেও এমন ঘটনার দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, বাহ্যিকভাবে যেটা খুব দুঃখজনক ছিল, কিন্তু পরিণতিতে সেটি তাদের জীবনের জন্য অভূতপূর্ব কল্যাণকর হয়ে দেখা দিয়েছিল।


যেমন, ফেরাউন যখন বনি ইসরাইলের নবজাতক পুত্রদেরকে হত্যা করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল, তখন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম জন্মের পর তার মাকে আল্লাহ তাআলা এই প্রত্যাদেশ পাঠালেন, মুসা আলাইহিস সালামকে যেন একটি বাক্সে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসা আলাইহিস সালামের মায়ের জন্য এটি কত কষ্টের বিষয় ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মেনে তিনি তাই করলেন। পরবর্তী ঘটনা আমাদের সবারই জানা রয়েছে, কীভাবে ফেরাউনেরই ঘরে থেকে মুসা আলাইহিস সালামের জীবন রক্ষা হলো।


রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা আছে। ষষ্ঠ হিজরিতে মক্কার কাফেরদের সঙ্গে যখন মুসলমানদের হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়েছিল, তখন সন্ধির শর্তনামা বাহ্যিকভাবে মুসলমানদের জন্য কিছুটা অবমাননাকরই ছিল বৈকি। একে তো এত বছর পরে মক্কার কাছাকাছি এসেও পবিত্র কাবাকে এক নজর না দেখেই ফিরে যেতে হচ্ছে। তার ওপর সন্ধির কিছু শর্ত এমন ছিল যে, ‘মুসলমানরা পরের বছর ওমরা পালন করতে এসে মাত্র তিন দিন থাকতে পারবে। আসতে হবে নিরস্ত্র হয়ে, সঙ্গে কোনো হাতিয়ার থাকতে পারবে না। আর সন্ধি বলবৎ থাকা অবস্থায় কুরাইশের কেউ যদি মুসলমানদের কাছে চলে যায়, তাহলে মুসলমানরা তাকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। কিন্তু কোনো মুসলমান যদি কাফেরদের কাছে চলে যায়, তাহলে কাফেররা তাকে ফেরত দেবে না।’


রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের সব শর্তই মেনে নিলেন। কিন্তু সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এমন শর্তে সন্ধি করতে অপছন্দ করছিলেন। কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আপত্তিও জানিয়েছিলেন। বাহ্যিক বিচারে সন্ধির এই শর্তগুলোকে অপছন্দ করা ও আপত্তিজনক মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এ সন্ধিকেই ‘সুস্পষ্ট বিজয়’ বলে কুরআনে আয়াত নাজিল করেছেন। কারণ এ সন্ধির ফলে ইসলাম প্রচার আরো সহজ হয়ে গেল।


মক্কার কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদে ব্যস্ত থাকায় অন্যান্য অঞ্চলে যথাযথভাবে ইসলাম প্রচারের সুযোগ হচ্ছিল না। হুদায়বিয়ার সন্ধির কারণে যেহেতু যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেল, তাই আরবের বাইরে ইসলামের দাওয়াত প্রচারে পূর্ণ মনোনিবেশ করা গেল। এ সময়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দিকে দিকে দূত পাঠালেন। এ সময়েই রোম সম্রাট কিসরাসহ ব্যাপকভাবে অন্যান্য রাজ্যের ক্ষমতাসীনদের কাছে চিঠি পাঠানো হলো।


হুদায়বিয়া সন্ধির আগে মক্কা-মদিনার বাইরে সর্বত্র ইসলাম প্রচারের সুযোগ হয়ে উঠছিল না। এ সন্ধির কারণে ব্যাপকভাবে তা করার সুযোগ মিলেছে। ফলে হুদায়বিয়া সন্ধির সময় যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল চৌদ্দশর মতো। এর মাত্র দুই বছর পরে মক্কা বিজয়ের সময় সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। ইসলামের প্রচারই তো হলো মূল লক্ষ্য।
এ লক্ষ্য সাধন হুদায়বিয়ার সন্ধির কারণে অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। এটিই তো হলো আসল বিজয়। তাছাড়া এ সন্ধি মক্কা বিজয়ের পথ আরো সুগম করে দিয়েছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়েছিল ষষ্ঠ হিজরিতে। আর এর মাত্র দুই বছর পরে অষ্টম হিজরিতে মুসলমানরা মক্কা বিজয় করেন। সাহাবায়ে কেরামের কারো কারো কাছে যে সন্ধি অপছন্দনীয় মনে হয়েছিল, আল্লাহ তাআলা সেটিকেই মুসলমানদের বিজয়ের প্রথম পদক্ষেপ বানিয়েছিলেন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
কে অন্ধ, কে চক্ষুষ্মান
সে-ই স্বাধীন যে সিজদা করে এক আল্লাহকে
বান্দা জানে না, কিসে তার কল্যাণ-১
আরও

আরও পড়ুন

শহীদদের রক্তের সঙ্গে যাতে বেঈমানি না হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা থাকবে : নতুন সিইসি

শহীদদের রক্তের সঙ্গে যাতে বেঈমানি না হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা থাকবে : নতুন সিইসি

খালেদা জিয়াকে ১২ বছর সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছে : মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়াকে ১২ বছর সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছে : মির্জা ফখরুল

সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস ফিরে আনতে হবে  -আল-কাউসার পরিষদ বাংলাদেশ

সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস ফিরে আনতে হবে -আল-কাউসার পরিষদ বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি

শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার

শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার

দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন

দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন

আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী

আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ ন‌ভেম্বর ঢাকায় আস‌ছেন

আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ ন‌ভেম্বর ঢাকায় আস‌ছেন

সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী

সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী

ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি

ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি

প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন

প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন

বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ

বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ

নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার

নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার

সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ

সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ

মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি

মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি

বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি

অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু

কুড়িগ্রামের উলিপুরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু

ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার

ভারতে পাচারকালে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে দুই নারী উদ্ধার