নফল ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সহজ উপায়
০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৮ এএম
নফল ইবাদত আবশ্যক কোনো বিষয় না, এটি ব্যক্তির ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ ‘অতিরিক্ত’ হিসেবে কোনো মানুষ নিজের ইচ্ছায় এ ইবাদত করে থাকেন। এর মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে।আর বুদ্ধিমান মোমিন কল্যাণের প্রতি ধাবিত হয়। যেসব কাজে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হন, যেসব কাজ তাঁর নিকটবর্তী করে, সেসব কাজে আগ্রহী হয়। যেসব কাজ তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তা এড়িয়ে চলে। বিরত থাকে সেসব কাজ থেকেও, যা তার দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতির কারণ হয়। যে জিনিসের নৈকট্য উপকারী, তার কাছাকাছি থাকতে হবে। আর যে জিনিসের নৈকট্য ক্ষতিকর, তা থেকে দূরত্বে অবস্থান করতে হবে। এটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয়।
আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যই সবচেয়ে উপকারী। যারা আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রশংসা করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘তারা আপন রব পর্যন্ত পৌঁছার উপায় তালাশ করে। এ উদ্দেশ্যে যে, কে তার সবচেয়ে নিকটবর্তী হতে পারে। তারা তাঁর রহমতের আশা রাখে ও তাঁর আজাবের ভয় করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৫৭)। তিনি আরও বলেন, ‘যারা অগ্রগামী, তারা তো অগ্রগামীই। তারাই আল্লাহর বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা।’ (সুরা ওয়াকিয়া : ১০-১১)।
আল্লাহতায়ালার নৈকট্যের অনেক স্তর রয়েছে। ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালার অনেক বেশি নিকটবর্তী। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে নিজ দাসত্বের দ্বারা সম্মানিত করেছেন। তিনি ফেরেশতাদের গুণ বর্ণনা করে বলেন, ‘নৈকট্যশীল ফেরেশতারা।’ (সুরা নিসা : ১৭২)। আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে নিকটবর্তী নবী-রাসুলরা। তারা নৈকট্যশীলদের সর্দার। আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) এর প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত এবং আল্লাহতায়ালার নৈকট্যশীলদের একজন।’ (সুরা আলে ইমরান : ৪৫)। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী আল্লাহ তায়ালার। নিশ্চয়ই তিনি নৈকট্যশীলদের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাবান।
আল্লাহ তায়ালার নৈকট্যই বান্দার প্রকৃত শক্তির উৎস। হজরত মুসা (আ.) সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাকে তুর পাহাড়ের ডান দিক থেকে ডাক দিলাম। তাকে আমার অন্তরঙ্গরূপে নৈকট্য দান করলাম।’ (সুরা মারইয়াম : ৫২)। আল্লাহ তায়ালার এই নৈকট্যের শক্তিই হজরত মুসা (আ.) কে ফেরাউন ও জাদুকরদের মুখোমুখি হওয়ায় শক্তি যুগিয়েছে। তাই যেসব কাজ আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে, সেগুলো জানতে হবে। আপন করে নিতে হবে। বিশেষ কিছু ইবাদত রয়েছে, যা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসূ।
১. তওবা। তওবা বান্দাকে আল্লাহতায়ালার নিকটবর্তী করে দেয়। আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে দূরে রাখে। রাসুল (সা.) এমনটিই বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাও। এরপর তওবা করো। নিশ্চয়ই আমার রব নিকটবর্তী ও আহ্বানে সাড়াদাতা।’ (সুরা হুদ : ৬১)। যে তওবা করে এবং একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই ইবাদত করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে আপন করে নেন। সে ডাকলে তিনি সাড়া দেন।
২. এহসান। এহসান (আল্লাহতায়ালাকে স্বচক্ষে দেখার অনুভূতি নিয়ে ইবাদত করা অথবা অন্তত আল্লাহতায়ালা দেখছেন, ইবাদতের সময় এই অনুভূতি জাগ্রত রাখা) সবচেয়ে উত্তম আমল। এর মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হওয়া যায় আল্লাহ তায়ালার। এরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত এহসানকারীদের নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ : ৫৬)। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘যার এহসান যত উঁচু পর্যায়ের হবে, সে তত বেশি আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হতে পারবে। এহসানের তারতম্যের কারণেই নামাজের আত্মিকতায় তারতম্য সৃষ্টি হয়। একই ধরনের রুকু-সেজদা আদায় করা সত্ত্বেও দুজনের নামাজের মধ্যে দেখা দেয় বিস্তর ব্যবধান।
৩. আল্লাহর জিকির। জিকির অর্থ স্মরণ। বান্দা আল্লাহ তায়ালাকে যত বেশি স্মরণ করবে, তত বেশি তাঁর আপন হবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা পোষণ করে, আমি তার সঙ্গে সেরূপ আচরণ করি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, আমি তার সঙ্গেই থাকি।’ (মুসলিম : ২৬৭৫)।
