ইসলামের দৃষ্টিতে রোগীর রোগের চিকিৎসা
১৭ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ০১ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম
রোগীর প্রতি সম্মান দেখানো : রোগীর প্রতি ডাক্তারের যে দায়িত্ব রয়েছে, এর অন্যতম হচ্ছে রোগীকে সম্মান দেখানো। আর প্রত্যেক বিষয়ের সম্মান দেখানোর পদ্ধতি আল্লাদা আলাদা। এক্ষেত্রে সম্মান দেখানোর বিষয় হলো, রোগীর অভিযোগ ও তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনা। তার রোগ বা তাকে নিয়ে বিদ্রুপাত্বক কোনো কথা না বলা। রোগীর প্রতি কোনোরূপ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য প্রদর্শন না করা। অনেক সময় রোগীর জ্ঞানগত যোগ্যতা বা সামাজিক অবস্থান নিচু হওয়ার কারণে অবজ্ঞা করা হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মানুষের মৌলিক অধিকার হচ্ছে তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলা। আল কোরআনে বলা হয়েছে, আর মানুষের দিক থেকে অহংকারবশত মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং পৃথিবীতে দম্ভ করে চলো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ রোগী, ডাক্তারের খোশকথা দ্বারা উৎফুল্ল হয়ে অনেক সময় প্রশান্তি অনুভব করে। এটাও রোগীর ওপর চাপ কমাতে সহায়ক হয়। তাই রোগীকে সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে হবে। সওয়াবে পাল্লায় এই কথাও শামিল হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘ভালো ভালো কথা বলাও সদকার অন্তর্ভূক্ত।’ (মুসনাদে আহমদ-৮১১১)।
রোগীর দৃষ্টিতে রোগ দেখা : সমানুভূতি নিয়ে রোগী দেখা। অর্থাৎ রোগী, রোগের কারণে মানসিক ও শারীরিক যতটুকু পেরেশানিতে আছে, এর অনুভূতি ডাক্তারের মাঝে থাকা। একজন ডাক্তারের কাছে রোগী কী প্রত্যাশা করে, সে অনুযায়ী ডাক্তারের রোগীর প্রতি খেয়াল করা। এ জন্য, কোনো রোগী সরাসরি ডাক্তারের সাক্ষাতে এলে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনা ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো। এ ব্যাপারে কোনো গাফলতি হলে, রোগীর সমস্যা বুঝার ক্ষেত্রে ডাক্তারের অনুভূতি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। (বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে হয় না। এক শ্রেণীর অসাধু ডাক্তার, পয়সা কামানোর লোভে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের পরীক্ষার কথা লিখে দেয়)।
রোগীর কল্যাণ কামনা ও লাভজনক দিককে প্রাধান্য দেয়া : রোগীর অবস্থা বিবেচনায়, তার সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ডাক্তারের ভূমিকা অগ্রগন্য। সাধারণ মানুষের ভূমিকা এক্ষেত্রে অন্ধের মতো। তাই ডাক্তারকে আমানতদারি রক্ষা করে চলতে হবে। কোনো কিছু ঠিক করে দেয়ার আগে, চিকিৎসা শাস্ত্রের আলোকে এর কার্যকারিতা ও প্রায়োগিক দিকগুলো ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। অপ্রচলিত, অগ্রহণযোগ্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। মানহীন কোম্পানির ওষুধ, শুধু কমিশনের লোভে দিলে চিকিৎসা পেশার সঙ্গে এটা হবে এক ধরনের বেঈমানি।
নিম্মোক্ত বিষয়গুলোও রোগীর কল্যাণ কামনার অন্তর্ভূক্ত লিখিত চিকিৎসা পত্র দেয়া। * লেখা হবে স্পষ্ট অক্ষরে (আমাদের দেশে অনেকে প্রেসক্রিপশন দেন, যা ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়ার পর পড়া যায় না। এটা কোনো দায়িত্বশীল ডাক্তারের কাজ হতে পারে না)। সেখানে ওষুধের পরিমাণ, ব্যবহারের পদ্ধতি, চিকিৎসা গ্রহণের সময় যে সব বিষয় পরিহার করে চলতে হবে ও ওষুধ ব্যবহারের ফলে সাময়িক যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা সুস্পষ্ট অক্ষরে লেখা থাকতে হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত খাঁটি মুমিন হতে পারে না, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে তা অন্যের জন্য পছন্দ করে তা অন্যের জন্য পছন্দ করে না।’ (সহিহ বোখারী-১৩)।
রোগ এমন হলে, যা থেকে নিরাময়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই তাহলে দায়িত্ব হচ্ছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকে সেবা দিয়ে যাওয়া। যে বিষয় নিয়ে পড়া-লেখা হয়েছে, ওই বিষয়ের কোনো রোগী এলে চিকিৎসা দিতে কোনো কার্পণ্য না করা। বরং সামর্থ্যের সর্ব্বোচ্চটা ব্যয় করা। যদি নিজের দ্বারা সম্ভব না হয়, তাহলে কাছের কোনো হাসপাতালে রেফার করা। মনে রাখতে হবে, একজন মানুষের জীবনের মূল্য জগতের কোনো বস্তু হতে পারে না। তাই অবহেলার কারণে কেউ মারা গেলে আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। আল্লাহ যেমন অনুগ্রহ করে আমাকে ডাক্তার বানিয়েছেন, আমারও কর্তব্য হলো মানুষের ওপর ইহসান করা।
রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা করা : পরীক্ষা ও রোগ চিহ্নিত করা ও চিকিৎসার জন্য, রোগীর গোপনাঙ্গ দেখা জায়েজ হবে। গোপনাঙ্গ বলতে বুঝানো হয়েছে, সতরের অংশ। এক্ষেত্রেও রোগীর অনুমতি নিতে হবে। সেখানকার কোনো বিষয় মানুষের সামনে ফাঁস করে দেয়া, অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের দোষ গোপন করবে আল্লাহ তায়ালা তার দোষ দুনিয়া ও আখেরাতে গোপন রাখবেন।’(সুনানে আবু দাউদ-৪৮৯৩)। যেখানে দোষকে গোপন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেখানে দোষ নয় বরং বাধ্য হয়ে চিকিৎসার স্বার্থে নিজের কোনো বিষয় চিকিৎসকের সামনে প্রকাশ করলো আর ডাক্তার সাহেব তা মানুষের সামনে প্রকাশ করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করলো তাহলে এর কি কোনো বিচার হবে না?
রোগী চিকিৎসা করাতে অনীহা প্রকাশ করলে চিকিৎসকের করণীয় : রোগী চিকিৎসা করাতে অনীহা প্রকাশ করলে বা বিরত থাকতে চাইলে ডাক্তারের কিছু করণীয় আছে। চিকিৎসা না করলে ভবিষ্যতে কী কী সমস্যা হতে পারে তা রোগীকে বুঝানো। রোগ বিস্তারের ভয়াবহ দিকগুলো তার সামনে তোলে ধরা। তবে এক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত হয় এমন কিছু না বলা। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, রোগীর অনুমতি নিয়ে চিকিৎসা করা। তবে রোগ যদি সাধারণের জন্য ঝুঁকির কারণ হওয়ার মতো হয় তাহলে বিশেষ কারণে অনুমতি ছাড়াই চিকিৎসা হতে পারে। রোগীর মৌখিক সম্মতিও অনুমতি হিসেবে ধর্তব্য হবে। কোনো চিকিৎসা গ্রহণে রোগী অনীহা প্রকাশ করলে, যদি এর বিকল্প থাকে তাহলে চিকিৎসকের দায়িত্ব হলো তাকে বিকল্পটা বলে দেয়া। একটার মধ্যে আটকে রেখে মানসিক চাপে ফেলা উচিত নয়। সংক্রামক রোগের রোগী হলে চিকিৎসকের করণীয় :রোগ আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিত কারো শরীর থেকে অন্যের শরীরে সংক্রমতি হতে পারে না। আল্লাহর নির্দেশে কোনো কোনো রোগ একজন থেকে আরেক জনের মাঝে ছড়াতে পারে। তাই এমন রোগ হলে যা ছড়ানোর আশংকা আছে চিকিৎসকের দায়িত্ব হলো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।পরিশেষে বলতে চাই চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামের গাইডলাইন হলো রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা করা। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা হলেই আল্লাহর হুকুমে আরোগ্য হয়।’ (মুসলিম)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ থাকা এবং রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র বৈঠক, হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে আলোচনা থাকবে
রামু সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত
এক সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