জালেমের সামনে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ছিলেন যারা
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম
মূসা (আ.)-এর যুগের ফেরাউন ছিল প্রতাপশালী স্বৈরাচারী দাম্ভিক একজন শাসক। সে বনী ঈসরাইলের ওপর অকথ্য জুলুম-নির্যাতন করত। হঠকারিতা ও সীমালঙ্ঘনের চরম পর্যায়ে সে পৌঁছে গিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা মূসা (আ.)-কে পাঠালেন তার কাছে। সঙ্গে হারূন আলাইহিস সালামকেও। বড় বড় নিদর্শনাবলিসহ। এগুলো দেখে যেন ফেরাউন সুপথে ফিরে আসে। আল্লাহ তাআলাকে রব বলে মেনে নেয়। মূসা (আ.)-এর আনুগত্য করে। কিন্তু সে আরো অবাধ্য হয়ে উঠল। মূসা (আ.)-কে যাদুকর বলে অভিহিত করল। আর বলল, আমরাও অনুরূপ যাদু প্রদর্শন করব। অতএব মোকাবেলার স্থান ও দিনক্ষণ ঠিক হলো।
ফেরাউন দক্ষ যাদুকরদের সমবেত করে ঘোষণা করল, বিজয়ী হতে পারলে তাদেরকে বিরাট পুরস্কার দেয়া হবে। লোক সমাগম হলো। যথারীতি কার্যক্রম শুরু হলো। প্রথমেই যাদুকরদের পালা। তারা তাদের রশি ও লাঠি মাটিতে ফেলল। যাদুর প্রভাবে মনে হলো, সেগুলো সাপ হয়ে ছোটাছুটি করছে। সমবেত লোকেরা ভয় পেয়ে গেল। আল্লাহ তাআলা মূসা (আ.)-কে অভয় দিলেন এবং আশ্বস্ত করে বললেন, এসব কারসাজি যাদুকরদের ভেল্কিমাত্র। আর যাদুকর কখনোই সফল হয় না। আল্লাহ তাআলা এবার মূসা (আ.)-কে নির্দেশ দিলেন, হাতের লাঠি নিক্ষেপ করতে। মূসা (আ.) হাতের লাঠিটি ছুড়ে ফেললেন, অমনি তা সাপ হয়ে যাদুকরদের মিথ্যা বানোয়াট বস্তুগুলোকে গ্রাস করে ফেলল। এভাবে সত্যের বিজয় হলো এবং মিথ্যা পরাস্ত হলো।
এসব দেখে যাদুকরদের হুঁশ ফিরে এলো। হৃদয়ের বদ্ধ দুয়ার খুলে গেল। তাদের অন্তরগুলো ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত হলো। তারা সঙ্গে সঙ্গে সিজদায় লুটিয়ে পড়ল আর বলে উঠল, ‘আমরা ঈমান আনলাম রাব্বুল আলামীনের প্রতি, যিনি মূসা ও হারূনের প্রতিপালক।’ (সূরা আ’রাফÑ১২১-১২২) অহঙ্কারী ফেরাউন এতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠল। শুরু করল হম্বিতম্বি। হুঙ্কার দিয়ে বলল, আমি তোদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব। তারপর শূলিতে চড়াব।
কিন্তু আল্লাহ যাদের অন্তরে ঈমানের আলো দিয়ে দেন, যারা ঈমানের শক্তিতে বলিয়ান হয়, তারা কখনো এসব হুমকি-ধমকিতে ভয় পায় না। কুফরের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে সদ্য ঈমানের আলো লাভ করা সেই যাদুকররাও ফেরাউনের শাসানিতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলেন না। প্রত্যয়দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেনÑ ‘যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, সেই সত্তার কসম! আমাদের কাছে যে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি এসেছে তার ওপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দিতে পারব না। সুতরাং তুমি যা করতে চাও করো। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনের ওপর কর্তৃত্ব করতে পারো। আমরা তো আমাদের প্রতিপালকের ওপর ঈমান এনেছি, যাতে তিনি ক্ষমা করে দেন আমাদের গুনাহসমূহ এবং তুমি আমাদেরকে যে যাদু করতে বাধ্য করেছ তাও। আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।’ (সূরা ত্ব-হাÑ৭২-৭৩)
কী অসীম সাহস! জালেমের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সত্যের ওপর অটল-অবিচল থাকার কী অসাধারণ শক্তি! ঈমানের দাবি পূরণে যিন্দেগীর নযরানা পেশ করার আশ্চর্য এক উপাখ্যান। মুমিনকে তো এমনই হতে হয়। ইস্পাত কঠিন সীসাঢালা প্রাচীরের মতো সুদৃঢ়। পার্থিব জীবন মুমিনের কাছে সবসময়ই তুচ্ছ। পরকালীন সফলতাই তার কাক্সিক্ষত গন্তব্য। ফলে সে আখেরাতকেই সর্বদা প্রাধান্য দেয়। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি কামনাই থাকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে। আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে যদি কখনো দুনিয়াবী স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে হয়, এমনকি জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দিতে হয়, তাতেও সে কোনো দ্বিধা করে না।
হক-বাতিলের লড়াইয়ে, সত্য-মিথ্যার সংঘাতে এক বিন্দুও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয় না। বাতিলের সামনে মাথা নত করে না। হকের ঝাÐা সমুন্নত রাখে। হক কথা বলার কারণে যদি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়, তাহলে সাদরে গ্রহণ করে, আল্লাহর রেযামন্দির আশায়, সুখময় স্বপ্নীল জান্নাতের প্রত্যাশায়।
যারা এমন মজবুত ঈমান লালন করে, সত্যের আওয়াজ বুলন্দ করতে সদা নির্ভীক থাকে, কারো চোখ রাঙানির ভয় পায় না, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর ভালোবাসা প্রাপ্তির মহা সুসংবাদ। কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি নিজ দ্বীন থেকে ফিরে যায়, তবে আল্লাহ এমন লোক সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালোবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি কোমল এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা মায়েদাÑ৫৪)
ফেরাউন কঠোর শাস্তির হুমকি দেয়া সত্তে¡ও তার সামনে সেই যাদুকরদের হক ও ঈমানের প্রতি নির্ভীক ও অবিচল থাকার যে সাহসী উচ্চারণ, তা যুগে যুগে সত্যের অনুসারী মুমিনদের জন্য আদর্শ ও প্রেরণাদায়ক। আমরাও যেন সব পরিস্থিতিতে ঈমান ও সত্যের ওপর সদা অনঢ় থাকতে পারি, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে এটাই প্রত্যাশা।(আমীন)
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে