ঢাকা   বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রমযান, কুরআন ও বদর যুদ্ধ

Daily Inqilab জাফর আহমাদ

০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম

(গত দিনের পর) মানব জীবনের প্রতিদিনকার কথা ও কাজগুলো হয় সত্য অথবা মিথ্যার ওপর পরিচালিত হয়। যাদের নফসের উপর বিবেক শক্তিশালী তারা সত্য কথা ও কাজের উপর টিকে থাকতে পারে। পক্ষান্তরে যাদের বিবেকের উপর নফস শক্তিশালী বা বিজয়ী তারা মিথ্যার বেসাতি ছড়ায়। তাই আল্লাহ রাব্বুল দয়া করে আমাদের বিবেককে শক্তিশালী করার জন্য অনেকগুলো কর্মসূচী প্রণয়ণ করেছেন। যেই কর্মসূচিগুলো আল্লাহ তা’আলা আল কুরআনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। সবগুলো আনুষ্ঠানিক ইবাদাত সামষ্টিকভাবে এ কাজ করে থাকে। আমরা যদি ইসলামের প্রতিটি ইবাদাতের দিকে গভীর মনযোগ নিবিষ্ট করি তবে বুঝতে পারবো, মানুষের বিবেককে শক্তিশালী ও জাগ্রত করে পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য মহান আল্ল­াহর এক একটি কর্মসূচী কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ঈমান, নামায, যাকাত ও হজ্জের ন্যায় রোযা একজন ব্যক্তিকে সারা দিনের ক্ষুধা-পিপাসার দুঃসহ জ্বালা নিবারণের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘আল্লাহ আলীম অর্থাৎ মহাজ্ঞানী, অতিশয় জ্ঞাত বা বাছির অর্থ্যাৎ মহাদ্রষ্টা, গভীর ও প্রখর দৃষ্টি সম্পন্ন’ এ সমস্ত নামের ভয়ে সে সুযোগ গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। অবিরত ও ক্রমাগত একটি মাস-এ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তার হৃদয়ের গভীরে আল্ল­াহর এমন এক ভয় অঙ্কিত হয়, যার ফলে বাকি ১১টি মাস সকল প্রকার মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। এটি এমন এক জিনিষ, এমন একটা শক্তি ও সত্য মিথ্যা পার্থক্য নিরুপণের এমন মানসিকতা, যার সাহায্যে বা যার উপর ভিত্তি করে মানুষ অন্যায় থেকে বিরত থাকতে পারে, ন্যায় কাজের জন্য অগ্রসর হতে পারে। এ শক্তির উপর ভর করে এবং আল-কুরআনের জ্ঞানকে পূঁজি করে মিথ্যা কথা ও কাজ পরিহার করে সত্য কথা ও কাজ করার জন্য এগুতে পারে।

উল্লে­খিত হাদীসের অর্থ সুস্পষ্ট। এটির দ্বারা বুঝা যায় যে, শুধু ক্ষুধার্ত ও পিপাসা থাকাই ইবাদাত নয়, বরং এটা আসল ইবাদাতের অবলম্বন মাত্র। প্রকৃত ইবাদাত হলো আল্ল­াহর ভয়ে সকল প্রকার মিথ্যা কথা ও কাজ পরিহার করে সত্যের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া, সত্যের সাক্ষ্য হওয়া। আল্ল­াহ তায়ালা বলেন: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্ল­াহর জন্যে সত্যের সাক্ষী হয়ে দাড়াও।’ (সুরা নিসা : ১৩৫)। যে ব্যক্তি মিথ্যার বিরুদ্ধে এবং সত্যের পক্ষে দাঁড়াবে না আল্ল­াহ রাব্বুল আলামীন তাকে বড় জালিম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্ল­াহ তায়ালা বলেন: ‘যার কাছে আল্ল­াহর পক্ষ থেকে কোন সাক্ষ্য বর্তমান রয়েছে, সে যদি তা গোপন রাখে, তবে তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে?’ (সুরা বাকারা : ১৪০)। বড় জালেম বলা হয়েছে এজন্য যে, প্রকৃতপক্ষে সত্যের স্বাক্ষ্যকে গোপন করার দরুণ দুনিয়াবাসী সত্যের আলো বা সত্য পথের দিশা থেকে বঞ্চিত হলো। অথচ আমাদের আবির্ভাবের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যের সাক্ষ্য দান করা।

