সদকায়ে ফিতর কী দিয়ে আদায় করব-২

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া

২০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৪ পিএম

গত আলোচনায় হাদিস ও সাহাবাদের আমল থেকে সদকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছিল। এবার দেখা যাক মাযহাবের ইমামগণ উত্তম সদকা ফিতর হিসেবে কোনটিকে গ্রহণ করেছেন।
ইমাম শাফেয়ীর মতে, উত্তম হলো হাদিসে বর্ণিত বস্তুর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা দেয়া। অন্য সকল ইমামের মতও এমনই। ইমাম মালিক রাহ.-এর নিকট খেজুরের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত খেজুর ‘আজওয়া’ খেজুর দেয়া উত্তম। আজওয়া খেজুরের ন্যূনতম মূল্য ১৪০০-১৬০০ টাকা প্রতি কেজি। ইমাম আহমদ রাহ.-এর নিকট সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। (আলমুগনী ৪/২১৯)।
ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিকটও অধিক মূল্যের দ্রব্যের দ্বারা ফিতরা আদায় করা ভালো। অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবের বেশি উপকার হয় সেটাই উত্তম ফিতরা। সাহাবায়ে কেরামের যুগে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল। নবী করীম (সা.)-এর যুগে মদীনাতে গমের ফলন ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে ফলন বৃদ্ধি পেলেও মূল্য ছিল সবচেয়ে বেশি। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে, সেকালে আধা ‘সা’ গমের মূল্য এক সা খেজুরের সমপরিমাণ ছিল।

হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে গমের ফলন বৃদ্ধি পেলে আধা ‘সা’ গমকে সদকা ফিতরের অন্যন্য খাদ্যদ্রব্যের এক ‘সা’র মতো গণ্য করা হতো। (আলইসতিযকার : ৯/৩৫৫)। ইবনুল মুনযির বলেন : সাহাবীদের যুগে যখন গম সহজলভ্য হলো তখন তারা আধা ‘সা’ গমকে এক ‘সা’ যবের সমতুল্য গণ্য করলেন। (ফাতহুল মুলহিম ৩/১৫)।
তাহলে বোঝা গেল যে, হযরত মুআবিয়া রা.-এর যুগে গম দ্বারা সদকা ফিতর আদায়ের প্রচলন বেড়েছিল। এর কারণ হলো যে, তখন গমই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোচ্চ মূল্যমানের খাদ্য। এ সময় হযরত ইবনে ওমর সাহাবাদের অনুকরণে খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করতেন।

তখন তাঁকে আবু মিজলায রাহ. বললেন : ‘আল্লাহ তাআলা তো এখন সামর্থ্য দিয়েছেন। আর গম খেজুরের চেয়ে অধিক উত্তম। অর্থাৎ আপনার সামর্থ্য রয়েছে বেশি মূল্যের বস্তু সদকা করার। তবুও কেন খেজুর দ্বারা তা আদায় করছেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি সাহাবাদের অনুকরণে এমন করছি।

যাক আমাদের কথা ছিল, সাহাবায়ে কেরাম গম দ্বারা এজন্যই সদকা ফিতর আদায় করতেন যে, এর মূল্য সবচেয়ে বেশি ছিল। হাদিসে পাঁচ প্রকারের খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে বর্তমানে গমের মূল্য সবচেয়ে কম। তাহলে এ যুগে সর্বশ্রেণির জন্য এমনকি সম্পদশালীদের জন্যও শুধুই গম বা তার মূল্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করা কী করে সমীচীন হতে পারে?

বড়ই আশ্চর্য! পুরো দেশের সব শ্রেণির লোক বছর বছর ধরে সর্বনি¤œ মূল্যের হিসেবে ফিতরা আদায় করে আসছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সকলেই ফিতরা দিচ্ছে একই হিসাবে জনপ্রতি ১০০/১১৫ টাকা করে। মনে হয় সকলে ভুলেই গেছে যে, গম হচ্ছে ফিতরার ৫টি দ্রব্যের একটি (যা বর্তমানে সর্বনি¤œ মূল্যের)। সুতরাং আমরা এ দেশের ফিতরা আদায়কারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি তারা যেন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী হাদিসে বর্ণিত দ্রব্যগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উচ্চমূল্যের দ্রব্যটির হিসেবে ফিতরা আদায় করেন।

