ধর্ম যার ধর্মীয় উৎসবও তার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

হাসানুল বান্না অলি আল্লাহ তায়া’লা দুনিয়াতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। সবাইকে সৃষ্টি করা হয়েছিল একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য। এটা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই মানুষকে সৃষ্টি করার। আল্লাহ তায়া’লা কুরআনে বলেন, আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে। (সূরা যারিয়াত-৫৬)।
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়া’লা সমগ্র মানুষকে সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ছিলো তার ইবাদাত করা। এখানে কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে বলা হয় নি।ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয় নি।এমন বলা হয় নি যে,শুধুমাত্র মুসলমানদেরকে আল্লাহর ইবাদাত করার সৃষ্টি করা হয়েছে। বরং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাইকে আল্লাহ তায়া’লার ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তবে ইসলাম হলো আল্লাহ তায়া’লার একমাত্র মনোনীত ও স্বীকৃত জীনবব্যবস্থা।ইসলাম ছাড়া বাকি সকল ধর্ম কোনো শর্ত ছাড়াই বাতিল! সুতরাং মুসলমানদের সখর কাজকর্ম হবে ইসলাম সম্মত অর্থাৎ আল্লাহ তায়া’লার দেওয়া বিধান অনুযায়ী। তারা তাদের জীবন চলে গেলেও নিজেদের ধর্ম বা আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে পারে না। যখনি মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে তখন সকল ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা সংস্কৃতি ও ধর্মীয় উৎসব নির্ধারণ করা হয়েছে। মুসলমানদের সবকিছু আল্লাহ তায়া’লা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। বাকি অন্য সব ধর্মাবলম্বীদের তাদের ধর্ম আলাদা আলাদা সবকিছু দিয়েছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেন, তোমাদের জন্য তোমাদের (দ্বীন) কর্মফল এবং আমার জন্য আমার (দ্বীন) কর্মফল। (সূরা কাফিরুন)।
আল্লাহ তায়া’লা মুসলমানদের জন্য বছরে দুটো ধর্মীয় উৎসব দিয়েছেন। মুসলমানেরা তাদের এই দুইদিন আনন্দ করবে এবং দিন টিকে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী পালন করবেন। মুসলমানদের মনে রাখতে হবে যে,তাদের বাৎসরিক দুটো উৎসবের সাথে ইসলাম ও আক্বিদার এক গভীরতম সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটো উৎসব শুধু উৎসব নয় বরং এগুলো মুসলমানদের ধর্মীয় ইবাদাতেরও অন্তর্ভুক্ত। রমজান মাসে মুসলমান পুরো এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ইদ বা আনন্দ উৎসব পালন করে যাকে আমরা ইদুল ফিতর বলে থাকি।তারই দুই মাস দশদিন পর জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে ইদুল আদ্বহা পালন করে।ওইদিন শুধু মুসলমানগণ সলাত-ই আদায় করেন না বরং আল্লাহর দেয়া ওয়াজিব বিধান হিসেবে ওইদিন সবাই নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী গরু জবাই করে।যে কুরবানিতে মুসলমানদের জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ) এর বিজড়িত স্মৃতি। মূলত ওইদিন আল্লাহ তায়া’লার নামে কুরবানি করাই হলো মূল তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কোনো বিধর্মী কি আমাদের এই দুটো ধর্মীয় উৎসবে কোনদিন আসবে? তারা কি গরু জবাই করবে?
হিন্দুরা গরুকে মা বলে সম্বোধন করে। আর গো হত্যাকে জঘন্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে হিন্দুধর্ম।আর বৌদ্ধ ধর্মে তো জীব হত্যাকে মহাপাপ হিসেবে অবিহিত করেছন।আর সেখানে তারা আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এসে গরু জবাই করতে পারবে! ইদের নামাজের বিষয়টা নতুবা বাদই দিলাম। তারা কি কখনো পারবে তাদের ধর্মের মুখে জলাঞ্জলি দিয়ে আমাদের ধর্মীয় কোনো উৎসবে চলে আসতে? না তারা কখনোই পারবে না বা জীবন চলে গেলেও মুসলমানদের কোনো ধর্মীয় উৎসবে তারা আসবে না।কিন্তু আমরা মুসলিম। এক তো সৃষ্টির সেরা জীব দ্বিতীয়ত হলো সবচেয়ে সেরা নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ভাগ্যবান উম্মত। এতকিছুর পরেও আমরা মুসলিমরা নিজেকেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।বিভিন্ন ধর্মমাবলম্বীদের বিভিন্ন উৎসবে চলে যাই। খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো বড়দিন।যা প্রতি বছর ২৫ ই ডিসেম্বর পালন করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই অনুষ্ঠানটা খ্রিস্টানদের হলেও ওই অনুষ্ঠানে খ্রিস্টানদের চেয়েও দ্বিগুণ থাকে মুসলমান।এটা ছাড়াও খ্রিস্টানদের হোলি উইস,মন্ডি থারস ডে,গুড ফ্রাইডে ও স্টার সানডের মতো অনুষ্ঠানে ওদের চেয়ে মুসলমানদের সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ হবে যা খুবই কষ্টদায়ক।
ভিন্ন ধর্মের মধ্যে আমাদের দেশে হিন্দুরা খুবই পরিচিত। বলা হয়ে থাকে হিন্দুদের ১২ মাসে ১৩ পূজা। স্বরস্বতী,মহালয়াসহ তাদের অসংখ্য ধর্মীয় উৎসব আছে তবে এগুলোর মধ্যে দূর্গা পূজা হলো তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব।তারা তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে তাদের দূর্গা পূজা পালন করে থাকে।একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে হিন্দু মুসলিম একসাথে বসবাস করার কারণে হিন্দদের ধর্মীয় উৎসবে মুসলমানরা হরহামেশাই চলে যায়। এদেশে হিন্দু বা ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলো সর্বোচ্চ ১০-১২% কিন্তু হিন্দুদের পূজা গুলো দেখলে মনে হবে বাংলাদেশ টা হিন্দু প্রধান দেশ।যা মুসলিম জাতির জন্য বিশাল লজ্জার বিষয়। মুসলিম মননে প্রশ্ন জাগানো দরকার যে, ভিন্নধর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে যাওয়া আমাদের জন্য জায়েজ হবে কিনা বা এই বিষয়ে আমাদের ধর্ম কি বলে! এটা আমরা অনেকেই জানিনা বা জানার খুব বেশি চেষ্টাও করি না!
অমুসলিমদের ইদ বা উৎসবে অংশগ্রহণ করা হারাম। শুধু হারাম নয় তাদের এগুলোর বিরোধিতা করা ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের ইদের দিন গুলোতে তাদের উৎসবে যাওয়া রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রকাশ্য বিরোধিতা করার নামান্তর। এই বিষয়ে হযরত ওমর ফারুক রা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের ইদ বা উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না।কারণ সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে। (বায়হাক্বী ১৮৮৬১)। হযরত তাবারী (রহ) বলেন, মুসলিমদের জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীদের কোনো উৎসবে যাওয়া একদম অবৈধ কাজ।কারণ তারা গর্হিত ও মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত। যদি কোনো ইমানদার মানুষ তাদের উৎসবে যা এবং তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে তাদের কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে,তাহলে তার জন্য আমার খুবই ভয় লাগছে এই কারণে যে আল্লাহ তায়া’লা তার উপরে গযব নাযিল করবে।
স্বাভাবিকভাবে কেউ যদি কারো দাওয়াতে যায় বা কারো খোঁজ খবর রাখে তাহলে স্বাভাবিকভাবে সে তার সম্পর্ক আছে বলেই তো যায়। আর তার যাওয়ার মাধ্যমে ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।এখন যদি ভিন্ন ধর্মের কোনো অনুষ্ঠানে যায় তাহলে তার বিধর্মীদের প্রতি বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছেন যেটা কুরআন ও হাদিস তথা ইসলাম পরিপন্থী একটি কাজ।এই কাজটি একজন মানুষকে রহমানের বান্দা হওয়ার পথেও বাধা দেয়! অমুসলিমদের বা ভিন্ন ধর্মীদের কোনো উৎসবে তো যাওয়া যাবেই না বরং তাদের উৎসব উপলক্ষে কোনো অভিবাদনও জানানো জায়েজ নেই। তবে যদি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে জায়েজ হবে বলে আলেমগণ একমত হয়েছেন।
বিগত কয়েক বছর যাবত খোঁড়া একটা যুক্তি দাড় করানো হয় যে, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এটি কেবল পূজার সময়ই এবং পূজাকে উপলক্ষ করেই বলা হচ্ছে।কিন্তু মুসলমানদের বাৎসরিক দুটো ইদ বা অন্য কোনো উৎসব নিয়ে এ জাতীয় বাক্য তো বলে না বা কাউকে এমন কোনে বাক্য উচ্চারণ করতে শোনা যায়নি। আর পূজার বিষয়টি সম্পূর্ণই বিশ্বাসনির্ভর।যা তাদের ধর্মের সাথে উৎপ্রোতভাবে জড়িত। যা সংশ্লিষ্ট ধর্মের লোকেরা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস ও নীতির ভিত্তিতে করে থাকে। এ উপলক্ষে তাদের যে উৎসব-আনন্দ সেটি সম্পূর্ণই পূজাকে কেন্দ্র করে।তাদের আনন্দটি কখনোই পূজা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়! আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন তখন তিনি দেখলে মদীনায় দু’টি উৎসব চালু আছে । একটি হলো নওরোয ও অপরটি মেহেরজান নামে পরিচিত ছিলো তখন। সাহাবীগণ ওই দুটি উৎসব পালন করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পালনের অনুমতি দেননি। বরং এর সর্বোত্তম বিকল্প হিসেবে মুসলমানদের জন্য আলাদা দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপহার দিয়েছেন। এ থেকে এ কথাটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যদি মুসলমানদের জন্য অন্যদের উৎসব পালন করার সুযোগ থাকতো তাহলে তখনই আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের ওই উৎসব পালন করার অনুমতি দিয়ে দিতেন। তাদের কখনোই বাঁধা দিতেন না।
আমরা আরেকটু দেখলে বিষয় টা আরো বেশি পরিষ্কার হয়ে যাবে। সেটা হলো আশুরার সাওমের বিষয় টা।ইয়াহুদীদের সাথে যেন সাদৃশ্যপূর্ণ বা মিল না হয়ে যায় সেজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোযার সাথে আগে কিংবা পরে আরো একটি রোযা রাখতে বলেছেন। পূজা হিন্দুদের ধর্মীয় প্রধান উৎসব। তারা এটা নিরাপত্তার সাথে পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের পূজার বিরোধিতা নয় বরং তারা যেন সুন্দরভাবে সবকিছু ঠিকঠাক রেখে তাদের পূজা পালন করতে পারে এই বিষয় টা নিশ্চিত করা ইসলাম ধর্মের শিক্ষা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মূ্র্িত পূজার সাথে মুসলিমদের আক্বিদা বিশ্বাসের বিন্দু পরিমাণ সম্পর্ক নেই। বরং এগুলো মুসলমানদের জন্য ধর্ম বিরোধী কাজ। আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াত ই ছিলো মূ্র্িত পূজা থেকে মানুষকে বাচিয়ে তাওহীদ দিকে আহবান করা। তাওহীদ শিক্ষা দেওয়া।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ছাগলে গম খাওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ৪

‘দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করুন’

সারাদেশে ছাত্রশিবিরের ‘মাস মুভমেন্ট’ কর্মসূচি পালন

আগ্রাসী ট্রাম্পকে ঠেকাতে ইউরোপের সঙ্গে জোট বাঁধছে চীন?

বঙ্গে মানা হবে না ওয়াকফ আইন! বুধবার ইমামদের সঙ্গে বৈঠক মমতার

কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়, তা এ প্রজন্ম আমাদের শিখিয়েছে : মৎস্য উপদেষ্টা

মহেশপুরে বিএসএফ পিটিয়ে মারলো বাংলাদেশী যুবককে

দেশের জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় পরিবর্তন দেখতে চায় , আওয়ামী ষ্টাইলে রাজনীতি নয়- ড. আসাদুজ্জামান রিপন

এবার হলিউডের অ্যাকশন মুভিতে রোনাল্ডো

করিমগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার

জাপানে সমুদ্রগর্ভে ১২ হাজার বছরের প্রাচীন পিরামিডের সন্ধান

স্বাধীন ফিলিস্তিনের প্রতি অটল সমর্থন অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ

গণপদযাত্রায় যেভাবে অংশ নেবেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

সিকৃবিতে কৃষি বিষয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কাল শনিবার

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান- সিলেটে মানববন্ধনে ওয়ান আর্থ ইনিশিয়েটিভ

শৈলকুপায় সংঘর্ষে ২৫ জন আহত বাড়িঘর ভাংচুর

বিবাহ বিচ্ছেদে হ্যাট্রিকের রেকর্ড শ্রাবন্তীর

মার্চ ফর গাজা" হোক মুসলমানদের ঐক্যের বন্ধন : সিলেট ইসলামী আন্দোলন

কাল শনিবার ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ সহ বিভিন্ন দাবীতে মিছিল ও সমাবেশ করবে সিলেট বাসদ

আনোয়ারায় জামায়াত প্রার্থীর স্লুইস গেইট পরিদর্শন