আল্ল­াহ তায়ালা বলেন: ‘আমি তোমাদেরকে এক মধ্যমপন্থী জাতি বানিয়েছি যাতে করে তোমরা লোকদের জন্যে সাক্ষী হও আর রাসুলও যেন তোমাদের জন্যে সাক্ষী হন।’ (সুরা বাকারা : ১৪৩)। মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ না করা মানে সত্য গোপণ এবং মিথ্যার পক্ষাবলম্বন করা বুঝায়। সেই ব্যক্তি সামগ্রীকভাবে সত্যের পরিবর্তে বাতিলের সাক্ষীতে পরিণত হয়ে গেল। এজন্যই সারা বিশ্বময় আল্ল­াহর গযব ইহুদী জাতিগোষ্ঠির ন্যায় আমাদেরকেও ক্রমান্বয়ে ঘিরে ফেলছে। ইহুদী জাতির প্রচ- আঘাত সম্পর্কে আল্ল­াহ তায়ালা বলেন : ‘লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অপমান, অধ:পতন ও দূরাবস্থা তাদের উপর চেপে বসলো এবং তারা আল্ল­াহর গযবে পরিবেষ্টিত হয়ে পড়লো।’ (সুরা বাকারা : ৬১)।

সত্যের সাক্ষ্য দুই প্রকার, এক: মৌখিক সাক্ষ্য বলতে বুঝায় আমাদের কাছে আল-কুরআনের মাধ্যমে যে সত্য পৌঁছেছে, রমাদানের রোয়ার মাধ্যমে মিথ্যা কথাকে পরিহার করে সত্যকে গ্রহণ করার যে শিক্ষা পেলাম, তা বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে মানুষের চিন্তায়, বিশ্বাসে, নৈতিকতায়, তাহযীব-তামাদ্দুনে, সামাজিক রীতি-নীতিতে, রুজি-রোযগারে, লেনদেনে ও আইন-আদালতে, রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এবং মানবীয় বিষয়াদির অন্যান্য সকল দিক ও বিভাগে সত্যতার প্রমাণ অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে বিবৃত করা। এবং যুক্তি সহকারে মিথ্যার অসারতা এবং দোষত্রুটি নির্দেশ করা। বাস্তব সাক্ষ্যদানের অর্থ হচ্ছে রমাদানের রোযার মাধ্যমে মিথ্যাকে পরিহার করে সত্যকে গ্রহণ করার যে শিক্ষা পেলাম, তা প্রথমে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন ও রূপদান করে নিজেকে দুনিয়াবাসীর সামনে উপস্থাপণ করা। যে কোন স্থানে, যে কোন অবস্থায়, যে কোন ব্যক্তি বা জাতির সাথেই আমাদের সাক্ষাৎ হোক না কেন, আমাদের সুন্দর ও উন্নত চরিত্র দেখে যেন মুহিত হয়। এবং চারিত্রিক দাওয়াত পেয়ে দুনিয়াবাসী যেন ইসলামের খুব কাছাকাছি চলে আসে।

সত্যিই যদি আমরা মিথ্যা কথা ও কাজকে পরিহার করে সত্যের উপলব্ধি করতে পারি তবেই আমাদের খানাপিনা পরিত্যাগ করা কাজে আসবে।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামের আলোকে স্বাধীনতা
জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য না পড়ার শাস্তি
আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব
মুমিনের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি
দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম
আরও

আরও পড়ুন

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ

অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