পনির, কিশমিশ, খেজুর কোনোটির হিসাব যেন বাদ না পড়ে। ধনী শ্রেণির মুসলিম ভাইদের জন্য পনির বা কিশমিশের হিসাবে ফিতরা আদায় করা কোনো সমস্যাই নয়। যেখানে রমযানে ইফতার পার্টির নামে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়, ঈদ শপিং করা হয় অঢেল টাকার, সেখানে কয়েক হাজার টাকার ফিতরা তো কোনো হিসাবেই পড়ে না। যদি এমনটি করা হয় তবে যেমনিভাবে পুরো হাদিসের ওপর মুসলমানদের আমল প্রতিষ্ঠিত হবে এবং একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নত জিন্দা করা হবে, তেমনি এ পদ্ধতি দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক অবদান রাখবে। গরিব-দুঃখীদের মুখেও হাসি ফুটে উঠবে ঈদের পবিত্র দিনে।

সংশোধনী
দৈনিক ইনকিলাব ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত সংখ্যার ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম’ কলামে অনবধানবশত ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ যে রজনী’ ছাপা হয়েছে। মূলত হবে ‘হাজার মাসের শ্রেষ্ঠ যে রজনী’। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। -বা. স.

 

 


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জীবিতদের নিকট মৃতব্যক্তির হক-২
জীবিতদের নিকট মৃত ব্যক্তির হক-১
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-২
মুমিন হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত রাসূলের প্রতি ঈমান-১
সন্তানদের নেক আমলের উৎসাহ প্রদান
আরও
X
  

আরও পড়ুন

মধুপুরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক দখল করে চলছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট

মধুপুরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক দখল করে চলছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কলার হাট

এএসপির লাশের পাশে চিরকুট— ‘বউ যেন সব সোনা নিয়ে যায়’

এএসপির লাশের পাশে চিরকুট— ‘বউ যেন সব সোনা নিয়ে যায়’

কুষ্টিয়ায় যুবদল নেতার পুকুরে বিষ দিয়ে অর্ধ কোটি টাকার মাছ নিধন

কুষ্টিয়ায় যুবদল নেতার পুকুরে বিষ দিয়ে অর্ধ কোটি টাকার মাছ নিধন

জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ

জামায়াত নেতার মুক্তির দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ

১০ মে 'জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫' উদ্বোধন ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ বিতরণ

১০ মে 'জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫' উদ্বোধন ও প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২৪ বিতরণ

সিংগাইরে গণসংযোগ ও অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত

সিংগাইরে গণসংযোগ ও অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত

নুরুল-মাহিদুলের জোড়া শতকে উড়ে গেল নিউজিল্যান্ড ‘এ’

নুরুল-মাহিদুলের জোড়া শতকে উড়ে গেল নিউজিল্যান্ড ‘এ’

যুদ্ধের মধ্যেও কি ভারত সফর করবেন পুতিন?

যুদ্ধের মধ্যেও কি ভারত সফর করবেন পুতিন?

নতুন পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সমবেত হয়েছেন কার্ডিনালরা

নতুন পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু, সমবেত হয়েছেন কার্ডিনালরা

পদত্যাগের একদফা দাবীতে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি’র বাসভবনে তালা

পদত্যাগের একদফা দাবীতে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি’র বাসভবনে তালা

গবেষণা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করলো বেক্সিমকো ফার্মা ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

গবেষণা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করলো বেক্সিমকো ফার্মা ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘সাদা পতাকা উত্তোলন করে পরাজয় স্বীকার করেছে ভারত’

‘সাদা পতাকা উত্তোলন করে পরাজয় স্বীকার করেছে ভারত’

বার্সা আবার ফিরে আসবে: ফ্লিক

বার্সা আবার ফিরে আসবে: ফ্লিক

রাজশাহীতে ১৫ মে থেকে আম পাড়া শুরু

রাজশাহীতে ১৫ মে থেকে আম পাড়া শুরু

সিগারেটে মূল্যস্তর সংখ্যা কমানোর দাবি

সিগারেটে মূল্যস্তর সংখ্যা কমানোর দাবি

ক্যারিয়ার সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে মিরাজ

ক্যারিয়ার সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে মিরাজ

স্যামসাং নিয়ে এল উচ্চ সক্ষমতা সম্পন্ন নতুন দুইটি স্মার্ট ওয়াশিং মেশিন

স্যামসাং নিয়ে এল উচ্চ সক্ষমতা সম্পন্ন নতুন দুইটি স্মার্ট ওয়াশিং মেশিন

চাঁদপুরে দুই সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত ৫

চাঁদপুরে দুই সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত ৫

সালথায় ধর্ষণ মামলা তুলতে চাপ প্রয়োগ,  প্রাণ দিল স্কুল শিক্ষার্থী

সালথায় ধর্ষণ মামলা তুলতে চাপ প্রয়োগ, প্রাণ দিল স্কুল শিক্ষার্থী

বছরের প্রথম ৪ মাসেই ৩৫ হাজার ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি

বছরের প্রথম ৪ মাসেই ৩৫ হাজার ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি