ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা
৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৯ এএম
(গত দিনের পর) শ্রমিকের সাথে মালিকের সম্পর্ক আচার-ব্যবস্থার কি রকম হবে, সে সম্পর্কে ইসলামের সুন্দর নীতিমালা রয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে মালিক-শ্রমিক ভাই ভাই! তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততাপূর্ণ। শ্রমিক ছাড়া মালিক যেমন অচল, তেমনি সবাই মালিক হয়ে গেলো তখন শ্রমিক বলতে কেউ থাকবে না। তা ছাড়া এটা মানুষের বিশেষত্ব যে, কোনো মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়! তাই মানুষ বলতেই সবাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ এভাবেই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য কেউ চাইলেও কারও সহযোগিতা ছাড়া জীবন চালাতে পারবে না । কার ও না কারো সাহায্য তাকে নিতেই হবে। এখান থেকেই শ্রম ও শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এ কারনেই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে চলতে বাধ্য! কেননা মানুষ সামাজীক জীব।
শ্রমের মর্যাদা : ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কাজে ও হালাল পথে শ্রম বিনিয়োগ মোটেই লজ্বার ব্যাপার নয়, বরং এ হচ্ছে নবী- রাসুলদের সুন্নত! প্রত্যেক নবী রাসুলই কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমনকি উপার্জনের প্রতি স্বয়ং আল্লাহ উৎসাহ দিয়ে বলেছেন, সালাত শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পর এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো। (সূরা জুমা-১০)। মিকদাদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (রা.) বলেন, এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই যা মানুষ নিজ হাতে উপার্জনের মাধ্যমে ক্রয় করে। নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। (বোখারী-২০২৭)। হযরত ইদ্রিস (আ.) সেলাই কাজ করতেন। জিন্দাপীর খ্যাত স¤্রাট আওরঙ্গজেব বা বাদশাহ আলমগীর নিজ হাতে টুপি সেলাই করে বিক্রয় করে জীবিকা উপার্জন করতেন। হযরত শুআইব (আ.) এর খামারে হযরত মুসা (আ.) ৮-১০ বছর চাকুরী করেছেন। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ও মা খাদিজার কোম্পানীতে চাকুরী করেছেন। শ্রমের অনেক ধরন রয়েছে, যদিও মানুষের প্রয়োজনীয় কোনো কাজই তুচ্ছ নয়। মুচি জুতা সেলাই করে, দর্জি কাপড় সেলাই করে, নাপিত চুল কাটেন, জেলে মাছ ধরেন, ধোপা কাপড় পরিস্কার করেন, ফেরিওয়ালা জিনিসপত্র বিক্রি করেন, তাঁতি কাপড় বোনেন, কুমার পাতিল বানান, এসব কাজ এতই জরুরী যে, কাউকে না কাউকে অবশ্যই কাজগুলো করতে হবে। এখন এসব কাজে যদি কেই এগিয়ে না আসতেন তাহলো মানবজীবন অচল হয়ে পড়ত। এ জন্য শরিয়ত সমর্থিত কোনো কাজই নগণ্য নয় এবং যারা এসব কাজ করেন তারাও হীন বা ঘৃণ্য নন।
শ্রমিকের গুণাবলী : ইসলাম মালিকের উপর অনেক দায়িত্ব যেমন অর্পণ করেছেন তদ্রুপ শ্রমিকের ওপরও আবশ্যক কিছু নিয়মনীতি আরোপ করেছে। যেমন আমানতদারিতা সংশ্লিষ্ট কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা, নিজের কাজ হিসেবে করা ইত্যাদি এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমের সে সুবিখ্যাত ঘটনা যখন হযরত শুআইব (আ.) তাঁর খামারের জন্য লোক খুঁজছিলেন, তখন তাঁর মেয়ে বলে দিলেন নিশ্চয় আপনি এমন লোক কাজে নিয়োগ দিবেন, যে দক্ষ ও বিশ্বস্ত। (সূরা কাছাছ-২৬)।
হযরত ইউসূফ (আ.) কে যখন মিশর স¤্রাট খাদ্য ও কৃষি বিভাগের দায়িত্ব দিতে চাইলেন, তখন তিনি বলে ছিলেন, নিশ্চয় আমি এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত ও আমানতদার। (সূরা ইউসুফ-৫৫)। শ্রমিকের অধিকার : একজন শ্রমিকের সবচেয়ে বড় অধিকার হলো, উপযুক্ত পারিশ্রমিক। ইসলাম দ্রততম সময়ে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। (বায়হাকী, মিশকাত-২৮৭)।
শ্রমিকের মজুরী পরিশোধ না করার শাস্তি : যারা শ্রমিকের মজুরী আদায়ে টালবাহানা করে তাদের ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন- সামর্থবান ব্যক্তি পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করা জুলুম বা অবিচার। (বুখারী) হাশরের দিনে জুলুম অন্ধকার রুপে আর্বিভূত হবে। (মুসলিম) যারা কাজ করিয়ে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করে তাদের ব্যাপারে হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তা’আলা বলেন- কিয়ামতের দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে থাকবো, যারা (১) বিশ্বাস ঘাতকতা করে (২) মানুষকে বিক্রি করে এবং ঐ ব্যক্তি যে কাউকে কাজে নিয়োগ করলো, সে তার কাজ পূরণ করলো, কিন্তু সে তার ন্যায্য মজুরী দিল না (বুখারী) হাদীস শরীফে আরো আছে: যদি কেউ কারো ন্যায্য পাওনা অস্বীকার করে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর বেহেশত হারাম করে দেন। (মুসলিম)। শ্রমিকের বিপদে পাশে থাকা : শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্য অধিকার প্রদানে ইসলাম কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। এ ছাড়া দুর্যোগ ও দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছে। প্রধানত এ দায়িত্ব নিয়োগদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এরপর রাষ্ট্র ও সমাজের ।
সময়মতো বেতনভাতা পরিশোধ করা : বেতন ও পারিশ্রমিক কর্মজীবীর অধিকার। ইসলাম দ্রুততম সময়ে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক দিয়ে দাও। (ইবনে মাজহা-২৪৪৩০) ঠুকনো অজুহাতে বেতন ভাতা ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আরও ভয়ংকর অপরাধ। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) সতর্ক বানী উচ্চারণ করে বলেছেন, যে জাতির দুর্বল লোকের জোর জবরদস্তি ছাড়া তাদের পাওনা আদায় করতে পারে না, সে জাতি কখনও পবিত্র হতে পারে না। (ইবনে মাজহ-২৪২৬)। পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলাম শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা যথাযথ প্রদান করেছে। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন, আমীন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের নিরাপত্তা জোরদার
‘সাইবার মানডে’ উপলক্ষে ওয়েব হোস্টিংয়ে লিমডা হোস্টে চলছে ৬০% পর্যন্ত ছাড়!
ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী
ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