আপন অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে করণীয়-১

Daily Inqilab মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম

২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে: ‘কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না এবং তাদের পক্ষ থেকে যে কষ্ট-ক্লেশ তোমাকে দেয়া হয়, তা অগ্রাহ্য করো এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখ। কর্মবিধায়করূপে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সূরা আহযাব- ৪৮) এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিনটি হুকুম দিয়েছেনÑ ১. কাফের ও মুনাফিকদের কথায় চলো না; ২. তাদের দেয়া কষ্ট-ক্লেশ উপেক্ষা করো এবং ৩. আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখ। কিয়ামত পর্যন্ত আপন আপন অবস্থান অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে এর প্রতিটি হুকুম অতি গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক। এর প্রতি শৈথিল্য ও অমনোযোগের পরিণাম হয় অতি অশুভ। আজ সারা বিশ্বে মুসলিম জাতির ব্যক্তি জীবন অব্যবস্থিত, সমাজ জীবন বিপর্যস্ত এবং তাদের রাষ্ট্রসমূহ বহুমুখী আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত। এর একমাত্র কারণ এ হুকুমসমূহ পালনে আমাদের উদাসিনতা ও ব্যর্থতা। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, আমরা এগুলো মেনে চলার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও যতœবান নই। আজ তারই খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। এর থেকে নিস্তার পেতে চাইলে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। আর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দরকার এ হুকুমগুলোর পুনঃপাঠ। প্রয়োজন আন্তরিকতার সাথে এর অনুসরণ শুরু করে দেয়া এবং তা এখনই।

প্রথম হুকুম হচ্ছেÑ কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না। কাফের মানে অবিশ্বাসী, অমুসলিম, যারা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয় বা তাঁকে এক মানে না, যারা প্রতিমার পূজা করে, যারা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-কে সারা জাহানের সব মানুষের নবী মানে না বরং তাঁকে সর্বশেষ নবী বলে স্বীকার করে না। যারা কুরআন মাজীদকে আল্লাহর কালাম বলে বিশ্বাস করে না বা কুরআনে প্রদত্ত বিধানাবলিকে আপন আপন ক্ষেত্রে অবশ্যপালনীয় বলে স্বীকার করে না, যারা কুরআনের আইন পরিবর্তনযোগ্য বলে ধারণা রাখেÑ এরা সকলেই কাফের ও অমুসলিম।

কুরআন-বর্ণিত যে-কোনো একটা বিষয়কেও যে ব্যক্তি অস্বীকার করে, সেও কাফের। নাস্তিক, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি, কাদিয়ানী প্রভৃতি সম্প্রদায়সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন বলছেÑ এদের আনুগত্য করো না এবং এদের কথা ও পরামর্শ অনুযায়ী চলো না।

কুরআন এদের সাথে সহাবস্থান করতে নিষেধ করেনি। এর জন্য ভারসাম্যপূর্ণ নীতিও দান করেছে। কুরআনের সেই শিক্ষা ও বিধান অনুসারে যে-কোনো অমুসলিম জাতির সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা যাবে। তাদের প্রতিও মানবিক আচরণ করা শরীয়তের হুকুম। তাদের প্রতি জুলুম করা বা শুধু শুধুই তাদের উত্ত্যক্ত করা কুরআনী আইনে সম্পূর্ণ নিষেধ ও নাজায়েয। শরীয়তে শুধু তাদের আনুগত্য করতে একান্ত পরামর্শক ও অভিভাবকরূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে।

মুসলিম ব্যক্তি ও মুসলিম জাতি কীভাবে পারিবারিক জীবনযাপন করবে, কীভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, কীভাবে বিচার-আচার করবে, কীভাবে রাষ্ট্র চালাবে ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় কুরআন-সুন্নাহে বলে দেয়া হয়েছে। তাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ। এ দ্বীন আল্লাহপ্রদত্ত দ্বীন। এর কোথাও কোনো কমতি নেই, অসঙ্গতি নেই এবং নেই কোনো রকম ত্রুটি।
ইসলামের বাইরে আর যতো বিধান আছে তা সবই মানবরচিত। যারা নিজেদের আসমানি ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করে, তারাও আসমানি বিধান বিকৃত করে ফেলেছে। এখন তারা যা মানছে তা তাদের নিজেদের তৈরি করা। সেসব বিধান অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ। তা মানুষে মানুষে বৈষম্য সৃষ্টি করে, একের দ্বারা অন্যের প্রতি জুলুমের পথ সৃষ্টি করে দেয় এবং মানুষের মানবিক গুণাবলি ধ্বংস করে তার মধ্যে পশুপ্রবৃত্তি উসকে দেয়।

এরূপ অশুভ আইনের যারা রচয়িতা ও প্রবক্তা, তাদের নিজেদেরই কর্তব্য এর নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহপ্রদত্ত কল্যাণকর বিধানাবলি শিরোধার্য করে নেয়া। তাদের বিপর্যস্ত মনুষ্যত্বকে বাঁচানোর এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

পাশবিকতার কবল থেকে তাদের মনুষ্যত্বকে উদ্ধার করার এ উপায় তাদের কে বাতলাবে? ইসলাম নামক মহামুক্তির পথ কে তাদের দেখাবে? নিশ্চয়ই এ পথের অনুসারীগণ অর্থাৎ মুসলিম জাতি। কুরআনের পূর্ণাঙ্গ, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর বিধানাবলির আমানত তাদেরই কাছে গচ্ছিত। তাদের কর্তব্য নিজেদের জীবনে এ আমানতের যথাযথ সংরক্ষণের পাশাপাশি বিশ্বের অপরাপর জাতির সামনেও এর চির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা।

যাদের কর্তব্য কুরআনী নির্দেশনার সাথে অন্যদের পরিচিত করা, অন্যদেরকে এর কল্যাণকর তা বোঝানো ও এর অনুসরণের প্রতি উৎসাহ যোগানো, তাদের পক্ষে কি এটা শোভা পায় যে, তারা জীবনের কোনো ক্ষেত্রে কুরআনী নির্দেশনা থেকে বিমুখ হয়ে অন্যের পরামর্শে কান দেবে বা অন্যের হুকুমবরদার হয়ে চলবে?

হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি, খ্রিষ্টান প্রভৃতি অমুসলিম জাতির কথামত চলতে কুরআন আমাদের নিষেধ করে দিয়েছে। সে নিষেধাজ্ঞা বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে নয়, জীবনের সব ক্ষেত্রে। ইসলাম এক পূর্ণাঙ্গ দ্বীন। আদেশ করা হয়েছেÑ ‘হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সূরা বাকারা-২০৮)


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এখনও সময় আছে আল্লাহর ওয়াস্তে ফিরে আসার-১
শুধু মসিবত নয় আল্লাহ নিয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন-২
শুধু মসিবত নয় আল্লাহ নিয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন-১
শান্তির সমাজ পেতে ভ্রাতৃত্বের বিকল্প নেই
দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণকামিতা
আরও
X

আরও পড়ুন

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার