যুগে যুগে জুলুম ও জালিমের পরিণতি
০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
জুলুম একটি মহা পাপ। একটি মারাত্মক কবিরা গোনাহ। যার গন্তব্য হল জাহান্নাম। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের গ-ি ছাড়িয়ে পৃথিবীজুড়ে চলছে আজ জুলুমের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা। চারদিকে প্রকাশ পাচ্ছে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। ব্যক্তি থেকে গোষ্ঠী, গোষ্ঠী থেকে রাষ্টযন্ত্র আজ এই জুলুমে লিপ্ত। জুলুমের উপর দাঁড়িয়েই তাদের ক্ষমতাকে পাকাপুক্ত করছে। যার পরিণতি খুবই মন্দ ও ভয়াবহ। অন্যের উপর অন্যায়-অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালিমরা। যেমনটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। মানুষের বিভিন্ন বিপদ-আপদে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ জুলুম।
যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের উপর নৃশংসতা চালানো, নির্যাতন করা, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ আর জুলুম করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তাআলার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলা মাজলুমের দুআ খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। মানুষের উচিত দুনিয়ার কোন সৃষ্টির প্রতি জুলুম না করা।
দুনিয়াতে খুব কম জালিমই নিজেকে জালিম মনে করে। আবার জালিম যখন মাজলুম এবং দুর্বলের প্রতি অত্যাচার চালায়, তখন সে নিজেকে মনে করে অনেক ক্ষমতাবান। ভাবে তার অর্থবিত্ত, শক্তি ও ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী। মনে করে তার সহযোগী অনেক। কিন্তু সে ভুলে যায়, ওই অসহায় লোকটির পক্ষে কেউ না থাকলেও মহান আল্লাহ তাআলা তার সাথে আছেন। তিনি সবই দেখেন ও হিসাব রাখেন। পৃথিবীতে জালিমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত থাকে। অনেক অসহায় প্রাণ দুই হাত তুলে জালিমের ধ্বংস প্রার্থনা করে। আর মজলুমের বদ দুআ আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না। আজ যে জালিম নিজেকে শক্তিশালী অনুভব করে এবং শক্তির দাপটে দুর্বলের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না, কাল কেয়ামতের দিন সে নিজেকে মারাত্মক দুর্বল ও দরিদ্র অনুভব করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, জালিমদের কোন বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে। (সুরা মুমিন : আয়াত ১৮)।
আল্লাহ জালিমদের ব্যাপারে উদাসীন নন : জুলুম এক অমার্জনীয় অপরাধ। এর শাস্তি অনিবার্য ও ভয়াবহ। জালিমদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা উদাসীন নন। বরং সার্বক্ষণিক তিনি সবকিছু দেখছেন। জালিম যত কৌশলিই হোক না কেন আল্লাহর চোখকে ফাকি দেয়ার সযোগ নেই। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, তুমি কখনো মনে করো না যে, জালিমরা যা করছে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন, যেদিন সব চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। ভীত-বিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে, আতঙ্কে তাদের নিজেদের দিকেও ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (ভয়ানক) উদাস।
সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক করো যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যেদিন জালিমরা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার আহ্বানে সাড়া দেব এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। (তখন তাদের বলা হবে,) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোন পতন নেই ? (সুরা ইবরাহিম , আয়াত : ৪২-৪৪)। এভাবে কুরআনের অনেক আয়াত রয়েছে, যাতে জালিমের কঠিন শাস্তির কথা আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ জালিমকে ছাড় দেন। কিন্তু ছেড়ে দেন না। জালিমকে তার জুলুমের শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। মাজলুমের কাছে মাফ চেয়ে মাফ করানো ছাড়া এ শাস্তি থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। কারণ তা বান্দার হক এর অন্তর্ভুক্ত।
মাজলুমের অভিশাপে জালিমের পতন হয় : মাজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ জালিমের পতনের অন্যতম কারণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দুআ আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দুআ। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুআ। তিন. মাজলুমের দুআ। আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ মেঘমালার উপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (জামে তিরমিযী, হাদিস : ৩৫৯৮)।
শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত থাকা শর্ত। যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি জুলুম করে সে কেবল অন্যেরই ক্ষতি করে না, নিজ জীবনের নিরাপত্তাকেও ঝুঁকিতে ফেলে। আর সমাজের অধিকাংশ লোকেরই যখন চরিত্র হয় জুলুমবাজি অর্থাৎ যারা পারস্পরিক হক আদায়ের কোনো তোয়াক্কা করে না, সেই সমাজ দুর্যোগকবলিত হবেই। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা আমার (নবীর) কথা শোনো, তা হলে বেঁচে থাকতে পারবে। সাবধান! তোমরা জুলুম করো না। সাবধান তোমরা জুলুম করো না। সাবধান তোমরা জুলুম করো না! (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২০৬৯৫)। আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য জুলুম হারাম করেছেন, তেমনি বান্দাদের জন্য জুলুমকে হারাম করেছেন। হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে, হে আমার বান্দারা! আমি জুলুম করাকে নিজের প্রতি হারাম করেছি এবং তাকে তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি। সুতরাং পরস্পর পরস্পরের প্রতি জুলুম করো না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৫৭৭)। মাজলুম বা নিপীড়িতের দুআ কখনো ব্যর্থ হয় না। মাজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের উপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মার্সেল ফ্রিজ কিনে গাড়ি পেলেন ঢাকার আনিসুর রহমান
বিএনপি ক্ষমতায় এলে গণমাধ্যম হবে মুক্ত বিহঙ্গের মতো : খোকন
শহীদদের রক্তের সঙ্গে যাতে বেঈমানি না হয়, সুষ্ঠু নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা থাকবে : নতুন সিইসি
খালেদা জিয়াকে ১২ বছর সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখা হয়েছে : মির্জা ফখরুল
সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা বিশ্বাস ফিরে আনতে হবে -আল-কাউসার পরিষদ বাংলাদেশ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কুশল বিনিময়
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি
শিখ নেতা হত্যা, মোদীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ কানাডার
দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন
আদানির সঙ্গে জড়িত মোদিও: রাহুল গান্ধী
আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ২৫ নভেম্বর ঢাকায় আসছেন
সোহেল-টুকু-হেলালসহ খালাস পেলেন বিএনপির ২২ নেতাকর্মী
ইরানে উদ্ভাবনে নারীদের অবদান ২৪ শতাংশের বেশি
প্রকাশায় ৯৩ শতাংশ নকল করেও পদোন্নতি পান রাবি অধ্যাপক সাহাল উদ্দিন
বোরহানউদ্দিনে নিখোঁজের দুই ঘন্টা পর লেবু বাগানে মিললো শিশুর লাশ
নাবালক ছাত্রের সঙ্গে জবরদস্তি যৌন সঙ্গম, ৩০ বছরের জেল শিক্ষিকার
সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণ
মার্কিন সংসদের নারী শৌচাগার ব্যবহার করতে পারবেন না রূপান্তরকামী এমপি
বাগেরহাটে হত্যা মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
অন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা পালনের প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন জিওসি