৪. ফরজ ও নফল ইবাদতগুলো আদায় করা। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফরজ ইবাদতের মাধ্যমেই বান্দা আমার সবচেয়ে আপন হয়। নফল ইবাদতগুলো আদায়ের কারণে এটি উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আমি তাকে প্রিয়দের অন্তর্ভুক্ত করে নিই।’ (বোখারি : ৬৫০২)।
ফরজ ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাজ আদায় করা, আল্লাহ তায়ালার সামনে সেজাদবনত হওয়া। সেজদা বান্দাকে অনেক নিকটবর্তী করে দেয় আল্লাহ তায়ালার। এরশাদ হচ্ছে, ‘সেজদা করো, নিকটবর্তী হও।’ (সুরা আলাক : ১৯)। সেজদার কথা বলে নামাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ বলা হয়েছে, সেজদা ও নামাজ বান্দাকে আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে দেবে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘বান্দা সেজদাবনত অবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব, সেজদায় গিয়ে অধিক পরিমাণে দোয়া করো।’ (মুসলিম : ৪৮২)। সেজদা চূড়ান্ত পর্যায়ের বিনীত হওয়ার নিদর্শন। এটি আত্ম-অবদমন ও অহঙ্কার পরিত্যাগের বার্তা দেয়। বান্দা যখন সেজদা করে, সে নিজ প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে। ফলে সে নিজ প্রতিপালকের নিকটবর্তী হয়। তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করে। যে ব্যক্তি জান্নাতে রাসুল (সা.) এর সঙ্গী হতে চায়, রাসুল (সা.) তাকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, ‘সে যেন অধিক পরিমাণে সেজদা করে নিজেকে এই মর্যাদায় পৌঁছাতে সহযোগিতা করে।’ (মুসলিম : ৪৮৯)। এর মাধ্যমে রাসুল (সা.) অধিক পরিমাণে সেজদা তথা বেশি বেশি নামাজ পড়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
৫. দোয়া। দোয়া একটি মহান ইবাদত। আল্লাহতায়ালা দোয়াকারীর অতি কাছাকাছি অবস্থান করেন। বান্দার দোয়া কবুল করেন। তার সহযোগিতা করেন। ভালো কাজের তৌফিক দেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আপনি বলুন, আমি পাশেই আছি। কেউ যখন আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই। (সুরা বাকারা : ১৮৬)।
৬. উত্তম চরিত্র। উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জন করা যায়। জান্নাতে রাসুল (সা.) এর সঙ্গী হওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় ও কেয়ামতে আমার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে, যে চরিত্রের দিক দিয়ে সবচেয়ে সুন্দর।’ (তিরমিজি : ২০১৮)।আর নফল ইবাদত বলতে বুঝানো হয় আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য যে ইবাদত করা হয়, কিন্তু তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা বা গায়রে মুয়াক্কাদা কোনো কিছু নয়। কখনো কখনো নফল দ্বারা ফরজ, ওয়াজিব ছাড়া বাকি সব ইবাদতকে বুঝানো হয়। তবে প্রথম ব্যবহারটি ব্যাপক প্রচলিত।
নফল ইবাদতের উদ্দেশ্য:-নফল নামাজের দ্বারা মূলত আল্লাহর প্রতি বান্দার মহব্বতের পরিমাপ করা হয়। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহকে ভালোবাসার বিষয়টি যাচাই হয়। বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে এভাবে বুঝানো যায় যে, মালিকের পক্ষ থেকে কর্মচারিদেরকে দৈনিক কাজের রুটিন ঠিক করে দেয়া হয়। যা তাকে অবশ্যই করতে হবে। আর মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত ফরজ। তবে নফলের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অধিকতর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করে। আর নফল ইবাদতের মধ্যে নফল নামাজ আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত নামাজের বাইরেও কিছু নফল নামাজ রয়েছে। হাদিসে যেসব নামাজের ব্যাপারে বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যেমন—এক সাহাবি প্রশ্ন করেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কী? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন : ‘তুমি আল্লাহর জন্য বেশি বেশি সিজদা করবে (বেশি বেশি নফল নামাজ পড়বে); কারণ তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করো তখনই তার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করেন।’ (সহিহ মুসলিম : ১/৩৫৩)। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে অবাদে চলছে ফিটনেস বিহীন যানবাহন, নিশ্চুপ পুলিশ ও বিআরটিএ
কোটালীপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
সাটুরিয়া উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার
‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!
ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী
ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা