লজ্জাশীলতা : পূর্ণ ঈমানের জন্যে যা অনিবার্য-২

Daily Inqilab শিব্বীর আহমদ

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

লজ্জা বলতে আমরা সাধারণত মানুষে মানুষে পারস্পরিক লজ্জার কথাই বুঝি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সন্দেহ নেই, কিন্তু নবী মুহাম্মাদ (সা.) আমাদেরকে লজ্জাশীলতার এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিকের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করো। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আলহামদু লিল্লাহ, আমরা লজ্জা অবলম্বন করি। নবীজী (সা.) তখন বললেন : আমি তো এটা বলিনি। বরং আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা হবে এমন- তুমি মাথা হেফাযত করবে, মাথা যা কিছু ধারণ করে তাও হেফাযত করবে, পেট হেফাযত করবে, পেট-সংলগ্ন যা কিছু আছে তাও হেফাযত করবে, আর মৃত্যুকে স্মরণ করবে, স্মরণ করবে (মৃত্যু পরবর্তী সময়ে) চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে মাটিতে মিশে যাওয়াকেও। আর যে পরকাল কামনা করে সে তো দুনিয়ার জৌলুস বর্জন করে। এগুলো যে করতে পারল সে-ই আল্লাহর সঙ্গে যথাযথ লজ্জা অবলম্বন করল। (জামে তিরমিযী : ২৪৫৮)।

হাদীসের বাণী দ্ব্যর্থহীন, স্পষ্ট। আল্লাহ তাআলার সঙ্গে পূর্ণ লজ্জাশীল আচরণ করতে চাইলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে সব রকম গোনাহের কাজ থেকে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও সামনে যেমন মাথা নুইয়ে দেয়া যাবে না, তেমনি রুকু-সিজদা তথা নামায হতে হবে সম্পূর্ণ রিয়া ও লৌকিকতা মুক্ত। পাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে মাথার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জিহ্বা চোখ নাক কানকেও। পেটে যেন কোনো হারাম খাবার না ঢুকে সেদিকে যেমন সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, তেমনি পেট-সংলগ্ন অঙ্গসমূহ যেমন, লজ্জাস্থান, হাত-পা ইত্যাদিকেও হেফাযত করতে হবে সব রকম নিষিদ্ধ কর্মকা- থেকে।

স্মরণ করতে হবে অনিবার্য মৃত্যুকে, মৃত্যুর পর মাটিতে মিশে যাওয়াকে। মৃত্যুর স্মরণ যদি তাজা থাকে, তাহলে মানুষ পাপ ছাড়তে বাধ্য। সর্বশেষ কথা, পরকালীন সফলতা আর দুনিয়ার চাকচিক্য তো একসঙ্গে থাকতে পারে না। কেউ কেউ তো এ দুটো বিষয়কে দুই সতীনের সঙ্গেই তুলনা করেছেন। পরকালে মুক্তি পেতে হলে দুনিয়ার চাকচিক্য ছাড়তে হবে। এভাবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত নিজের প্রতিটি অঙ্গকে যে পাপমুক্ত রাখতে পারবে, কেবল সে-ই তো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে লজ্জা অবলম্বন করল।

বিষয়টি আমরা ভিন্নভাবেও বুঝতে পারি। মানুষ যখন কোনো অন্যায় করে আর তা কেউ জেনে যায়, তখনই সে লজ্জায় নীল হয়। কেউ যদি কাউকে কোনো প্রকার অনুগ্রহ করে, বিপদে সহযোগিতা করে, সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ায়, আর এ অনুগ্রহকারীর কোনো কথা সে রাখতে না পারে তখনো সে লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্পর্কে তো আমাদের স্থির বিশ্বাস- তিনি সবকিছু দেখেন, শোনেন। ন্যায়-অন্যায় যা-ই আমরা করি না কেন, তাঁর অজানা থাকে না কিছুই।

যা প্রকাশ্য তাও তিনি জানেন, যা কিছু রাতের অন্ধকারে বাড়ির ভেতরের গোপন কক্ষে করা হয় তাও তিনি জানেন। আবার তিনিই তো আরহামুর রাহিমীন- সবচেয়ে বড় অনুগ্রহশীল। দুর্যোগে বিপদে তিনিই আমাদের আশ্রয়। এমন কারও সঙ্গে অবাধ্যতা- তা কি সুস্থ বিবেকের কাজ হতে পারে? তিনি যেহেতু সবকিছুই জানেন, তাই তাঁর সঙ্গে লজ্জা অবলম্বন করতে হলে তো অবশ্যই তাঁর অবাধ্যতা ছাড়তে হবে। কিংবা কোনো পাপে জড়াতে চাইলে এমন কোনো স্থান খুঁজে নিতে হবে, যা তাঁর দৃষ্টির বাইরে। আর এটা যে অসম্ভব- তা কে অস্বীকার করবে?

তবে মনে রাখতে হবে, এ লজ্জাশীলতা যতক্ষণ কাউকে পাপ থেকে বিরত রাখবে, অন্যায়-অপকর্ম-অনৈতিকতা থেকে মুক্ত রাখবে, ততক্ষণই তা কল্যাণকর। লজ্জার কারণে যখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাউকে দান করতে হয়, কিংবা কারও প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হয় তখনো তা কল্যাণকর। কিন্তু এ লজ্জা যদি কারও কল্যাণের পথে, ন্যায়ের পথে, ইলম হাসিলের পথে, সঠিক পদ্ধতিতে আল্লাহ পাকের ইবাদতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তখন আর তা কল্যাণকর নয়। সাহাবায়ে কেরাম তো পবিত্রতা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি নানা বিষয় রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করতেন। তিনিও নিঃসঙ্কোচে উত্তর দিতেন। অথচ হাদীসের ভাষ্য অনুসারে, তিনি ছিলেন অন্তঃপুরিকা কুমারীর চেয়েও অধিক লজ্জাশীল। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪১৮০)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এখনও সময় আছে আল্লাহর ওয়াস্তে ফিরে আসার-১
শুধু মসিবত নয় আল্লাহ নিয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন-২
শুধু মসিবত নয় আল্লাহ নিয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন-১
শান্তির সমাজ পেতে ভ্রাতৃত্বের বিকল্প নেই
দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণকামিতা
আরও
X

আরও পড়ুন

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার