প্রশ্ন: জাকাত না দেয়ার শাস্তি কি?
০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

উত্তর: জাকাত ইসলামের পঞ্চ ভিত্তির অন্যতম। যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র ও বৃদ্ধি। ইসলামী পরিভাষায় যাকাত বলা হয়; আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ধনাঢ্য ব্যক্তির সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া। হিজরি দ্বিতীয় সনে মতান্তরে ৪র্থ সনে যাকাত ফরজ হয়। এর আগেও যাকাতের বিধান ছিল। তবে যাকাতের অংশ নির্ধারিত ছিল না। বছরের সব খরচাদি নির্বাহ করার পর যদি কোনো ব্যক্তির কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা তার মূল্য অবশিষ্ট থাকে তাহলে ওই ব্যক্তির উপর যাকাত দেওয়া ফরজ। ইসলাম যাকাত অনুমোদন করে সারাবিশে^র মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সুস্পষ্ট স্বাক্ষর রেখেছে। যাকাত সুষ্ঠু আর্থিক নীতির বুনিয়াদ, সমাজ কল্যাণের চাবিকাঠি, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পৃষ্ঠপোষক। পৃথিবীর যেখানে অর্থ বন্টনে বৈষম্য দেখা দিয়েছে এবং যাকাতের বিধান চালু করা হয়নি, সেখানে স্বল্পসংখ্যক লোকের হাতে পুঞ্জিভূত হয়েছে বিপুল অর্থসম্পদ আর উত্তরোত্তর সিংহভাগ লোক দারিদ্রের বোঝা মাথায় নিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে। ইসলাম যে পাঁচটি স্তম্ভের ওপর যুগ যুগ ধরে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত আছে তার অন্যতম জাকাত। সঠিকভাবে জাকাত আদায় করলে, এক দিকে যেমন সম্পদশালী ও বিত্তবানদের সম্পদ পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়, অন্য দিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত বিশাল এক জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা ও অসচ্ছলতা দূর হয়ে শান্তি ও সচ্ছলতা ফিরে। বিপরীতে যারা দুনিয়ার লোভ-লালসা ও অর্থকড়ির মোহে পড়ে, গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান জাকাতকে বর্জন করে, তারা জাকাত আদায়ের যাবতীয় সুফল ও কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয় এবং পরকালীন জীবনে অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও কঠিন শাস্তিতে নিপতিত হবে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে জাকাত অনাদায়কারীর ব্যাপারে নানা ধরনের শাস্তি ও নিন্দার ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ : ‘সুস্থ মস্তিষ্ক, আজাদ, বালেগ, মুসলমান, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত আদায় করা তার ওপর ফরজ হয়ে যায়। (বাদায়েউস সানায়ে-২/৭৯, ৮২) জাকাতের খাত : যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তারা কাদের জাকাত প্রদান করবেন, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের একটি দীর্ঘ আয়াত বর্ণিত হয়েছে- ‘জাকাত তো কেবল ফকির, মিসকিন, আমিলিন (জাকাত-সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি) দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এ হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ : ৬০) জাকাত না দেয়ার পরিণতি : জাকাত শরিয়তের অকাট্য ফরজ বিধান। যারা জাকাত আদায় করে না তারা শরিয়তের দৃষ্টিতে কঠিন অপরাধী এবং আখিরাতে ভীষণ শাস্তির সম্মুখীন হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, যারা স্বর্ণ-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তির ‘সুসংবাদ’ দাও। যে দিন সে ধনসম্পদ জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দিয়ে তাদের কপাল, তাদের পাঁজর ও পিঠে দাগ দেয়া হবে (এবং বলা হবে) এই হচ্ছে সেই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত করতে। সুতরাং তোমরা যে সম্পদ পুঞ্জীভূত করতে, তার মজা ভোগ করো।’ (সূরা তাওবাহ : ৩৪-৩৫) জাকাত বর্জন করায় সাপের শাস্তি : হজরত আবু হুরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যাকে আল্লাহ তায়ালা সম্পদ দিয়েছেন এবং সে তার জাকাত দেয় না; কিয়ামতের দিন ওই সম্পদ বিষাক্ত সাপে পরিণত করা হবে, যার উভয় চোখের উপরই দু’টি বিন্দু থাকবে। (এমন সাপ অত্যধিক বিষাক্ত হয়) এবং তার গলায় বেড়ির মতো পেঁচিয়ে দেয়া হবে। সাপ তার উভয় চোয়ালে দংশন করবে এবং বলবে, আমি তোর সম্পদ, আমি তোর সঞ্চয়।’ (বুখারি-১৪০৩) জাকাত বর্জন করলে জাহান্নামে যেতে হবে : হজরত আনাস বিন মালিক রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে জাকাত দেয় না; কিয়ামতের দিন সে জাহান্নামে যাবে।’ (কানজুল উম্মাল-১৫৮১১) জাকাত বর্জনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকাশ পায় : হজরত আবু বুরাইদা রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে জাতি জাকাত দেয়া বন্ধ করে, আল্লাহ তায়ালা তাদের দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত করেন, অপর বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর বৃষ্টি বন্ধ করে দেন।’ (আল মুজামুল আওসাত) জাকাত বর্জনকারী মুনাফিক : হজরত ইবনে ওমর রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সালাত তো এমন একটি বস্তু যা সবার সম্মুখে প্রকাশ পায়, তা গ্রহণ করেছে। আর জাকাত গোপন জিনিস তা নিজে খেয়ে ফেলেছে। হকদারকে দেয়নি। এমন লোক মুনাফিক।’ (মুসনাদুল বাজ্জার-৪৭১) তাই বর্তমানে বিশে^ সম্পদের অভাব নেই, ওই সম্পদের ওপর জনগণের অধিকারহীনতাই দারিদ্র সমস্যার প্রধান কারণ। যাকাত প্রধানের মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি অর্জিত হয়।
উত্তর দিচ্ছেন: মো: লোকমান হেকিম, গবেষক ও কলমিস্ট।
বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ভারতে আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, যেভাবে নাটকীয়ভাবে বেঁচে গেল একটি পরিবার

অবশেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন উখিয়ার ১৩ এসএসসি পরীক্ষার্থী

পবিপ্রবি শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে আহত হওয়ার পরে চিকিৎসা অবহেলার মৃত্যুর অভিযোগ

শেরপুর জেলা উপজেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

নববর্ষ উদযাপনে মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আনন্দ শোভাযাত্রা

মাজারের বার্ষিক ওরসের মেলায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জবাই করে হত্যা করল স্বামী

কুমিল্লার রাজগঞ্জ বাজারে অগ্নিকাণ্ডে পৌনে দুই কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত

সরকার নয়, আমরা একটি দেশ হিসেবে কাজ করছি: জ্বালানি উপদেষ্টা

মতলবে উপজেলা বিএনপির বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা

ফিলিস্তিনবাসীদের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল

বর্ণাঢ্য ‘ড্রোন শো’ দেখে মুগ্ধ লাখো মানুষ

নতুন বছরে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হোক : মঞ্জু

বুধবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পুরোনো পদে ফিরলেন গাঙ্গুলি

আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিং নারী ক্রিকেট দল

রূপায়ণ সিটিতে শতকন্ঠে বর্ষবরণ

বর্ষবরণকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরে জেলা বিএনপির শোভাযাত্রা

আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি: ফারুকী

ভারতীয়দের হজ কোটা ৮০ শতাংশ কমাল সৌদি

চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে ঢাকার আকাশে ব্যতিক্রমী ড্রোন শো