জবানের হেফাজত : সফলতার সোপান-২
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ এএম

আমরা প্রায়ই যে কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ও মন্দ নামে ডেকে থাকি। এ বিষয়টিকে আবার অনেকেই হালকা মনে করি। হাসি-ঠাট্টার ছলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, কাউকে নিয়ে হাসাহাসি করা বা মন্দ নামে ডাকা যেন আমাদের কাছে তেমন কোনো বিষয়ই না। অথচ এটি এমনই একটি মন্দ কাজ, যে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সতর্ক করেছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি মন্দ। যারা এসব থেকে বিরত না হবে তারাই যালেম।’ (সূরা হুজুরাত, ১১)
কাউকে অপমান করা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা এটা মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। নবীজী (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই; একে অপরের প্রতি যুলুম করে না, একজন আরেকজনকে লাঞ্ছিত করে না এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে না। (সহীহ মুসলিম, ২৫৬৪)
হাসি-মশকরা মানুষের একটি স্বভাবজাত বিষয়। মৌলিকভাবে এটি নিষিদ্ধ নয়। বরং ওই হাসি-মশকরা নিষেধ, যার মাঝে মিথ্যা, অশ্লীলতা ও কাউকে কষ্ট দেয়ার বিষয় থাকে। নবীজীও সাহাবীগণের সাথে হাসি-মশকরা করতেন। কিন্তু তাতে মিথ্যাও থাকতো না, কাউকে কষ্ট দেয়া বা অপমান করার বিষয় থাকতো না। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কেরাম একবার (কোনো এক প্রসঙ্গে) বললেন, আল্লাহর রাসূল! আপনিও আমাদের সাথে হাসি-মশকরা করেন! তখন নবীজী বললেন, (হ্যাঁ, আমি হাসি-মশকরা করি তবে) তবে আমি সত্য ছাড়া বলি না। (জামে তিরমিযী, ১৯৯০)
মুমিন অশ্লীল কথাও বলে না, গালিও দেয় না। এ স্বভাব মুমিনের সাথে যায় না। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মুমিন (অন্যের) দোষ চর্চাকারী হয় না, লানতকারী, অশ্লীল ও গালিগালাজকারী হয় না (বাজে কথা বলে না)। (জামে তিরমিযী, ১৯৭৭)। আর কোনো মুসলিমকে গালি দেয়া তো অনেক বড় অন্যায়। নবীজী (সা.) বলেন, মুসলিমকে গালি দেয়া ফিস্ক (গুনাহের কাজ)। আর তাকে হত্যা করা কুফ্র। (সহীহ বুখারী, ৪৮) আর যে গালিগালাজ করে তাকে কেউ পছন্দ করে না। তার সাথে মিশতে চায় না, দূরে দূরে থাকে। তার সাথে মিশতেও সবাইকে বারণ করা হয়। আল্লাহও তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন। এক হাদিসে নবীজী বলেছেন, অশ্লীল ও গালিগালাজকারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট থাকেন। (জামে তিরমিযী, ২০০২)
একসাথে চলতে গিয়ে মতের অমিল হতেই পারে। বাক-বিতÐা হতেই পারে। কিন্তু এ সব সময়ে গালিগালাজ করাÑ এটা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। অন্যজন গালি দিলেও মুমিন গালি দিবে না। নবীজী বলেছেন, এটা মুনাফিকের স্বভাব। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, চারটি (মন্দ) স্বভাব আছে, এগুলো যার মাঝে থাকবে সে খালেছ মুনাফিক বলে গণ্য হবে। আর যার মাঝে এই চার স্বভাবের কোনো একটি থাকল, তার মাঝে মুনাফেকির একটি স্বভাব থাকল; যতক্ষণ না সে তা বর্জন করে। ১. আমানত রাখলে খেয়ানত করে। ২. কথা বলে তো মিথ্যা বলে। ৩. প্রতিশ্রæতি দিলে ভঙ্গ করে। ৪. তর্কের সময় গালাগালি করে। (সহীহ বুখারী, ৩৪)
রাগের সময়ও যেন আমার মুখ থেকে নোংরা কথা বের না হয়, গালাগালি না করি; রাসূল (সা.) এ থেকে বাঁচার পথ বাতলে দিয়েছেন, কেউ যখন রেগে যায় সে যেন চুপ হয়ে যায়। (যাতে গালিগালাজ, মন্দ কথা থেকে বাঁচতে পারে।) (মুসনাদে আহমাদ, ২১৩৬)। কোনো ব্যক্তিকে গালি দেয়া বা ফাসেক কাফের বলা অন্যায়। কোনো ব্যক্তির মাঝে যদি ওই দোষ থাকে তবুও তাকে ওই কথা বলে গালি দেয়া নিষেধ। আর যদি না থাকে তাহলে ওই গালি ফিরে এসে নিজের গায়ে পড়ে। নবীজী আমাদেরকে বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে ফাসেক বা কাফের বলে (গালি দেয়), আর তার মাঝে ফিস্ক বা কুফ্র না থাকে। তাহলে ওই কথা গালিদাতা ব্যক্তির দিকে ফিরে আসে। (সহীহ বুখারী, ৬০৪৫)
নিজের মা-বাবাকে কি কেউ গালি দেয়? উত্তর হবে, কখন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো মানুষ নিজের অজান্তেই নিজের মা-বাবাকে গালি দেয়। নবীজী (সা.) উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আমাদের বুঝিয়েছেন; নবীজী একবার বললেন, সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হলো, ব্যক্তি তার মা-বাবাকে গালি দেয়া। একথা শুনে সাহাবীগণ বললেন, নিজের মা-বাবাকে আবার মানুষ গালি দেয় কীভাবে? উত্তরে নবীজী বললেন, ব্যক্তি কারো বাবা-মা’কে গালি দেয়, তখন সে গালিদাতার বাবা-মা’কে গালি দেয়। (কেমন যেন পরিণামে গালিদাতা ব্যক্তি নিজের বাবা-মা’কে গালি দিল।) (সহীহ বুখারী, ৫৯৭৩)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ঘটনাস্থলে দেরিতে যাওয়ায় পুলিশের মাথা ফাটিয়ে দিলেন দোকানী

ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিলের ডাক দিলেন মাওলানা মামুনুল হক

বৃষ্টিস্নাত দিনে মোহামেডানের হার, জয়ের শীর্ষস্থান মজবুদ আবাহনীর

চলন্ত বাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩ ছিনতাইকারী আটক

ফুলপুরে অবৈধভাবে মজুদকৃত ৩৯ বস্তা সরকারি চাল জব্দ, ১ জনকে জরিমানা

দাউদকান্দির বানিয়াপাড়ার দরবার শরীফে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে

সুনামগঞ্জে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিএনপির মানববন্ধন

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

সয়াবিন ও শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি গণসংহতি আন্দোলনের

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় খরিপ মৌসুমে ১০৬৮০ জন কৃষক পাচ্ছেন ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৫ টাকার প্রণোদনার বীজ সার

চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গো গ্রীন সেন্টার পরিদর্শন করলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হুসাইন শওকত

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

আমিনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এনসিপি অপপ্রচার করছে- বিএনপি

‘র’ এর প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাংলাদেশে রাজনীতি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ

বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানালো যুক্তরাষ্ট্র

কিমিয়া সাদাত কমিউনিটি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী

মুসলিমদের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করতে ভারতকে আহ্বান বাংলাদেশের

পাকিস্তানের কাছে ৪৩২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছে বাংলাদেশ

মেয়ে সন্তানের জন্য একের অধিক ছাগল দিয়ে আকিকা করা প্রসঙ্গে।

সখিপুরে গৃহবধূ হত্যার ১২ ঘন্টার মধ্যে প্রধান আসামী গ্রেফতার