সালাম : আমাদের স্বকীয়তা-১
০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

প্রিয় নবীজী (সা.)-এর এক বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.)। শুরুর জীবনে ছিলেন ইহুদি। থাকতেন মদীনায়। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত সম্পর্কে তার জানা-শোনা ছিল প্রচুর। রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় হিজরতের পর তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয়গ্রহণ করেন। এক হাদিসে তিনি নবীজী (সা.)-এর হিজরতের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন এভাবে- রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন, বাঁধভাঙা স্রোতের মতোই মানুষ তাঁর দিকে ছুটতে শুরু করল। তারা বলাবলি করতে লাগল, রাসূলুল্লাহ (সা.) চলে এসেছেন; রাসূলুল্লাহ (সা.) চলে এসেছেন।
তাঁকে দেখার জন্যে মানুষের ভিড়ের মাঝে আমিও গেলাম। আমি তাঁর চেহারা দেখেই তাঁকে চিনতে পারলাম আর তখনি বুঝতে পারলাম- এ চেহারা কোনো মিথ্যুকের চেহারা নয়। সেদিন আমি তাঁকে প্রথম যে কথাটি বলতে শুনেছি তা হলো- হে মানুষেরা! তোমরা সালামের বিস্তার ঘটাও, মানুষকে খাবার খাওয়াও এবং যখন অন্য মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়, তাহলে তোমরা শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে পারবে। (জামে তিরমিযী : ২৪৮৫)
হাদিসটির প্রেক্ষাপট ও উপস্থাপন আমাদের সামনে সালামের গুরুত্ব দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রিয় জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করে এসে মানুষকে প্রথম উপদেশ দিচ্ছেন- তোমরা সালামের অধিক প্রচলন করো! দেখা-সাক্ষাতে একে অন্যকে শুভেচ্ছা-অভিবাদন জানানো মানুষের একটি সহজাত গুণ। মানবসমাজে এ প্রথা চলে আসছে প্রাচীন কাল থেকেই। কোনো কোনো এলাকায় প্রচলন ছিল সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে মাথা নুইয়ে সম্মান জানানোর রীতি।
ইসলামপূর্ব যুগে আরবের লোকেরা পরস্পর দেখা-সাক্ষাতে বলত, ‘আনইম স্বাবাহান’, অর্থ ‘তোমার সকাল সুন্দর হোক’। ‘আনআ’মাল্লাহু বিকা আইনান’, অর্থ ‘আল্লাহ তোমার চোখ শীতল করুন’ জাতীয় শব্দ। গুডমর্নিং বা শুভ সকাল তো একালেরও প্রচলিত অভিবাদন। কিন্তু ইসলাম আমাদেরকে দিয়েছে এক অভূতপূর্ব অভিবাদন-রীতি, যেমনটি কোনো ধর্মে কিংবা কোনো দেশে প্রচলিত ছিল না। মানের বিচারেও তা অন্যসব কিছু থেকে শ্রেষ্ঠ।
ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে- দুই মুসলমান যখন মিলিত হয় তখন যেন একে অন্যকে সালাম দেয় অর্থাৎ একজন বলবে, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ- তোমার ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক; অপরজন বলবে, ওয়া আলাইকুমুস সালামু ওয়ারাহমাতুল্লাহ- তোমার ওপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। এভাবে স্থান-কালের বন্ধন থেকে মুক্ত করে একে অন্যের জন্যে আল্লাহর রহমত ও শান্তি কামনা- এর চেয়ে উত্তম শুভেচ্ছা আর কী হতে পারে! এ সালাম আমাদের অহংকার, আমাদের স্বকীয়তা।
সালাম যে কেবল অভিবাদন আর শুভ কামনা এমন নয়, কিংবা সালাম কেবল মহব্বত-ভালোবাসার প্রকাশই নয়, বরং এ সালামের মধ্যদিয়ে ভালোবাসার দাবিটুকুও আদায় করা হয়। একজন আরেকজনের জন্যে প্রার্থনা করে- আল্লাহ তোমাকে শান্তি ও নিরাপদে রাখুন, তোমার ওপর বর্ষিত হোক পরম করুণাময়ের দয়া ও অনুগ্রহের বারিধারা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে দয়াময় আল্লাহ তোমাকে সবরকমের বিপদ ও শঙ্কা থেকে মুক্ত রাখুন।
সাক্ষাতের সঙ্গে সঙ্গে একে অন্যের জন্যে এ প্রার্থনার মধ্যদিয়ে যেন একথাও মনে করিয়ে দেয়া হয়- আমরা একে অপরের যে সহযোগিতা আর উপকার করতে চাই, তা কেবল আল্লাহর ইচ্ছায়ই হতে পারে। এভাবে সালামের মাধ্যমে একে অন্যকে আল্লাহর কথাও মনে করিয়ে দেয়। আর কেউ যখন অন্য কারও জন্যে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রার্থনা করে, সে যেন এর ভেতর দিয়ে এ অঙ্গীকারও করে- আমার পক্ষ থেকেও কোনো অনিষ্টতায় তুমি আক্রান্ত হবে না। আমার দিক থেকে তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। পারস্পরিক ভালোবাসার দাবি পূরণের চেয়ে সুন্দর পন্থা আর কী হতে পারে!
কেউ যখন কাউকে সালাম দেয়, তখন এর উত্তর দেয়া ওয়াজিব। এ আদেশ সরাসরি আল্লাহর, ‘যখন তোমাদের সালাম দেয়া হয় তখন তোমরা এর চেয়ে উত্তম পন্থায় সালামের উত্তর দাও কিংবা (অন্তত) ততটুকুই বলে দাও।’ (সূরা নিসা, ৮৬)
প্রিয় নবীজি (সা.) সালাম দেয়াকে একজন মুসলমানের অন্যতম সেরা আমল হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে এক সাহাবী প্রশ্ন করলেন- ইসলামের শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি মানুষকে খাবার খাওয়াবে আর তোমার পরিচিত-অপরিচিত সবাইকেই সালাম দেবে। (সহীহ বুখারী, ১২)
এ হাদিসে স্পষ্টভাবেই সালামকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পরিচিত-অপরিচিত সবার মাঝে। পরিচিত কাউকে যখন সালাম দেয়া হয়, তা আত্মীয়তা, বন্ধুত্ব কিংবা অন্য যে কোনো সূত্রেই হোক, সালামের মাধ্যমে সেই পরিচয়ের সূত্র আরো ঘনিষ্ঠ হয়। আর অপরিচিত কাউকে যখন কেউ সালাম দেয় তখন এ সালামের মধ্যদিয়েই সূচিত হতে পারে গভীর আন্তরিকতার। জীবনে কখনো দেখা হয়নি এমন কারো সঙ্গে যখন কথাবার্তার শুরুতে সালামের আদান-প্রদান হয় তখন অকৃত্রিম হৃদ্যতা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। এক অপার্থিব শান্তি ও নিরাপত্তা অনুভূত হয়।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মোরেলগঞ্জে গণপিটুনিতে নিহত সাফায়েতের পরিবারের পাশে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ব্যাপক দরপতনে শেয়ারবাজার, দু’দিন এভাবে থাকলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বাজার

পরিচয় মেলেনি সেই নবজাতকের, বেড়ে উঠবে শিশু নিবাসে

বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় পাক-ভারত যুদ্ধ কাম্য নয়: ববি হাজ্জাজ

পাকিস্তানে ভারতের হামলা যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়েছে: তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মাদারীপুরের ডাসারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে খাটের নীচ থেকে উদ্ধার ভিডিও ভাইরাল

সখিপুরে এক ভূয়া পশু চিকিৎসককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল জরিমানা

ইউনাইটেডে 'ভালো আছেন' গারাঞ্চো

এটিএম আজহারের মুক্তি না দিলে মার্স পর জাস্টিস কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে

গাজীপুরে বাজারে নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে অস্ত্রসহ মিছিল, আটক ২

টেস্টকে বিদায় বললেন রোহিত

চুয়াডাঙ্গার ভারত সীমান্তবর্তী হরিপুর থেকে ৩টি স্বর্ণের বারসহ এক ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি

রকেট ‘বিদ্রোহী’ নামক বানিজ্যিক ভিত্তিতে দেশের প্রথম ময়মনসিংহে প্রদর্শন

শ্রমিক আন্দোলন: আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা ও গঠনমূলক সংলাপের প্রতিশ্রুতি বিএটি বাংলাদেশের

আপাতত গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না সরকার: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা

বিজিএমইএ নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করলো ফোরাম জোট

তিন দফা দাবিতে ৯ জেলায় ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

কীসের অপারেশন সিঁদুর, মুখ দিয়ে খারাপ কথা বের হবে : কবীর সুমন

বিশ্ব যুব ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় ইয়াজদানির স্বর্ণ জয়

বজ্রপাতের ঝুঁকি : সচেতনতার বিকল্প নেই