ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও পরার্থপরতা
৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম

ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মানদ ঈমান। তাই একজন মুমিন অপর মুমিনের প্রতি সম্প্রীতি-ভালোবাসা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবে, তা সে যে দেশের হোক, যে ভাষারই হোক। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।
সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও।’ (সূরা হুজুরাত-১০) আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘মুমিন নর ও মুমিন নারী সকলেই একে অন্যের বন্ধু।’ (সূরা তাওবা-৭১) রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহানুভূতির ক্ষেত্রে মুমিনদের দৃষ্টান্ত এক দেহের ন্যায়, যার একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়। (সহিহ বুখারী-৬০১১) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, মুমিন মুমিনের জন্য আয়না। মুমিন মুমিনের ভাই। সে তার জমি সংরক্ষণ করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে হেফাজত করে। (সুনানে আবু দাউদ-৪৯১৮)
এই সম্প্রীতি ও সহযোগিতার নির্দেশ তাকওয়া ও কল্যাণের পথে, ন্যায় ও বৈধ কাজে। কুরআনে কারীমের ইরশাদÑ ‘তোমরা তাকওয়া ও ন্যায় কাজে পরস্পরে সহযোগিতা করো। পাপাচার ও অন্যায় কাজে সহযোগিতা করো না।’ (সূরা মায়েদা-০২) ন্যায় ও কল্যাণের বিষয়ে নিজ কওমকে সাহায্য করা অন্যায় সম্প্রদায়প্রীতি নয়। জুলুম ও অন্যায় কাজে কওমকে সহযোগিতা করাই হচ্ছে নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িকতা। একবার নবীজী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘আসাবিয়াত’ (তথা সাম্প্রদায়িকতা) কী? তিনি জবাব দিলেন, নিজ কওমকে তার অন্যায় অবিচারে সাহায্য করা। (সুনানে আবু দাউদ-৫১১৯)
সুতরাং অন্যায়ের ক্ষেত্রে পক্ষপাতই হলো সাম্প্রদায়িকতা, যা ইসলামে কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি আসাবিয়াতের দিকে ডাকে বা আসাবিয়াতের কারণে লড়াই-যুদ্ধ করে বা আসাবিয়াতের উপর মৃত্যুবরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (সুনানে আবু দাউদ-৫১২১) অতএব ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা হলো, তাকওয়া ও কল্যাণের কাজে মুসলমানগণ পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। নিজেদের মাঝে প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখবে এবং অন্যায়ের পক্ষাবলম্বন ও সহযোগিতা থেকে বিরত থাকবে। এখানে ইসলামের সীমাহীন সৌন্দর্য এই যে, ইসলাম প্রীতি-সৌহার্দ্যরে চূড়ান্ত স্তরের প্রতিও মুসলমানদেরকে উদ্বুদ্ধ করে। ঈমানী ভাইয়ের জন্য আপন স্বার্থ বিসর্জনেরও উৎসাহ দেয়।
ইসলামের সূচনালগ্নে মক্কার মুসলিমগণ এক কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন। আপন গোত্রের অবিচার ও নিপীড়ন তাদেরকে স্বদেশত্যাগে বাধ্য করেছিল। তখন মদীনার মুসলমানগণ সহযোগিতা ও সহানুভূতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তারা নিজেদের প্রয়োজন ও দারিদ্র্য সত্ত্বেও সহায়-সম্বলহারা মুহাজির মুসলমান ভাইদের জন্য ধন-সম্পদ ও আপন স্বার্থ ত্যাগ করেছিলেন।
তাদের পরার্থপরতার এ গুণটি পছন্দ করে আল্লাহপাক কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেনÑ ‘তারা (আনসারেরা) নিজেদের উপর (মুহাজিরদের) প্রাধান্য দেয়। যদিও নিজেদের প্রয়োজন ও অভাব থাকে।’ (সূরা হাশর- ০৯) সূরাতুদ দাহরে আল্লাহপাক জান্নাতের বিশেষ কিছু নিআমত উল্লেখ পূর্বক এসব নেআমতের অধিকারীগণের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেনÑ ‘(তারাই এসব নিআমত লাভ করবে যারা...) এবং যারা মিসকীন, এতীম ও বন্দিদেরকে খাবার দান করে তার প্রতি (নিজেদের) আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও। (আর বলে) আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে। তোমাদের থেকে আমরা কোনো প্রতিদান বা কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।’ (সূরা দাহরÑ৮-৯)
নিজের প্রয়োজন সত্ত্বেও নিঃস্বার্থভাবে অপর ভাইকে নিজের উপর প্রাধান্যদানের বিষয়ে ইসলামের এই সুমহান আদর্শ সহজে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য এখানে সাহাবায়ে কেরামের আলোকিত জীবনচরিত থেকে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হচ্ছে, যাতে ফুটে উঠেছে এ-শিক্ষাটির বাস্তব ও সমুজ্জল চিত্র। শুরুতেই স্বয়ং নবীজী (সা.)-এর কর্মপন্থা ও পবিত্র সীরাত থেকে তাঁর একটি ঘটনা লক্ষ্য করুন।
হযরত সাহল বিন সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন নারী সাহাবী নবীজীর জন্য সুন্দর কারুকার্য করা একটি নতুন কাপড় হাদিয়া এনে আরয করলেন, আমি এটি স্বহস্তে তৈরি করেছি। আপনি তা পরিধান করলে খুশি হবো। রাসূলুল্লাহ (সা.) কাপড়টি গ্রহণ করলেন। তাঁর কাপড়ের প্রয়োজনও ছিল। যখন তিনি তা লুঙ্গি হিসেবে পরিধান করে ঘরের বাইরে আসলেন, এক ব্যক্তি বলল, খুব চমৎকার কাপড় তো! আমাকে তা দান করবেন কি?
তখন নবীজী ঘরে ফিরে গিয়ে তা খুলে ভাঁজ করে লোকটির জন্য পাঠিয়ে দিলেন। এ দৃশ্য দেখে অন্যান্য সাহাবী ওই ব্যক্তিকে তিরস্কার করে বলতে লাগলেন, আরে মিয়া! তুমি কি জানো না, কাপড়টি নবীজীর প্রয়োজন রয়েছে। আর তিনি কোনো কিছু চাইলে ‘না’ বলেন না। সে জবাবে বলল, আমি সবই জানি, এরপরও চেয়েছি, যাতে তাঁর মুবারক শরীর-স্পর্শে ধন্য কাপড় দিয়ে আমি নিজের কাফন বানাতে পারি। বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর সেই কাপড়েই তাকে দাফন করা হয়েছিল। (সহিহ বুখারী-১২৭৭)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার